চীনের উহান শহরেই প্রথম করোনাভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে। সেখান থেকে করোনাভাইরাস বিশ্বের ২১২টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্বব্যাপী এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত ৩৭ লাখ ৪৩ হাজার ৬৫৪ জন হয়েছেন। অপরদিকে মারা গেছেন ২ লাখ ৫৮ হাজার ৮৫০ জন।
লকডাউন, কারফিউ আর সামাজিক দূরত্ব তৈরির আগে থডাসাপনে কিটা মানুষের ঘরে ঘরে যেতেন। বিশেষকরে থাইল্যান্ডের দরিদ্র পরিবারগুলোতে। তাদের শিশুদের শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদি বিষয়ে পরামর্শ দিতেন এবং চাকরির নামে মানব পাচার থেকে সাবধান করতেন। কিন্তু করোনায় পুরো দেশ লকডাউনে চলে যাওয়ায় তা আর সম্ভব হচ্ছে না। শিশু পাচার রোধে কাজ করা সংগঠন ফ্রিডম স্টোরির সদস্য কিটা।কিটা বলেন, ‘দরিদ্র পরিবারগুলোর শিশুরা, বিশেষ করে মেয়ে শিশুরা পাচারের ভয়াবহ ঝুঁকিতে রয়েছে। আমি মনে করি তাদের যদি সময় দেয়া যায়, শিক্ষা, দক্ষতা তৈরি ও অর্থনৈতিক বিষয়ে সহযোগিতা করা যায় এবং ভালো পরামর্শ দেয়া যায় তাহলে পাচার থামানো সম্ভব।’গত ১৮ মার্চ থেকে থাইল্যান্ড লকডাউনে। ব্যবসা-বাণিজ্য কলকারখানা সব বন্ধ হয়ে গেছে। কয়েক লাখ চাকরি চলে যাবে। অর্থনীতি ৫.৩ শতাংশ সংকোচিত হবে বলে পূর্বাভাষ দিচ্ছে। ফলে খাবার যোগাতে মানুষ এখন হণ্যে হয়ে ঘুরবে।
অর্থনৈতিক পূনর্বাসনে কাজ করা সংগঠন ১০ থাউজেন্ড উইন্ডোজ এর অ্যামি গোসেলিন বলেন, ‘এ মহামারীর অর্থনৈতিক প্রভাব দরিদ্রদের ওপর ব্যাপকভাবে পড়বে। মানুষ বেপরোয়া হয়ে চাকরি খুঁজবে। আর এ সুযোগকে কাজে লাগাবে মানব পাচারকারীরা। যারা ওঁৎ পেতে আছে। আমাদেরকে এটি থামাতে হবে।’
অর্থনৈতিক এ সংকটে এশিয়ার সব দেশই এখন মানব পাচারের ঝুঁকিতে বলে জানান বিশ্লেষকরা। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের হিসাবে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলো টায়ার-২ বা টায়ার-৩ পর্যবেক্ষণ তালিকায়। যা অত্যন্ত ভয়াবহ।
জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ দপ্তরের (ইউএনওডিসি) ২০১৮ সালের মানব পাচারবিষয়ক বৈশ্বিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পশ্চিম ও দক্ষিণ ইউরোপের বিভিন্ন স্থানে দক্ষিণ এশিয়ার অন্তত ৫ শতাংশ নাগরিককে পাওয়া গেছে। দক্ষিণ এশিয়া থেকে মানব পাচারের শিকার হওয়া এসব লোক মূলত ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের নাগরিক। এ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার লোকজন বিশ্বের ৪০টি দেশে মানব পাচারের শিকার হয়। করোনা মহামারীর কারণে থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনামসহ এশিয়ার প্রায় সব দেশই ভয়াবহ চাকরি সংকটে পড়বে। আইএলও’র হিসাবে করোনা ছড়িয়ে পড়ার পর প্রথম দিকেই অর্থাৎ জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাস নাগাদ সারা বিশ্বে অসংগঠিত খাতের শ্রমিকদের আয় কমেছে গড়ে ৬০ শতাংশ। তার মধ্যে আফ্রিকা ও আমেরিকা মহাদেশে ৮০ শতাংশ, ইউরোপ ও সেন্ট্রাল এশিয়ায় ৭০ শতাংশ, এবং এশিয়ায় কমেছে ২১ দশমিক ৬ শতাংশ।
ফ্রিডম স্টোরির নির্বাহী পরিচালক ভিরাট তিয়ানচিয়ানান বলেন, ‘এ পরিস্থিতিতে দরিদ্র পরিবারগুলোর শিশু বা কিশোর-কিশোরীরা চাকরি করার চাপে পড়বে। কারণ খেয়ে বাঁচতে হবে। কিন্তু করোনার কারণে চাকরির যেহেতু সংকট তাই পাচারকারীরা সেই সুযোগ নেবে। এছাড়া করোনার পরপরই দ্রুত চাঙ্গা হবে বাণিজ্যিক যৌন ব্যবসা। আর এতে পরিস্থিতির কারণে বুঝে না বুঝে আগ্রহী হবে তরুণীরা। এসব পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারগুলোকে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বিশেষকরে চাকরির বাজার কি করে স্থিতিশীল করা যায় সে চিন্তা করতে হবে।’ ইউএনওডিসি জানায়, বহু কারণেই মানব পাচার হয়ে থাকে। পাচারের মাধ্যমে একজন মানুষকে আধুনিক দাসে পরিণত করা হয়। বিশেষত নারী ও শিশুদের যৌন ব্যবসায় ব্যবহারের জন্য পাচার করা হয়, গৃহকাজেও ব্যবহার করা হয়। সেখানেও নারীরা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। এছাড়া বাধ্যশ্রম, ঋণগ্রস্ত করে শ্রম আদায়, বাধ্য শিশু শ্রম, অবৈধ নিয়োগ এবং শিশুদের যুদ্ধে ব্যবহার হয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের হিসাবে বিশ্বে প্রতিবছর এক দেশ থেকে আরেক দেশে পাচার হয় ৮ লাখ মানুষ। জাতিসংঘের হিসাবে অবৈধ মানবপাচারের বাজার ৩২ বিলিয়ন ডলারের।
সূত্র: আল জাজিরা।
0 Comments
Thank you for your message, I see all your messages, it is not possible to reply many times due to busyness, I hope I will reply to everyone in time, thank you for being with me. Thanks you watching my content. Please like, Follow, Subscribe.