যারা তসলিমা বিদ্বেষী, তারা সব ঘৃণা- মিছিলে যোগ দিয়েছে। হত্যার হুমকি , ধর্ষণের হুমকি ? আসলে আমার তো তিন কূলে কেউ নেই


তসলিমা নাসরিনের ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

নিচের এই লেখাটি খুব জরুরি একটি লেখা। জরুরি এই জন্য যে ক্রিকেটার ইস্যুতে প্রতিটি পত্র পত্রিকা এক পক্ষ নিয়ে লিখেছে, আমাকে গালিগালাজ করে। কিন্তু একটি কাগজও আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থন করার সুযোগ দেয়নি। কেউই নিচের এই লেখাটি ছাপায়নি। অথচ এরাই কিন্তু প্রায়ই বাক স্বাধীনতা শব্দটি আওড়ে মুখে ফেনা তুলে ফেলে। শুধু উপমহাদেশের মিডিয়া নয়, সেদিন দেখলাম যুক্তরাজ্যের গার্ডিয়ান পত্রিকাও এ নিয়ে বড় একটি আর্টিক্যাল ছাপিয়েছে, লিখেছে আমি নাকি 'রেসিয়াল অ্যাবিউজ' করেছি। ইসলামও কোনও রেস নয় বা জাতিগোষ্ঠী নয়, মুসলমানও কোনও জাতিগোষ্ঠী নয়, তাহলে রেসিয়াল অ্যাবিউজ কী করে হলো সেটি? উপমহাদেশে যাদের শিকড়, তারা তো একই জাতিগোষ্ঠী।
আর সবার মতো আমি যদি ইতিহাসের সামান্যও অংশ হয়ে থাকি, তবে বাকস্বাধীনতার জন্য এটি একটি ঐতিহাসিক লেখাও বটে।
------------------------------------
''যতক্ষণ তুমি যদু-মধুর সমালোচনা করবে, যতক্ষণ তুমি দুর্বল, অসহায়, তিন কূলে কেউ নেই-এমন কারোর সমালোচনা করবে, ততক্ষণ তোমার বাকস্বাধীনতাকে আমরা সাধুবাদ দেব। কিন্তু তুমি যেই না বিখ্যাত কারোর সমালোচনা করবে, তখন তোমার বাকস্বাধীনতা আমরা মানবো না। যখন তুমি প্রচণ্ড জনপ্রিয় কারোর সমালোচনা করবে, তোমাকে আমরা ঘৃণা করবো, তোমাকে আমরা ছিঁড়ে খেয়ে ফেলবো। ব্যাপারটা এমন। এমনই আমি গত কয়েকদিন উপলব্ধি করেছি।
ফ্রান্সের শার্লি হেব্দো ম্যাগাজিন বিখ্যাত এবং জনপ্রিয় লোকদের সমালোচনা করে। হাস্যরসে ভরপুর সেসব সমালোচনা, সেসব নিন্দে। আমরা তো সেই কবেই বাকস্বাধীনতা নিয়ে গভীর আলোচনা করতে করতে এই উপসংহারে এসেছি, যে কোনও বিষয় নিয়ে, যে কোনও মানুষ নিয়ে সমালোচনা করার অধিকার প্রত্যেকের আছে। তুমি যদি বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাস করো, তাহলে তুমি শুধু নিজের এবং নিজের বন্ধুদের নয়, তোমার শত্রুরও বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাস করবে। যদি তা না করো, তার একটিই অর্থ, তুমি মানুষটা আসলে বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাস করো না।

শার্লি হেব্দো ম্যাগাজিনটি কোনও রাজনীতিক্, কোনও পণ্ডিত, এমনকী কোনও ধর্মগুরুকেও রেহাই দেয়না । এই ম্যাগাজিনের প্রায় সবাইকে খুন করেছে সন্ত্রাসীরা। কিন্তু তারপরও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের সমর্থন পেয়ে ম্যাগাজিনটি আবার মেরুদণ্ড শক্ত করে দাঁড়িয়েছে। শার্লি হেব্দো ম্যাগাজিনটির ভিন্ন মত প্রকাশের অধিকারকে যারা শতভাগ সমর্থন করে, তারাও কিন্তু সেদিন আমার একটি টুইটের জন্য, যেহেতু টুইটে তাদের প্রিয় এক খেলোয়াড়ের সমালোচনা রয়েছে, ছিঁড়ে খেয়ে ফেলতে আমাকে বাকি রাখেনি। তাহলে প্রিয় কারও সমালোচনা অত বড় বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাসীরাও সহ্য করে না। তাহলে এভাবে বললেই হয়, যতক্ষণ শার্লি হেব্দো তোমার প্রিয় কারোর সমালোচনা করছে না, ততক্ষণ শার্লি হেব্দো ভালো।
একটি টুইটের জন্য আমাকে আক্ষরিক অর্থেই ছিঁড়ে খেয়েছে হাজার লোক । একটিও পত্রিকা নেই, নিউজ পোর্টাল নেই, টিভি নেই, মিডিয়ার এমন কোনও শাখা প্রশাখা নেই যে বিরত থেকেছে আমাকে হেনস্থা করা থেকে। আগুনের মতো জ্বলে উঠেছে পুরো উপমহাদেশের লোক, সেই আগুনে ঘি-এর কাজ করেছে ঘৃণা। ক্রিকেট যারা দেখে তারা তো জ্বলেছে বটেই, যারা নাও দেখে, তারাও। আমার ‘স্পর্ধা’ দেখে তারা ক্রোধে ফুঁসেছে। আমি কেন মন্দ কথা বললাম একজন ক্রিকেটারকে, এটি অন্যায়। কিন্তু তোমরা লক্ষ লোক যে আমাকে মন্দ কথা বলছো, আমি যা নই, তা বলে গালি দিচ্ছ, তার বেলা? মুষলধারে বর্ষিত হয়েছে আমাকে হত্যার হুমকি , ধর্ষণের হুমকি – তার বেলা? আসলে আমি তো যদু- মধু, আমি তো দুর্বল, অসহায়, আমার তো দেশ নেই, দল নেই, আমার তো তিন কূলে কেউ নেই, তাই আমাকে ঘৃণা করতে এবং আক্রমণ করতে কাউকে দু’বার ভাবতে হয় না। হেনস্থা-বিরোধী সেনারা আমাকে অবলীলায় হেনস্থা করেছে, আমার দোষ কেন আমি মইন আলীকে হেনস্থা করেছি। এর মানে মইন আলীকে হেনস্থা করা ঠিক নয়, আমাকে হেনস্থা করা ঠিক। অপমান অসম্মান অত্যাচার জীবনে কম দেখিনি। যত দিন বাঁচি ততদিন দেখতে হবে জানি। ঝাঁকে ঝাঁকে হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রিস্টান, আস্তিক নাস্তিক, বামপন্থী, ডানপন্থী, উগ্রপন্থী, নরমপন্থী, পঙ্গপালের মতো আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে, লক্ষ শকুন যেন জীবন্ত আমাকে খুবলে খাচ্ছে। পকেটমার সন্দেহে গরিব নিরীহ ছেলেকে উন্মত্ত জনতা যেমন পিটিয়ে মেরে ফেলে, সেরকম মনে হচ্ছিল আমার, যেন আমি সেই গরিব নিরীহ ছেলেটি । দোষটা কী ছিল আমার? একটি কৌতুক। আযান শোনামাত্র যে মানুষ খেলার মাঠেই নিজের জায়নামাজ পেতে নামাজ পড়েন, খেলা চলতে থাকলে আম্পায়ারকে বলে চলেও যান নামাজ পড়তে, বিজয়ের উৎসবে শ্যাম্পেন খুললে দ্রুত সরে যান দূরে, বিয়ার কোম্পানীর লোগো থাকলে সেই জার্সি পরবেন না বলে জানিয়ে দেন, ১৪০০ বছর আগের আদেশ অনুযায়ী গোঁফ ট্রিম করতে থাকেন আর দাড়ি বড় করতে থাকেন, কোনও মেয়ে-সাংবাদিককে সাক্ষাৎকার দিলে মুখের দিকে একটিবারও না তাকিয়ে সাক্ষাৎকার দেন, স্ত্রীকে হিজাব পরান, জিম্বাবুয়ের মুফতি মেঙ্ককে নিজের বন্ধু এবং ভাই বলে মানেন, যে মুফতি মেঙ্ক ব্যাভিচাদীদের পাথর পাথর ছুঁড়ে হত্যা করার শাস্তি অনুমোদন করেন,যে মুফতি সমকামীদের কুকুর এবং শূকরের চেয়েও নোংরা বলেন, যার সংগে ‘লাইট আপন লাইট’ অনুষ্ঠানে মইন আলি মঞ্চে বসেন, যে ‘লাইট আপন লাইট’ অনুষ্ঠানে চুরি করলে হাত কেটে নেওয়া, ব্লাসফেমির শাস্তি মৃত্যুদন্ড বলে জিহাদের পক্ষের লোকেরা প্রচার করে, যে মইন আলী বলেছেন তিনি ক্রিকেট ত্যাগ করবেন কিন্তু ধর্মের একটি অংশও ত্যাগ করবেন না, কত মানুষ যে নির্যাতিত হচ্ছে পৃথিবীতে, কত ভূমি থেকে কত মানুষ বিতাড়িত তাদের কারোর কথা না ভেবে মাঠে খেলতে যাওয়ার সময় হাতের কব্জিতে গাজাকে রক্ষা করো ফিলিস্তিনকে মুক্ত করো এই স্লোগান সম্বলিত ব্যান্ড পরতে চান, -- তাঁকে নিয়ে যদি কৌতুক করিই, তাহলে কি ভেরিফাইড টুইটারের একাউন্ট উড়ে যাবে? হ্যাঁ এমনই হুমকি এসেছে। ইংলিশ ক্রিকেটারদের মধ্যে একজন যেহেতু জনতার উদ্দেশে বলে গেছেন, সবাই যেন আমার একাউন্টকে রিপোর্ট করে, যেন আমার টুইটার একাউন্টই চলে যায়। ইংলিশ ক্রিকেটারের আদেশ মহাসমারোহে পালন করেছে উপমহাদেশ । লক্ষ লোকের রিপোর্টের কারণে টুইটার কতৃপক্ষ আমাকে নিষিদ্ধ করেছিল, পরে হুমকি দিয়ে ছেড়েছে, ফের যদি টুইটারের নিয়ম অমান্য করি তো আমার একাউন্ট চিরকালের মতো চলে যাবে। অথচ এই টুইটই আমার ওপর হামলা হওয়ার আগে চার হাজারের বেশি লাইক হয়েছিল, মানুষ পছন্দ করেছিল ওটি, ওই হিউমারটি।

আমি ক’দিনে উপলব্ধি করেছি গুজব খুব শক্তিশালী, আর ঘৃণা খুবই সংক্রামক। ঘৃণা মারণভাইরাসের চেয়েও সংক্রামক। গুজব রটে গেল আমি ক্রিকেটার মইন আলীকে জঙ্গি বলেছি। সম্পূর্ণ মিথ্যে একটি বাক্য। আমি ক্রিকেটার মইন আলীকে জঙ্গি বলিনি। আমি সেই মইন আলীর কথা বলেছি, যে মইন আলী ক্রিকেট খেলেন না। আমার টুইট ছিল এরকম, যদি মইন আলী ক্রিকেট না খেলতেন, তাহলে কী হতে পারতো। কী হতো বা কী হতোই নয়, কী হতে পারতো। এবং নাও পারতো। মইন আলী যদি ক্রিকেট না খেলতেন, তবে তিনি নিতান্তই একজন সাধারণ মানুষ হতেন, যে মানুষ প্রচণ্ড ধর্মচর্চা করেন। যে প্রচন্ড ধার্মিক লোকটি শরিয়া আইনে বিশ্বাস করা লোকদের সংগে এক মঞ্চে বসেন, তাদের ভাই বন্ধু সম্বোধন করে টুইট করেন। মইন আলী ক্রিকেট না খেললে উপমহাদেশের ক’জন তাকে চিনতো? তিনি সিরিয়ায় গেলেই কী, না গেলেই কী! একটি কথা বলা আবশ্যক, সিরিয়ায় গিয়ে আইসিসে যোগ দেওয়া কেউ কিন্তু চোর গুণ্ডা , ডাকাত দস্যু ছিল না, সকলেই ছিল প্রচণ্ড ধার্মিক। আমি বলছি না প্রচণ্ড ধার্মিক যারা , তারা সবাই সিরিয়ায় গেছে। প্রচন্ড ধার্মিকদের মধ্যে কেউ কেউ গেছে, সবাই যায় নি। গুলশানের হোলি আর্টিজান ক্যাফেতে যে ছেলেরা সন্ত্রাস করেছে, তারা কেউ খারাপ ছেলে ছিল না, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া, রোজার মাসে সবগুলো রোজা করা, পড়ালেখায় ভালো পরহেজগার হীরের টুকরো ছেলে ছিল ওরা। বোস্টন ম্যারাথনে প্রেসার কুকার বোমা নিয়ে গিয়েছিল যে দু’জন ভাই, ওরাও কিন্তু খুব প্রতিভাবান ছেলে ছিল, ছোটটি তো ইস্কুলে বাস্কেটবল খেলে নাম করেছিল, কিন্তু জিহাদি দ্বারা এমনই হঠাৎ মগজধোলাই হয়ে গেল ওদের, যে, ওরা বোমা হাতে নিয়েছিল। বাংলাদেশের মাদ্রাসার অতি ধার্মিক ছাত্র শিক্ষকেরা কী করছে, তা তো আমরা নিজের চোখেই দেখছি।
প্রশ্ন করা হয়েছে, আমি টুইট ডিলিট করেছি কেন। করেছি কারণ টুইটার কতৃপক্ষ আমাকে সেই রকমই নির্দেশ দিয়েছে। কটাক্ষ করা হয়েছে, বিপদ দেখে আমি পিঠ বাঁচানোর জন্য লিখলাম টুইটটি সারকাজম ছিল। আমি পিঠ বাঁচানোর জন্য কিছু কি করি? করেছি কখনও? যদি আপোস করতে জানতামই তাহলে তো দেশেই বাস করতে পারতাম, তাহলে তো পশ্চিমবঙ্গেই বাস করতে পারতাম, সর্বত্র মার খেতাম না, কোথাও থেকে বিতাড়িত হতাম না, দুঃসময়ে আমার পাশে কেউ না কেউ থাকতো। ওটিই তো শিখিনি, ওই আপস করাটি।
আমি নাকি মুসলিম বিদ্বেষী তাই নাকি ক্রিকেটার মইন আলীকে নিয়ে ওই টুইট করেছি। আরও কত মুসলিম খেলোয়াড় আছে, কই তাদের নিয়ে তো বলিনি কিছু! মুসলিম বিদ্বেষী হলে দুনিয়ার তাবৎ মুসলিমকে আমি গালি দিতাম, কই তা তো দিই না। মুসলিম-বিদ্বেষী হলে ধর্মের মধ্যে সব মুসলিমকে ডুবে থাকতে বলতাম। মুসলিমদের ভাল চাই বলে মুসলিম সমাজকে ভায়োলেন্স মুক্ত , বৈষম্য মুক্ত করতে চাই। মুসলিমদের ভালো চাই বলে মুসলিম সমাজে নারী-পুরুষের সমানাধিকার চাই, মানবাধিকার চাই, সমতা চাই, দারিদ্রমুক্তি চাই, বিজ্ঞান মনস্কতা চাই, মৌলবাদ চাই না, জিহাদ চাই না। সুস্থ সুন্দর শিক্ষিত সমাজ চাই।

যারা মুসলিম বিদ্বেষী, তারা মুসলিম সমাজকে আলোকিত করতে চায় না, তারা চায় সমাজ পেছনে অন্ধকারে ফিরে যেতে থাক, পিছিয়ে যেতে থাক, ১৪০০ বছর পেছনে চলে যাক মুসলিমরা । আমি তা চাই না বলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে , নির্বাসিত জীবনেও নিরবধি লিখে যাচ্ছি । মুসলিম মৌলবাদিরা এতকাল বলতো, হিন্দুরা আমাকে সমর্থন করে, সে কারণে রাগও ছিল তাদের। কিন্তু একটি টুইট দেখিয়ে দিল, হিন্দুরা আমাকে সমর্থন করে না। মুসলিম মৌলবাদিদের প্রচণ্ড খুশি লেগেছে দেখে। ‘লজ্জা’ লিখেছিলাম উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য, না, আমার লজ্জা সেই সম্প্রীতি আনেনি, হিন্দু মুসলিমকে এক কাতারে দাঁড় করাতে পারেনি। কিন্তু একটি টুইট পেরেছে। হিন্দু মুসলমান এক কাতারে দাঁড়িয়ে এক উদ্ভট আজব জীবকে ভৎসর্ণা করেছে দিনভর রাতভর, সেই জীবটি আমি। ।হিন্দু মুসলমানকে একত্র করার জন্য টুইটটি ভালো কাজে দিয়েছে, এটি স্বীকার করতেই হয়।
সংগঠিত মৌলবাদি এবং সাধারণ খুচরো মানুষও আমাকে উদ্দেশ্য করে কুৎসিত কথা বলে যাচ্ছে। কেউ জানলো না আমার স্ট্রাগল, আমার দীর্ঘ বছরের সংগ্রাম। মানবতা, মানবাধিকার, নারীর অধিকার, বাক স্বাধীনতা, সমতার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিরবধি আমার লেখালেখি। সবাই মনে করতে লাগলো আমি সারাজীবন ধরে ওই এক লাইনের একটা টুইটই লিখেছি, আমার আর কোনও কন্ট্রিবিউশান নেই, তাই আমাকে শায়েস্তা করা উচিত। মৌলবাদিদের সপ্তাহ ব্যাপী উৎসব চলছে । কারণ বড় বড় ক্রিকেটার আমাকে গালি দিচ্ছেন, নামী দামী লোক গালি দিচ্ছেন, তাদের আনন্দ আর ধরছে না।
ভারতের অনেকে ঘটনাটিকে শিক্ষণীয় বলে প্রচার করছে। ইংলিশ ক্রিকেটারদের কাছ থেকে শেখো, টিমের পক্ষে সবাই দাঁড়িয়েছে, ভারতীয় ক্রিকেট টিমও যেন পরস্পরের বিপদে এভাবে দাঁড়ায়। ভারতীয় এবং বাংলাদেশিদেরও কি কিছু কি শেখার নেই ওদের কাছে? ওরা যেমন নিজেদের নাগরিক বা দেশবাসিদের জন্য দাঁড়ালো, তেমন দাঁড়াতে শেখো। এটিও তো শিক্ষনীয়।
যারা তসলিমা বিদ্বেষী, তারা সব ঘৃণা- মিছিলে যোগ দিয়েছে। যারা জিহাদি, তাদের রাগ আমি কেন ইসলাম সম্পর্কে লিখি, যারা বাম তাদের অভিযোগ আমি ডান, ডানের অভিযোগ, আমি মানুষটা বাম না হয়ে যাই না। যারা হিন্দুত্ববাদী, তারা যোগ দিয়েছে, কারণ হিন্দু ধর্মের সমালোচনা আমি করি, গোমাংসের জন্য তাদের মুসলিম হত্যারও নিন্দে করি, যারা নারীবিদ্বেষী তারা আমাকে ঘৃণা করে আমি নারীবাদী বলে। বিদ্বেষী, বিরোধীতে চারদিক কিলবিল করছে, আমার দাঁড়াবার জায়গা নেই। একটা কথা সবাই বুঝিয়ে দিয়েছে, বাক স্বাধীনতা অনাথদের জন্য নয়। আমি অনাথ,আমার কোনও দেশ নেই, রাজ্য নেই, দল নেই, সংগঠন নেই, আত্মীয় নেই, বন্ধু নেই। চারদিকে সকলে আমার শত্রু, আমার মৃত্যু চায়। কিন্তু তারপরও মেরুদণ্ড আছে বলে আমি দাঁড়িয়ে থাকতে পারি, মাথা যতদিন ধড়ে আছে, মাথাটা উঁচু করেই দাঁড়াবো। অনড় দাঁড়াবো। আমাকে আর কী শাস্তি দেবে কে? নির্বাসন, ঘৃণা, উপেক্ষা, অবজ্ঞা, অসম্মান, অবহেলা, নিষেধাজ্ঞা কী না পেয়েছি এক জীবনে?

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, নারীর অধিকার, মানবাধিকার ইত্যাদি বিষয়ে আমার কোনও লেখা কি সর্বত্র ছড়িয়েছে এই মইন আলী টুইটের মতো? নিশ্চয়ই নয়। অনেক আমাকে দোষ দিয়ে বলে আমি বিতর্কিত, আমি বিতর্কের সৃষ্টি করেছি। না, আমি কোনও বিতর্ক সৃষ্টি করিনি। আমি একটি টুইট করেছি, আমি আমার মত প্রকাশ করেছি, কিন্তু মানুষ বিতর্ক শুরু করেছে। তবুও যারা বিতর্ক করছে, তাদের দোষ না দিয়ে বিতর্কের জন্য আমাকে দোষ দেওয়া হয়েছে, চিরকাল হয়েছে, আজও হচ্ছে। তোকে আমরা মারবো, তারপরও তোকেই দোষ দেব, কেন মার খাওয়ায় উস্কানি দিলি, কেন বললি এমন কথা, যে কথা শুনলে মারতে ইচ্ছে করে। এখন কথা হলো, মার দেবে কেন, তুমিও আমার মতো বলো, যে কথা আমি বলেছি সে কথা খণ্ডন করে বলো। কিন্তু তা শুনবে কেন? ডেথ থ্রেট দিয়েই চলেছে। বাকস্বাধীনতা সব ওদের জন্য, ডেথ থ্রেট দেওয়ার অধিকারও ওদে্র । ওরা তো অনাথ নয়। ওদের দেশ আছে, দল আছে।''

 

Post a Comment

0 Comments

Update Posts

স্মার্ট নাগরিক গঠনে গ্রন্থাগারের ভুমিকা রচনা ১০০০ শব্দ
তালিবানি মুখোশ খুলে ঝাঁঝরা হয়েছিলেন সুস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায় লাভ জেহাদীর, মাধ্যমে ধর্মান্তরিত হয়ে নির্যাতিত হয়েছে ধর্ষিত হয়েছে মারা গেছে এরকম দশটি কাহিনী
Disclaimer
১০টি বাংলাদেশের সেরা ক্যান্সার হাসপাতাল  10 best cancer hospitals in Ban...
১০ বছরে মাধ্যমিক, ১৬-তে ইঞ্জিনিয়ার, ক্যাটও পাশ করে ফেলল এই কিশোরী!
Top 14 Best Paying CPC/PPC Ad Networks
100% Proof - How to Get Back Suspended YouTube Channel Bangla - 100% Solution
Keyboard shortcuts for Windows
ইবনে সিনা হাসপাতালের ডাক্তার লিস্ট | Ibn Sina Hospital Dhanmondi Doctor ...
Goutom buddho biography গৌতম বুদ্ধের জীবনী গৌতম বুদ্ধের জীবনের বিস্ময়কর অজানা তথ্য  ইতিহাস জেনে নিন