করোনা ভাইরাস আমাদের থেকে কেড়ে নিয়েছে অনেক কিছু আবার শিখিয়েছেও কম নয়।এস ডি জি উন্নয়নে নাগরিক প্লাটফর্ম, বাংলাদেশ , ২০১৬সালে ব্যক্তি পর্যায়ে এটা গঠিত হয় – লক্ষ্য S.D.G উন্নয়নে বাংলাদেশ অগ্রগতি পর্যালোচনা করা।বর্তমানে ১১৯ টির মত উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এ প্লাটফর্মের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে। S.D.G উন্নয়নে নাগরিক প্লাটফর্ম বাংলাদেশ ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ একটি ভার্সুয়াল সভার আয়োজন করেন সেখানে একবাক্যে সবাই স্বীকার করেন যে করোনার কারণে এক বছরের অধিক কাল যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে তাতে শিক্ষার যে ক্ষতি হবে তাতে সরকারের S.D.G উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যহত হবে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য সরকারকে বিকল্পভাবে এ ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে এ কথা বলতে আমার বিবেক সায় দেয় না শিক্ষক সমাজ সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক অনলাইন ক্লাস নিচ্ছেন, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা আওতায় নিয়ে আসার জন্য টেলিফোনিক যোগাযোগ করে চলছেন।অভিভাকদের সাথে যোগাযোগ করে চলছে। তারপরে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের কথা বলা হচ্ছে কেন? আমরা বলতে চাই করোনার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরাসরি পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের যে শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিকরনের সমস্যা তৈরি হয়েছে তা অপূরনীয়।
সরাসরি পাঠদান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সাথে যুক্ত রাখার জন্য যে অনলাইন ক্লাস এবং সংসদ টেলিভিশন এর মাধ্যমে যে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে তাতে শিক্ষার বিষয় সামান্য অগ্রগতি হলে শারীরিক ও মানসিক বিকাশ অব্যাহত রাখা সম্ভব হয়নি মোটেই। প্রত্যক্ষ পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ থাকায় শিক্ষা সংশ্লিষ্ট প্রত্যেক অংশিজন যেমন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষা প্রশাসনের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, কর্মচারী কর্মকর্তা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজমেন্ট কমিটি, শিক্ষা সামগ্রী ক্রয় বিক্রয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আনা-নেওয়া কাজে যুক্ত পরিবহন শ্রমিক, শিক্ষার্থীদের টিফিন বিক্রির সাথে যুক্ত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সবাই শারীরিক মানসিক , অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মূখীন হয়েছে। সব থেকে বেশি ক্ষতির সম্মূখীন হয়েছে শিক্ষার্থীবৃন্দ।তবে সে ক্ষেত্রেও স্তরভেদে ক্ষতি পরিমাণ ও ধরনগত পার্থক্য রয়েছে। প্রাক প্রথমিক ,প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ক্ষতির ধরনও ভিন্ন ভিন্ন। এ সকল বিষয় বিবেচনায় না নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ক্ষতি পরিমাণ নিরুপন করা হবে অন্তসার শূণ্য। প্রথমে আমরা প্রাক প্রথমিক স্থরের শিক্ষার্থী কথা চিন্তা করি তবে দেখা যাবে এদেরকে কিন্তু অনলাইন, অফলাইন এবং সংসদ টেলিভিশন এর পাঠদানের আওতায় নিয়ে আসা হয়নি।তা করাও সম্ভবও নয়।প্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বয়স ৪ বছর থেকে ৬ বছরের মধ্যে। এ বয়সের শিক্ষার্থীর স্কুলে গিয়ে যতটুকু না প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করে, তার চেয়ে তারা বেশি শিক্ষা গ্রহণ করে পরিবেশ থেকে। সে স্কুলে গিয়ে বন্ধুদের সাথে মিশবে, বন্ধুদের দেখা দেখি লিখতে শিখবে, পড়তে শিখবে।পরিবেশ থেকে প্রকৃতির নিয়মে শিক্ষবে অনেক কিছু।
সে মায়ের কাছে থেকে শেখা শুরু করেছে আনুষ্ঠানিক বিদ্যালয়ে এসে শিক্ষার পরিবেশ তার পাল্টে যাবে।আস্তে আস্তে তার মধ্যে নতুনকে গ্রহণ করার,মানিয়ে নেওয়া শুরু করবে।এই শিক্ষা তার বাসায় বসে বাবা মায়ের কাছ থেকে হবেনা।সামাজিকরন বলতে যেটা বুঝায় তার প্রথম পাঠ সে এখান থেকে গ্রহণ করবে। বন্ধু তৈরি হবে। স্কুলের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠবে।বন্ধুদের সাথে খেলাধূলায় অংশ গ্রহণ করবে।যা তার শারীরিক ঘঠনে সহায়ক হবে। বন্ধুদের সাথে মিশে তার মানসিক বিকাশ ঘটবে।এ পরিবর্তন আমরা অভিভাবকরাও অনেক সময় বুঝতে পারি না।এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কিছুটা অনুধাবন করেতে পারছি।শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এ প্রাক প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থী সম্পূর্ণরূপে গৃহবন্ধী অবস্তায় আছে।তাদের মধ্যে সেই স্বাভাবিক বিকাশ হচ্ছেনা।তারা শিক্ষা কী? শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কী? শিক্ষক কী? সহপাঠী কি? বন্ধু কী? এগুলো তারা বুঝেনা।শিশু হারিয়ে ফেলছে তারস্বাভাবিক বিকাশ। এ বয়সে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। এ সময়ে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা চেয়ে বেশি প্রয়োজন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসার আগ্রহ সৃষ্টি করা। সেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের কাছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই হয়ে পরেছে অচেনা বস্তু। এ যে শিক্ষার্থীদের স্কুলের প্রতি অনাগ্রহ, শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ব্যহত হওয়ার ক্ষতি কী টাকার অংকে পরমাপ করা যাবে? এ ক্ষতি কী পুষিয়ে নেওয়া যাবে। প্রাথমিক বিদ্যালয় আমাদের দেশে অনেক ধরনের রয়েছে। আমাদের কাছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো বেশি পরিচিত।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়াও আরো কয়েক ধরনের বিদ্যালয় আছে যা প্রাথমিক শিক্ষা প্রমোট করছেন। আর সেগুলো ব্যাক্তি মালিকানায় অথবা এন. জি.ও পরিচালিত। এখন কিন্তু ব্যাক্তি মালিকানায় পরিচালিত স্কুল এবং এন.জি.ও পরিচালিত স্কুল সম্পূর্ণরূপে বন্ধ।এখানে অনলাইন ক্লাস বন্ধ।কারন এখানে শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন বন্ধ।
তাই অনলাইন ক্লাস বন্ধ।আমরা যতটুকু জানি প্রাথমিক, মাধ্যমিক,উচ্চ মাধ্যমিক এবং উচ্চ শিক্ষা স্তরে প্রায় ১০ লক্ষ শিক্ষকের বেতন বন্ধ। তাই তারা কাজ হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।এ হিসেবে আমাদের করতে হবে। শিক্ষক হারাচ্ছে তার পেশা, শিক্ষার্থী হারাচ্ছে তার শিক্ষার সুযোগ। এই দশ লক্ষ শিক্ষক তো আর বসে বসে বেতন নিতো না।আর বসে বসে বেতন দেবেনই বা কে? তারা যাদেরকে পড়াতেন তারা আজ শিক্ষা থেকে শিক্ষা সরে গেল। এ ছাড়া কিছু বিদ্যালয়ে মিট ডে মিলের ব্যবস্থা ছিল। স্কুল বন্ধ হওয়ার কারণে আজ মিট ডে মিল বন্ধ।স্কুল বন্ধ হওয়ায় শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি আজ বন্ধ আছে।এ সকল বিষয় নিয়ে যেন কারো মাথা ব্যাথাও নেই।
এসকল কর্মসূচির বরাদ্দকৃত অর্থ কোন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে সে হিসাব কে নিচ্ছে?প্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পূর্বে আরেক ধরনের স্কুল এন জি ও পরিচালনা করত যার নাম ফিডার স্কুলে। এসব স্কুলে কিছুই পড়ানো হতো না।বরং তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ অব্যাহত রাখা জন্য, পুষ্টির জন্য শুধু খাবার পরিবেশন করা হতো।এতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিশুরা তাদের পুষ্টির অভাব পূরণ করত।আজ সবই বন্ধ আছে। প্রাথমিক শিক্ষার জন্য প্রনিত পাঠ্যপুস্তক রচনা করা হয়েছে এমন ভাবে যেখানে শিক্ষার্থীবৃন্দ নিজেদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে তাদের পাঠ শিখবে। কররোনা কালে পাঠের উপযোগী পাঠ্যক্রমের ব্যবস্থা আমরা করতে পারি নি।এ থেকে শিক্ষার্থীবৃন্দ কতটুকু শিখতে পারবে? বাড়ি বা বাসায় বসে অনলাইন ক্লাস শারীরিক বৃদ্ধি ব্যহত হবে। বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করতে না পারায়, খেলাধূলায় অংশ গ্রহণ করতে না পারায়, মত বিনিময় করতে না পারায় তাদের মানসিক বৃদ্ধি হচ্ছেনা।তাদের মধ্যে দেশ প্রেম, দেশাত্ববোদের অভাব দেখা দিবে।এ সব ক্ষতির পরিমাপ কোন নিক্তিতে পরিমাপ করবেন?তাই বলছি ক্ষতি অনেক বেশি যা নবায়ন যোগ্য নয়। মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের বয়ঃসন্ধিকাল চলছে। এ সময়ে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রকার মানসিক চাপ বৃদ্ধি পায় ফলে মানসিক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।এ সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য শিক্ষকবৃন্দ সব সময় একটি সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।করোনার কারনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোন প্রকার শেয়ারিং করার সুযোগ নেই।
স্বাভাবিক ভাবেই বয়োঃসন্ধিকালে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কিছু আচরনিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় যেমন অবাধ্য হওয়ার প্রবনতা বৃদ্ধি পায়।নিজের মতামতকে বেশি গুরুত্ব দেয়। যে বাবা মায়ের কথার অবাধ্য হত না, সে এখন বাবা মায়ের আত্মীয় স্বজনের আদেশ উপদেশ মানতে চায় না।এমন কী শুনতেও চান না?কোন প্রকার ধরাবাধা নিয়মনীতি মধ্যে থাকতে চায় না? চলাফেরায় দেখা যায় বেপরোয়া ভাব।শান্ত শিষ্ট ছেলেটি হঠাৎ করে হয়ে উঠে দুরন্ত।তার দুরন্তপনায় নিকট জনেরা হয়ে উঠেন অতিষ্ঠ। চলনে বলনে কথনে ভয়াবহ দুঃসাহস দেখাতে চায়। প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মধ্যে কোন প্রকার ব্যবধান মেনে নিতে চায় না। সামান্য কারনে উত্তেজিত হয়ে পরে।আত্মসম্মান বোধ বৃদ্ধি পায়। অভিমান থেকে নিজের অনিষ্ট করতে দ্বিধা করে না।আত্মহত্যার প্রবনতা বৃদ্ধি পায়। লেখা পড়ায় অমনোযোগী হয়ে যায়। পাল্টে যায় চলাফেরার ধরন।পোশাক আশাকে পরিবর্তন আসে ।
রুচির ও চিন্তায় লাগামহীন স্বাধীনতা ভোগ করতে চায়।বিপরীত লিঙ্গের প্রতি হঠাৎ করে আর্কষণ বেড়ে যায়। তাই বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার লেখা উল্লেখ করেছে যে তের চৌদ্দ বছরের ছেলে মেয়ে দের মতো আপদ আর দ্বিতীয়টি নেই। বয়োঃসন্ধিকালের সমস্যার সাথে নতুন করে যুক্ত হয়েছে করোনার উপদ্রব। বয়োঃসন্ধিকালের সমস্যা সমাধানের প্রধান উপায় ছিল এদেরকে বিভিন্ন কাজে যুক্ত করে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আনা।যেটা সম্ভব ছিল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলে শিক্ষকদের চোখে এ অস্বাভাবিক আচরণগুলো ধরা পড়ত। শিক্ষকবৃন্দ তাদেরকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আনতে সহযোগিতা করতে পারতো।সমবয়সীদের মধ্যে সমস্যাগুলো শেয়ার করতে পারলেও অনেক চাপ কমত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ, লকডাউন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, অতিরিক্ত ভীড় এরিয়ে চলা, খেলাধূলা নিষিদ্ধ করা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বন্ধ করায় মানসিক চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলে শিক্ষার্থীদের উপর চাপ কম পরত।স্কুলে আসতে পারলে সহপাঠিদের সাথে মেলামেশা করতে পারলে অনেক সমস্যার আপনা আপনি সমাধান হয়ে যেত বলে আমার বিশ্বাস। শিক্ষকদের সান্নিধ্যে আসলে শিক্ষার্থীদের এসব মানসিক চাপ হ্রাস পেত।বন্ধু বান্ধবদের সাথে নিজের সমস্যার শেয়ার করতে পারলে মানসিক বিকাশ ব্যহত হতনা।শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা না থাকার কারণে আজ শুধু শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা থেকে পিছিয়ে পরছে এমন নয়।তারা শিক্ষা সংস্কৃতি খেলাধূলা থেকেও পিছিয়েছে পরছে।খেলাধুলা করতে না পারায় তাদের শারীরিক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। সংস্কৃতি চর্চাকরতে না পারায় শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশ হচ্ছে না।
আনেক শিক্ষার্থীর চার দেওয়ালের মধ্যে বন্ধি থেকে জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে।যখন তাদেরকে মুক্ত বিহঙ্গের মত ঘোরাঘুরি করার সনয়।এই একগুয়েমির কারণে তাদের মধ্যে আচরনিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শান্ত শিষ্ট ছেলেটি এখন হয়ে উঠছে বাবা মায়ের অবাধ্য সন্তান। অনেক আবার হয়ে পরছে ঘরকুনো বা আত্মকেন্দ্রিক। অনেকই এ দুর্বিষহ জীবন থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় হিসেবে খুজে নিচ্ছে মোবাইল গেইস।সারা দিন বাসায় বসে কত সময় টেলিভিশন দেখে সময় কাটানো যায়? অনেক অভিভাবক ছেলের মঙ্গলের কথা চিন্তা করে অনলাইনে পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার জন্য ধার কর্যকরে ল্যাপটপ, ডেস্কটপ, মোবাইলে কিনে দিয়েছেন। বাসায় ইন্টারনেট লাইনের সংযোগ নিয়েছেন। মোবাইলে ডাটা কিনে দিচ্ছেন। সন্তান তার বাবা মায়ের কষ্টের টাকায় কেনা মোবাইলে গেইমস খেলছে।শুধু গেইমস নয় এছাড়াও অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত কার্যকলাপে যুক্ত হয়ে পরছে।এখন তারা মোবাইল গেইমস থেকে আর মুখই তুলতে চায়না।
এ সবের জন্য আমরা কাকে দায়ী করব। আমরা সরাসরি পাঠদানের বিকল্প হিসেবে অনলাইনে ক্লাস বা টেলিভিশনে পাঠদানের যে ব্যবস্থা করেছি তাতে আমরা শিক্ষার্থীদের কতটুকু শিক্ষার সাথে যুক্ত করতে পেরেছি? এটা ভেবে দেখার সময় এসেছে। পড়াশোনা বাদে তারা বেশির ভাগই যুক্ত হয়ে পরছে বাজে নেশায়। তাই আমাদের সরাসরি পাঠদানের বিকল্প না খুঁজে। কি ভাবে, কি বিকিল্প ব্যাবস্থায় সরাসরি পাঠদান চালু করা যায় অর্থাৎ কি ব্যবস্থায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া যায় সে চিন্তা করা অতিব জরুরী । শহর অঞ্চলে অনলাইন ক্লাস এবং টেলিভিশন পাঠদান সামান্য কার্যকর হলেও গ্রামের দিকে ইহা শতভাগ ব্যর্থ হয়েছে। গ্রামে শতভাগ শিক্ষার্থী অলস সময় পার করছে। আমরা ছোট বেলায় শুনেছি অনেকই ঠাট্টা কর বলতেন ছাত্র জীবন মধুর জীবন যদি না থাকত এক্সামিনেশন।যদিও এখন অনেক শিক্ষাবিদদের বলতে শুনি শিক্ষার্থীরা নাকি পরীক্ষা ভীতির কারনে স্কুল পালায়। ভালো এখন পরীক্ষা কেন? পাঠদানের ব্যবস্থাও নেই। স্কুল নেই, ক্লাস নেই। শুধু আছে অটোপ্রমোশন।
এখন আর পরীক্ষা ভীতি নেই, ক্লাস করতে হবে না। তার পরেও প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থী ঝড়ে পরছে।এখন পর্যন্ত যে হিসাব তাতো শুধু বাবা মার অসচ্ছলতার কারণে ঝরে পরা। অপেক্ষা করুন অটোমেশন এবং স্কুল বন্ধ থাকায় পড়াশোনা না করে উপরের শ্রেণিতে উঠে যাওয়ার ফলে কতজন স্কুল পালায়। সে হিসাব করবেন আরো দুই তিন বছর পরে।তাই এখন থেকেই যদি অটোমেশন পাওয়া প্রাথমিক বা মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের বিশেষ ব্যবস্থায় তাদের শ্রেণি উপযোগী করে তোলার ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয় তাহলে ৫০% শিক্ষার্থী মাধ্যমিক বিদ্যালয় গন্ডি পার হতে পারবেনা। প্রাথমিক থেকে ঝড়ে যাওয়া শিক্ষার্থীও সংখ্যা কম হবেনা। যে সকল শিক্ষার্থী প্রাথমিক স্তরে কিন্ডারগার্টেন বা এন জি ও পরিচালিত স্কুলে পড়াশোনা করত।সেই সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েগেছে। সেখানকার শিক্ষার্থীরা কোথায় গেল? তারা কী আদৌ পড়াশোনা আওতায় আছে না ঝড়ে পরগেছে? তাই কত ভাগ শিক্ষার্থী পড়াশোনা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে তা এখনই বলা যাবেনা।তবে শিক্ষা থেকে বিচ্ছিন্ন বা পিছিয়ে পড়াদের মূলধারায় যুক্ত রাখতে হলে এখনই পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
পুরাতন ফাইল ঘেটে বা অন্য কোন দেশ থেকে পরিকল্পনা ধার করে এনে এ সমস্যার সমাধান করা যাবেনা। পরিকল্পনা করতে হবে আমাদের দেশীয় প্রেক্ষাপটে, আমার দেশের বাস্তবতায়।বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞ ভাড়ায় আনার প্রয়োজন নেই। পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থী শ্রেণির উপযুক্ত করার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত জনবল প্রয়োজন। আমাদের দেশেই অসংখ্য শিক্ষিত বেকার জনশক্তি রয়েছে। আমরা তাদের কাজে লাগাতে পারি। তাতে আমাদের বেকার সমস্যারও সমাধান হবে। আমি শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন রাখব শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা বোঝাতে আমাদেরকেও সৃজনশীল হতে হবে।গতানুগতিক পরিপত্র জারি না করে নিত্য নতুন করে পরিপত্র জারি করুন। আমার ধারণা আবারও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সময় বৃদ্ধি করা হবে।এবারের পরিপত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ না বলে একটু কষ্ট করে লিখুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরাসরি পাঠদান বন্ধ তবে অনলাইন ক্লাস এবং সংসদ টেলিভিশন এর পাঠদান কার্যক্রম যথারীতি চলবে। অভিভাবকবৃন্দ এতে বিভ্রান্ত হত না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার জন্য শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে মূল্যবান সময় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।যারা স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী ছিল তাদের অনেক আশায় বুক বেঁধে ছিল পড়াশোনা শেষ করে দ্রুত একটি চাকুরির ব্যবস্থা করে পরিবারের হাল ধরবে।সে স্বপ্ন তাদের কাছে স্বপ্নই থেকে গেল।
বৃদ্ধ বাবা মায়ের আশা অপূরনই থেকে গেল।অনেক আবার বাধ্য হয়েছে পড়াশোনা বন্ধ করে দিয়ে বেঁচে থাকার সংগ্রামে নেমে পরতে। দেশে অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থী পড়াশোনা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। কারন করোনার জন্য পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি তার চাকুরির হারিয়েছে। তার পরিবারের পক্ষে তার পড়াশোনা ব্যয় ভার বহন করা সম্ভব নয়। তাহলে উচ্চ শিক্ষার পথ অনেকরই বন্ধ হয়ে গেল। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষা উপকরণ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী চরম দূরাবস্থার মাঝে পরেছে।এ সংখ্যাটাও একবারে কম নয়। শহর অঞ্চলের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের আনানেওয়া জন্য পরিবহন ব্যবস্থা আছে। করোনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সেই সকল পরিবহন শ্রমিক কর্মহীন পরেছে।তারা তাদের পরবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের হোষ্টেলগুলো বন্ধ আছে। সেখানে যারা কাজ করত তারা কর্মহীন বেকার জীবন যাপন করছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সার্বিক ভাবে শিক্ষক, কর্মচারী, শিক্ষার্থী, অভিভাবক,শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তা, শিক্ষা কর্মী, শিক্ষা উপকরণ ব্যবসায়ী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট পরিবহন শ্রমিক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট ছাত্রাবাসের বাবুর্চি, বয় বেয়ারা সবাই কোন না কোন ভাবে আর্থিক, শারীরিক, মানসিক সমস্যা সম্মূখীন হয়েছে। আমার মনেহয় শিক্ষার সাথে মোট জনসংখ্যার শতকরা ২৫ ভাগ লোক জড়িত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা বা বন্ধের সাথে এদের ভালো মন্দ জড়িয়ে আছে। তাই বলা যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা অপূরনীয় এবং অপরিসীম। যা অনেকটা অর্থের অংকে পরমাপযোগ্য নয়।
দুলাল চন্দ্র চৌধুরী
প্রধান শিক্ষক ইস্কাটন গার্ডেন উচ্চ বিদ্যালয় ও সাংগঠনিক সম্পাদক
বাংলাদেশ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান পরিষদ।
0 Comments
Thank you for your message, I see all your messages, it is not possible to reply many times due to busyness, I hope I will reply to everyone in time, thank you for being with me. Thanks you watching my content. Please like, Follow, Subscribe.