গল্প #ঝরা_ফুলের_বাসর


 বাসর ঘরে বসে আছে নূর।তল পেট চেপে ধরে শরীর উল্টানো ব্যাথায় গুটিশুটি মেরে পরে আছে।লাল শাড়িটায় লালচে রক্তের ছাপ।আর সাদা বিছানার চাদরটায় ছোপ ছোপ রক্তের দাগ লেগে আছে।নূর চাইছে শাড়ির আচঁল দিয়ে দাগগুলো ঢেকে রাখার কিন্তু পারছে না।হঠাৎ দুম করে দরজা বন্ধের আওয়াজ।ভয় পেয়ে কেঁপে ওঠে নূর।সামনে তাকিয়ে দেখে হৃদ।

হৃদ আজ বড্ড খুশী।কারণ আজ তার ভালোবাসার মানুষটা খুব কাছে।আজ হৃদ পারবে তাকে আপন করে নিতে।হৃদ খুশি মনে এক'পা, দু'পা করে নূরের দিকে আগাতে থাকে।হৃদ এবার নূরের খুব কাছে চলে এসেছে।হৃদ নূরের পাশে বসে নূরের মুখটা তুলে নিজের দিকে নেয়।দেখে নূরের চোখদুটো খুব শক্ত করে বন্ধ করা।হৃদ মুচকি হেসে নূরের দুই চোখে আলতো ঠোঁটের পরস ছুঁয়ে দেয়।তারপর নূরের গলায় আর বুকে ঠোঁটের পরস দিতে থাকে।অন্যদিকে চিটচিটে, গা ঘিনঘিনে আর ব্যাথা ও অস্বস্তিবোধ হতে থাকে নূরের।হৃদের এখন কোনো হুস নেয়। কোনো দিকে নজরও নেই।নূরের শরীরটা নেশা ভরা দৃস্টিতে কিছুক্ষণ দেখে নেয়।হৃদ এবার নূরের শাড়ির আচঁলটা টেনে বুকের উপর থেকে নামিয়ে দেয়।তারপর নূরের ব্লাউজের হুকগুলো খুলতে যাবে এমন সময় হৃদের এক হাত নূরের পেটের উপরে পরায় হৃদ থেমে যায়।নিচু হয়ে নূরের নাভির নিচে তল পেটে একটা গভীর চুম্বন করে।নূর এবার ব্যাথা সইতে না পেরে জোরে একটা চিৎকার দিয়ে ওঠে।আর নূরের এমন হঠাৎ চিৎকার শুনে হৃদের হুশ আসে।নূরের দিকে তাকিয়ে দেখে নূর কাঁদছে।হৃদ তারাতাড়ি করে নূরের বুকে শাড়ির আঁচলটা পূণরায় উঠিয়ে দিয়ে নূরের মুখটা আকড়ে ধরে জানতে চায়, এই পাগলি কাঁদছো কেন কি হয়েছে? তুমি না আমাকে ভালোবাসো? তাহলে...ভয় করছে তোমার?
নূর কি বলবে হৃদকে বুঝে উঠতে পারছে না।শুধুই কেঁদে চলেছে।তাই দেখে হৃদ অভিমানী স্বরে বলে, যাও বলবা নাতো।আমি আর তোমার কাছেই আসবো না।কথাটা বলে মুখটা ঘুরিয়ে নেয় নূরের থেকে।
নূর কাঁদতে কাঁদতে বলে, হ্যাঁ যাও যাও। কাছে আসতে হবে না আমার। কিচ্ছু বোঝে না।শুধুই ভুল বোঝে।
আরে না বললে বুঝবো কিভাবে? কথাটা বলে হৃদ ঘুরে তাকায় নূরের দিকে।তারপর নূরের মাথাটা শক্ত করে চেপে ধরে বলে, আজকের দিনটার জন্য আমরা কতো স্বপ্ন দেখেছি, কতো অপেক্ষা করেছি নূর।এই কি হয়েছে তোমার আজ? আমার সাথে এমন কেন করছো? একটু ভালোবাসতে দাও না আমায়।কথাটা বলে হৃদ নূরের ঠোঁটের দিকে আগাতে যাবে এমন সময় নূর দু'জনের ঠোঁটের মাঝে নিজের ডান হাতটা রাখে।তারপর হৃদকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে অনেক লম্বা সময় নিয়ে আমতা আমতা করে বলে, পিললললিজ হৃদদদ এই সসব কি তিনদিইইন পর হতে পাআরে না?
কথাটা শুনে হৃদ কেবলার মতো মুখ করে নূরের দিকে তাকিয়ে থাকে।হৃদ ভাবে নূর ইচ্ছা করে ওর কাছ থেকে দূরে থাকার সময় চাচ্ছে।এজন্য হৃদ মজা করে নূরের মতোই লম্বা সময় নিয়ে টেনে বলে, না আআআআহ।এ হতে পারে না আআআআহ।আমার তোমাকে আজই চায় জানেমান।পাঁচ বছর সময় লেগেছে তোমার মন পেতে।আর আজ তোমায় এতো কাছে পেয়েও আদর করবো না। এটা কি ঠিক বলো? কথাটা বলে হৃদ জোড়িয়ে ধরে নূরকে।
আর নূর জোড়ে জোড়ে কাঁদতে থাকে। হৃদ নূরকে ছেড়ে দিয়ে বলে, মহা মুশকিল তো! আবার কাঁদে?
নূর কাঁদতে কাঁদতে আস্তে করে শাড়ির আঁচলটা সরিয়ে দিয়ে হৃদকে বিছানার চাদরের দিকে ইশারা করে।
হৃদ বিছানার চাদরটা দেখে চুপ হয়ে যায়।বুঝতে পারে নূর কেন এতোক্ষণ এমন করছিলো।হৃদ কিছুক্ষণ পর নিরবতা ভেঙে নূরের দিকে তাকিয়ে বলে, পিরিয়ডের দাগ?
নূর কাঁদতে কাঁদতে বলে, হ্যাঁ হৃদ।ছরি।প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও।
হৃদ মুচকি হেসে নূরের মুখটা আকড়ে ধরে দু'চোখের পানি মুছিয়ে দেয়।তারপর বলে,ধূর পাগলি এর জন্য কেউ ছরি বলে? আর বাসর রাত? তার জন্য তো সারাটা জীবন, যৌবন পরে আছে।আমি বুড়ি বয়সেও তোমাকে ছাড়বো না কিন্তু বলে দিলাম।
নূর আবার কাঁদে। ( - যারা গল্প পরতে ইচ্ছুক তারা , আমার আইডিতে ফলো দিন বা রিকুয়েষ্ট পাঠিয়ে সাথে থাকুন। ) আর কাঁদতে কাঁদতে বলে, আর কতোক্ষণ এইভাবে বসে থাকবো হৃদ?
নূরের কথায় হৃদ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত ১টা বাজে।এমন সময় কোনো দোকানই খোলা পাওয়া যাবে না তাহলে কি করা যায়? আইডিয়া ফুলঝুরি!
[ফুলঝুরি হৃদের খালাতো বোন।ভালোবেসে সবাই ফুল বলে ডাকে।ফুলের বয়স যখন পাঁচ বছর তখন ফুলের বাবা ফুলকে আর ওর মাকে মেরে বাড়ি থেকে তারিয়ে দিয়ে নতুন বিয়ে করে নেয়।আর তারপর থেকেই ফুল আর ফুলের মা এবাড়িতে থাকা শুরু করে।কিছুদিন আগে ফুলের মাও মারা যায়। যার কারণে ফুলের নিজেকে এখন বড্ড একা লাগে।]
হৃদ চুপিচুপি ফুলের রুমের সামনে গিয়ে দরজাটা নক করে।বাইরে থেকে ফিসফিসয়ে ফুলকে ডাকে।ফুল রুমের মধ্যে কারও ছবি বুকে নিয়ে কাঁদছিলো।যাকে সে সারা জীবনের জন্য হারিয়েছে ফেলেছে।হঠাৎ দরজার বাইরে থেকে হৃদ ওকে ডাকছে বুঝতে পেরে ছবিটা বালিশের নিচে লুকিয়ে ছুটে গিয়ে দরজাটা খুলে দেয়। হৃদ ফুলের চোখ, মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।অনেক ফুলে আছে মনে হচ্ছে অনেক কেঁদেছে।
হৃদ কিছু বলতে যাবে তার আগেই ফুল বলে উঠলো, হৃদ ভাইয়া তুমি এখানে? এতো রাতে কোনো সমস্যা?
হৃদ মাথা ঝাকিয়ে ফুলের হাতটা ধরে বসে আর বলে হ্যাঁ রে ফুল। এখনতো মা ঘুম তুই হেল্প করতে পারিস আমার।
নিজের হাতটা ফুল হৃদের থেকে সরিয়ে নেয়। আচ্ছা বলো কেমন হেল্প?
হৃদ বলতে গিয়েও থেমে যায়। ফুল তাই দেখে বলে, কি হলো ভাইয়া বলো?
হৃদ কিছুক্ষণ চুপ থেকে তারপর বলে, তুই একটু তোর ভাবির রুমে যা।দেখ ওর কি প্রয়োজন।
ফুল ভাবে সিরিয়াস কিছু হয়েছে হয়তো।তাই ছুটে হৃদের রুমে যায়। দেখে নূর ফুলে সাজানো বিছানার উপরে বসে পরে কাঁদছে। ফুলকে দেখে নূর স্বাভাবিক হয়ে আপন মনে সমস্যাটা খুলে বলে।আর সব শুনে ফুল নূরকে হেল্প করে।এই বাবদে নূরের সাথে ফুলের সম্পর্কটাও গাঢ় হয়।সারা রাত নূর আর ফুল গল্পগুজব করে কাটায় আর রুমের বাইরে দাড়িয়ে অপেক্ষা করতে করতে হৃদ ওখানেই ঘুমিয়ে পরে দরজার সাথে হেলান দিয়ে।
চলবে,,,,,?? নাকি চলবে না ?
# Part_01
© Mst_Liza

Post a Comment

0 Comments