যৌন জীবনে সুখী হতে যে বিষয়গুলো আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে 

যৌন জীবনে সুখী হতে যে বিষয়গুলো আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে  জীববিদ্যা, মনোবিদ্যা, সামাজিক-সংস্কৃতিসহ সকল গবেষণা তথ্য থেকেই জানা যায়, যৌনতা মানবজীবন ও মনের ওপর প্রভাব সৃষ্টি করে থাকে। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায়, মানুষের মনোজগতের ওপরেও রয়েছে যৌনাচরণের ব্যাপক ভূমিকা। নারী এবং পুরুষের যৌন-উদ্দীপনা একই সাথে শুরু হয় না। নারীর উদ্দীপনা পুরুষের চেয়ে লঘু এবং ধীরগতিতে সৃষ্টি হয়ে পরবর্তী সময়ে সেটা অতিরিক্ত সময় স্থায়ী হতে পারে। অর্থাত্‍ নারীর যৌন সাড়া সৃষ্টি হলে সেটার স্থায়িত্ব পুরুষের উদ্দীপনা ও স্থায়িত্বের চেয়ে বেশি স্থায়ী হয়। পুরুষ এবং নারীর যৌন উদ্দীপনার জন্যে ক'টি ইন্দ্রিয় বা যৌনাঙ্গ ব্যাপকভাবে কাজ করে। পুরুষের প্রধান যৌনাঙ্গ হলো তার লিঙ্গ এবং এটি পুরুষের বাহ্যিক এবং প্রধান যৌনাঙ্গ। নারীর মতো পুরুষের অন্তর্গত কোনো যৌনাঙ্গ নেই। পুরুষের অন্ডথলিতে বীর্য এবং শুক্র উত্‍পন্ন হয়। দৈহিক মিলনের সময় এই শুক্র বীর্যের মাধ্যমে পুরুষের লিঙ্গ থেকে বের হয়ে আসে এবং পুরুষ চরমপুলক লাভ করে। সাধারণত লিঙ্গের আকার নিয়ে সবসময়ই বহু পুরুষকে উদ্বিগ্ন থাকতে দেখা যায়। অথচ এটি একটি তুলনামূলক অহেতুক এবং অনর্থক যৌনচিন্তা। পুরুষের লিঙ্গের সাইজ বিশেষ করে সার্কভুক্ত এশিয়া অঞ্চলে পুরুষের লিঙ্গের গড় দৈর্ঘ্য ৫ থেকে সাড়ে ৫ ইঞ্চি। তবে অনেকের ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম হতে পারে যেমন- কারো কারো লিঙ্গের দৈর্ঘ্য ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি আবার অনেকের লিঙ্গের দৈর্ঘ্য ৪ থেকে সাড়ে ৪ ইঞ্চি হতে পারে। উভয় প্রকার লিঙ্গ দ্বারাই সফল যৌনমিলন সম্ভব। কারণ পুরুষের উত্তেজনার মূল কেন্দ্রস্থল হলো তার লিঙ্গ। লিঙ্গের উত্থানই পুরুষের মূল যৌনশক্তি। নারীর বাহ্যিক যৌনাঙ্গ এবং অন্তর্গত যৌনাঙ্গ রয়েছে। বাহ্যিক যৌনাঙ্গের মধ্যে নারীর ক্লাইটোরিস বা ভগাঙ্কুর সবচেয়ে বেশি যৌনস্পর্শকাতর অঙ্গ। পুরুষ যৌনমিলন পূর্বে নারীর এই যৌনাঙ্গ স্পর্শের মাধ্যমে নারীকে যৌনকাতর করে তুলতে পারে। পুরুষ এবং নারী উভয়েরই যৌন উত্তেজনার সময়ে তাদের রক্তচাপের পরিমাণ বেড়ে যায়। পুরুষের ক্ষেত্রে হার্টবিট, হৃদস্পন্দন প্রতি মিনিটে ১০০ থেকে ১৭৫ এবং নারীর ক্ষেত্রে সেটা প্রতি মিনিটে ৮০ থেকে ১৫০ পর্যন্ত উঠতে পারে। পুরুষ এবং নারীর যৌথ উত্তেজনার শেষ পর্যায় হলো চরমপুলক। এ সময়ে পুরুষের বীর্যপাত ঘটে এবং নারী চরমতৃপ্তি বা চরমপুলক লাভ করে। এটি শারীরিকভাবে যৌন টেনশনকে কমাতেও সাহায্য করে। চরমপুলকের সময় পুরুষ এবং নারীর দৈহিক এবং মানসিক অস্থিরতা বেড়ে যায় এবং এটা চরমপুলক লাভের পর একেবারে কমে যায়। তবে সাধারণত যে ক'টা বিষয় পুরুষ এবং নারীর যৌনতার জন্য প্রয়োজন তা হলো- উভয়ের যৌন হরমোনের স্বাভাবিকতা, নারীর যোনির আর্দ্রতা, পুরুষের লিঙ্গের দৃঢ়তা এবং সঠিক উত্থান এবং বিশেষ করে উভয়ে উভয়ের প্রতি যৌন চাহিদা এবং আকর্ষণবোধ করা। পুরুষের যৌন হরমোন হলো টেস্টোস্টেরন এবং নারীর যৌন হরমোন হলো ইস্ট্রোজেন। সাধারণত শেষ রাতের দিকে নারী-পুরুষের যৌন হরমোন সবচেয়ে বেশি মাত্রায় শরীরে অবস্থান করে এবং এ জন্য সকালের দিকে যৌন আকর্ষণ এবং যৌনক্ষমতা একটু বেশি থাকে। তাই এ সময়েই যৌন মিলন নিরাপদ ও তৃপ্তিদায়ক। মধ্য বয়সে এসে পুরুষ এবং নারী যৌনতার প্রতি বেশি আকর্ষণ এবং চাহিদাবোধ করে। কৈশোর পেরিয়ে যৌবনপ্রাপ্তির পর থেকে নারী-পুরুষ উভয়ে মোটামুটি ৪০-৫০ বছর বয়স পর্যন্ত তারা যৌনমিলনে সক্রিয় থাকে। তবে মধ্য বয়সে যৌনতার প্রতি আকর্ষণ থাকে তুলনামূলকভাবে বেশি। নারীর মেনোপজের সময় তার রজঃনিবৃত্তির সূচনা হয়। এটি অনেক নারীকেই যৌনতার প্রতি উদাসীন করে তোলে। আমাদের দেশে প্রায় ক্ষেত্রে ৪৫ বছরের পর নারীদের যৌনভাবে নিষ্ক্রিয় দেখা যায়। পুরুষের ক্ষেত্রে এই সময়ের কাছাকাছি বা ৫০ বছর বয়সের পরেও যৌনভাবে সক্ষম থাকতে দেখা যায়। মানুষের বয়স বাড়ার সাথে সাথে যৌন ইচ্ছার কমতির কারণ হলো যৌন হরমোন কমে যাওয়া। তবে নানাবিধ শারীরিক এবং মানসিক কারণেও পুরুষ এবং নারীর যৌন ইচ্ছা এবং যৌনশক্তি কমে যেতে পারে। আথ্রাইটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং ক্যান্সার জাতীয় শারীরিক অসুস্থতা যৌনতার ওপর প্রভাব ফেলে। তেমনি নানাবিধ মানসিক অসুস্থতাও যৌন ইচ্ছা ও ক্ষমতাকে নষ্ট করে দিতে পারে এবং যে সমস্যায় পুরুষ ও নারী উভয়ই আক্রান্ত হতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পেরিফেরাল স্নায়ু ব্যবস্থা, কার্ডিওভাসকুলার ব্যবস্থা এবং যৌনাঙ্গের সমস্যার কারণে যৌন ক্রিয়াকর্মে বিঘœ সৃষ্টি হতে পারে। নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে যৌনতার প্রতি ভীতি সমস্যার কারণে যৌনতায় অসুস্থতা সৃষ্টি হতে পারে। ডায়াবেটিস সমস্যার ফলে পুরুষ এবং নারীর যৌনজীবনে নানা যৌন সমস্যা দেখা দিতে পারে। যৌন সমস্যা সমাধানে  ঝুঁকিপূর্ণ খাদ্যভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। নিয়মিত এবং পরিমিত শারীরিক শ্রম বজায় রাখতে হবে। উচ্চতা অনুসারে কাক্সিক্ষত দৈহিক ওজন অবশ্যই ঠিক থাকতে হবে। পুরুষকে তার নিজের ও তার সঙ্গীর সাথে মধুরতর সম্পর্ক সৃষ্টি ও বজায় রাখতে হবে। যৌন স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সতর্কতা প্রতিটি সুস্থ-স্বাভাবিক পুরুষ-নারীর জন্য জরুরি। আমাদের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্যেও যৌনতার প্রয়োজন।
এটি জীবনের একটি অন্যতম নিয়ামক। পুরুষ-নারীর জন্যে যৌন-স্বাস্থ্যের সুস্থতা অবশ্যই জরুরি এবং প্রয়োজনীয়। ডাক্তারের কাছে বা বিশেষজ্ঞের কাছে আপনার যেকোনো প্রকার শারীরিক এবং মানসিক সমস্যা, যেগুলো আপনার যৌনজীবনের সাথে সম্পৃক্ত সে ব্যাপারে খোলাখুলি আলোচনার মাধ্যমে পরামর্শ নিন। যৌন সমস্যা সম্পর্কিত জ্ঞান আহরণ করুন। এতে আপনার যৌনতা সম্পর্কিত অজ্ঞতা কেটে যাবে। যৌনজীবনে সুখী হতে চাইলে যৌন স্বাস্থ্যকে সুস্থ রাখার বিকল্প নেই।

Post a Comment

0 Comments