খাটের নিচে লাশ রেখে ওপরে নিশ্চিন্ত ঘুম

 পচা দুর্গন্ধটা দুই দিন ধরেই নাকে আসছিল বাড়ির সবার। কিন্তু গন্ধের উৎস খুঁজে পাচ্ছিল না কেউ। বাড়ির বাইরে থেকে হয়তো গন্ধটা ঘরে ঢুকেছে এমনই ভেবেছিল সবাই। পরদিন বিকালে গন্ধটা আরও তীব্র হয়। সবার ধারণা, ইঁদুর বা বিড়াল মরে পচে আছে ঘরের মধ্যেই। এবার বাড়িসুদ্ধ তল্লাশি শুরু। প্রতিটি ঘরে। সন্ধ্যায় বেডরুমের খাটের নিচে ঝুঁকতেই থমকে যান গৃহকর্তা পিন্টু দেবনাথ। খাটের নিচ থেকে গন্ধের ঝাপটা তার নাকে লাগে। তিনি সহ্য করতে না পেরে লাফিয়ে দাঁড়িয়ে যান। নাক-মুখ বেঁধে খাটের নিচে তাকাতেই ভয় পেয়ে যান। খাটের নিচে আস্ত একজন মানুষ! আলো ধরে দেখেন আর কেউ নন, ২৪ বছর বয়সী তার ফুফাতো ভাই মাধব দেবনাথ। ভাইয়ের হাত ধরে টানতে গিয়ে বুঝতে পারেন ভাই বেঁচে নেই। শুধু তাই নয়, লাশ পচে গলে সেখান থেকেই গন্ধ বেরোচ্ছে। ছোট ভাইয়ের লাশ খাটের নিচে রেখেই পিন্টু ও তার স্ত্রী বীথি দেবনাথ তিন দিন ঘুমান। স্বাভাবিক জীবন যাপন করেন। খবর পেয়ে পুলিশ আসে। লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। তদন্ত শুরু করে। ঘটনাটি গত বছর ডিসেম্বরের। চট্টগ্রামের টেরিবাজারের। তবে পুলিশকে বেশি বেগ পেতে হয়নি। খুনের রহস্য উদ্ঘাটনের পাশাপাশি বেরিয়ে আসে এক নিষিদ্ধ প্রেমকাহিনি। গ্রেফতার হন খুনি। এ খুনি আর কেউ নন পিন্টু দেবনাথের স্ত্রী বীথি। বীথি পুলিশের কাছে স্বীকার করেন তার অবৈধ প্রণয় থেকে শুরু করে খুনি হয়ে ওঠা পর্যন্ত সবকিছু।

চট্টগ্রামের টেরিবাজারের আফিমের গলির চার তলা ভবনের নিচতলার ফ্ল্যাটে মা-বাবা, স্ত্রী ও দুই ভাইকে নিয়ে থাকেন


পিন্টু দেবনাথ। তার ফুফাতো ভাই মাধব দেবনাথ পাশের   হাজারি গলির একটি গয়নার দোকানের কারিগর। একসময় মাধব তাদের বাসায় টাকার বিনিময়ে খাওয়া-দাওয়া শুরু করেন। সে হিসেবে প্রতিদিনের আসা-যাওয়া ছিল মাধবের।

পুলিশের তদন্ত ও মামলার নথিপত্র ঘেঁটে জানা যায়, মাধবের সঙ্গে বীথির সম্পর্ক ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠ হতে থাকে। মাঝে একবার মাধব অসুস্থ হয়ে পড়েন। বীথি আর তার শাশুড়ি তাকে সেবা-যতেœ সুস্থ করে তোলেন। মূলত সে সময়ই ২২ বছর বয়সী বীথির সঙ্গে মাধবের শারীরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বাড়ির সবার অলক্ষ্যে চলতে থাকে নিষিদ্ধ প্রেম। কেউ কিছু বুঝে উঠতেও পারেনি। প্রায় প্রতিদিনই মাধব আসতেন সেই বাড়িতে। সেখানেই চলত তাদের শারীরিক সম্পর্ক। এভাবেই কাটছিল বেশ। কিন্তু হঠাৎই মাধবের মন ভিন্ন দিকে যায়। মাধব তাদের শারীরিক সম্পর্ক ভিডিও করে রাখেন। বীথি সে সময় অবৈধ প্রেমে এতটাই মত্ত ছিলেন যে ভিডিও করলেও নিষেধ করতেন না। বরং এটা নিজেও উপভোগ করতেন। একসময় মাধবের আসল চরিত্র প্রকাশ পায়। টাকা দাবি করতে থাকেন বীথির কাছে। বীথি তাকে ভালোবাসার কথা বলে সে পথ থেকে ফেরার অনুরোধ করেন। কিন্তু মাধব মানতে নারাজ। তার টাকা চাই। অন্যথায় ভিডিও চলে যাবে তার স্বামীর হাতে। বীথি ভয় পেয়ে টাকা দিতে থাকেন। কিন্তু মাধবের টাকার চাহিদা বাড়ে। বীথির বাড়ে ভয়। অস্থির হয়ে পড়েন বীথি। কী করবেন না করবেন বুঝে উঠতে পারেন না। কারও কাছে শেয়ারও করতে পারেন না। সংসারেও তার মন নেই। সব সময় একটা ভয় তাকে ঘিরে রাখত। এই বুঝি স্বামীর কাছে ভিডিও চলে যাচ্ছে। তার আশঙ্কাও সঠিক হয়। ফেসবুকে একটি ফেক আইডি দিয়ে ভিডিও ক্লিপ তার স্বামীকে পাঠান। এ নিয়ে স্বামীর সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। পরে মাধব ভিডিও পাঠানোর পরিকল্পনা করেন তার আত্মীয়স্বজনের কাছে।

চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম সরওয়ার জাহানের আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বীথি বলেন, ‘ঘটনার দিন ২ ডিসেম্বর রাত আনুমানিক পৌনে ১০টার দিকে বিদ্যুৎ চলে যায়। আমার দেবর, শ্বশুর-শাশুড়িসহ সবাই বাসার বাইরে চলে যান। এ সময় হঠাৎ আমার রুমে আমি মাধবকে দেখতে পাই। একপর্যায়ে মাধব আমাকে বলে, ও যেভাবে আমাকে চায় ওভাবেই ওকে দিতে হবে। ওর কথা শুনতে হবে নইলে ওর কাছে আমাদের যে ভিডিওগুলো আছে সেগুলো আমার ভাই, কাকা, আত্মীয়স্বজনকে দিয়ে আমাকে চরিত্রহীনা বানাবে। তখন আমার মাথায় আসে এখান থেকে বের হয়ে যেতে পারলে সে যে কাউকে আবারও ভিডিওগুলো দেখাতে পারে। তাই আমি মনস্থির করি তাকে মেরার। তাকে মারার কৌশল হিসেবে আমি তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করার প্রস্তাব দিই এবং বলি তুমি যেভাবে চাইবে সেভাবেই হবে। আমি তাকে কৌশলে ফ্লোরে শুইয়ে দিই। আমার পরিকল্পনা অনুযায়ী একটি গামছা দিয়ে ওর মুখ বেঁধে ফেলি। একপর্যায়ে গামছা দিয়ে ওর গলা চেপে ধরি। দুই মিনিট পর দেখি ওর চোখ থেকে পানি পড়ছে। নাক-মুখ থেকে ফেনা বের হলে গলা ছেড়ে দিই এবং ওর পা খাটের নিচে ঢোকাই। পরে পুরো দেহ ঠেলে ঢুকিয়ে দিই।’ কোতোয়ালি থানার পুলিশ জানায়, লাশ খাটের নিচে রেখে বীথি রাতে ঘুমান। পরদিনও স্বাভাবিক খাওয়া-দাওয়া করেন। তিন দিনের দিন দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার পর তার শাশুড়ি দুর্গন্ধ পান। সন্ধ্যার দিকে পিন্টু বাসায় ফিরে খাটের নিচে মোবাইলের আলোয় লাশ আবিষ্কার করেন।

Post a Comment

0 Comments

Update Posts

Checking the proxy and the firewall Running Windows Network Diagnostics ,unexpectedly closed the connection.This Site Can't Be Reached ERR_CONNECTION_REFUSED in Google chrome- Fixed easily
“স্বাস্থ্য বিধি মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবি এখন সার্বজনীন  ” দুলাল চন্দ্র চৌধুরী   প্রধান শিক্ষক ইস্কাটন গার্ডেন উচ্চ বিদ্যালয় ও সাংগঠনিক সম্পাদক
✅ Error 522 Utc Connection Timed Out - Fix Website Success
how to do not sending message gp number bd
About Us
Samorita Hospital Ltd. Location Phone Address শমরিতা হাসপাতাল
Blogger WhatsApp Group Links 2021 | Youtubers WhatsApp Group Links
The Top 22 Pay-Per-Click PPC Advertising Networks
১০টি বাংলাদেশের সেরা ক্যান্সার হাসপাতাল  10 best cancer hospitals in Ban...
ঢাকা টু কলকাতা বাস ভাড়া ও সময়সূচী ২০২৪ অনলাইনে বাস, ট্রেন ও এয়ার টিকিট কাটবেন যেভাবে গোপালগঞ্জ থেকে কলকাতা  কোন কোন পরিবহন যায়