#সমার্থকশব্দকী?
#সমার্থক বলতে সমান অর্থকে বুঝায়। অর্থাৎ সমার্থক শব্দ বা প্রতিশব্দ হলো অনুরূপ বা সম অর্থবোধক শব্দ। যে শব্দ অন্য কোন শব্দের একই অর্থ কিংবা প্রায় সমান অর্থ প্রকাশ করে, তাকে সমার্থক শব্দ বলা হয়। সমার্থক শব্দের একটিকে অন্যটির প্রতিশব্দ বলা হয়। ইংরেজিতে যাকে বলা হয় Synonym.
উদাহরণ:
অশ্রু: চোখের জল, নেত্রবারি, ধারাপাত, বর্ষণ।
অপচয়: অপব্যয়, বৃথাব্যয়, ক্ষতি, ক্ষয়, হ্রাস।
অগ্নি: আগুন, বহ্নি, পাবক, হুতাশন, অনল, দহন, শিখা, সর্বভুক, কৃশানু, বৈশ্বানর।
সমার্থক শব্দের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা:
মনের ভাব যথাযথভাবে প্রকাশ করতে হলে আমাদের অবশই সমার্থক শব্দ ব্যবহার করতে হবে। তাই সমার্থক বা প্রতিশব্দের ব্যবহারের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা রয়েছে:
প্রতিশব্দ বা সমার্থক শব্দ বাংলা শব্দভান্ডারকে সমৃদ্ধ করে।
গুরুচন্ডালি দোষমুক্তির প্রয়োজনে সমার্থক শব্দভান্ডার সমৃদ্ধ হওয়া প্রয়োজন।
গাম্ভীর্যপূর্ণ বক্তব্য প্রদান-যথাযথ প্রতিশব্দ বা সমার্থক ছাড়া সম্ভব নয়।
মনের ভাব প্রকাশের কাজকে সহজ করে দেয়।
ভাষাশৈলীর অবয়ব গঠনকে বলিষ্ঠ করে।
বাক্য বিন্যাসের ক্ষেত্রে মাধুর্য আনয়ন করে।
সৃজনশীল সাহিত্য সৃষ্টি করে।
প্রতিশব্দ ভাষার সৌন্দর্য ও নান্দনিকতার প্রাণ।
কবিতার উপমা, শব্দ চয়ন ও ভাষার আতিশয্যে গাম্ভীর্যের বিকাশ ঘটায়।
মননশীল সাহিত্য সৃষ্টি ও আধুনিক ধারা বিকাশে সহায়ক।
আরো পড়ুন: একই শব্দের বিভিন্নার্থে প্রয়োগ
সমার্থক শব্দ ও প্রতিশব্দের বাক্যে প্রয়োগ:
অগ্নি সমার্থক শব্দ
১। অনল =’আমি সুখের লাগিয়া এ ঘর বাঁধিনু অনলে পুড়িয়া গেল।’
২। আগুন = মনের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল।
৩। সর্বভুক = সর্বভুক আমাদের নিঃস্ব করে দিল।
৪। শিখা = জ্বেলে দে তোর বিজয় শিখা।
৫। দহন = দহনে পুড়িল হৃদয় দেখিল না কেউ।
আকাশ সমার্থক শব্দ
১। আসমান = ‘নীল সিয়া আসমান লালে লাল দুনিয়া।’
২। গগন = গগনে গরজে মেঘ ঘন বরষা।
৩। নভোঃ = মহাকাশচারীরা ঐ দূর নভেঃ ছুটে চলে।
৪। অন্তরীক্ষ = অন্তরীক্ষে শুনি কার বাণী।
৫। অম্বর = অম্বরে এখন মেঘের ঘনঘটা।
ইচ্ছা সমার্থক শব্দ
১। অভিপ্রায় = তোমাকে দেখার অভিপ্রায়ে গিয়েছিনু সন্দ্বীপ।
২। বাসনা = এ জীবনে অনেক বাসনাই অপূর্ণ রয়ে গেল।
৩। সাধ = বড় সাধ জাগে একবার তোমায় দেখি।
৪। আগ্রহ = পড়াশোনায় ছেলেটির মোটেই আগ্রহ নেই।
৫। অভিরুচি = মাংসের প্রতি তার অভিরুচি নেই।
ঈশ্বর সমার্থক শব্দ
১। আল্লাহ = আল্লাহ তোমায় দীর্ঘজীবী করুন।
২। খোদা = খোদা তোমার সহায় হোন।
৩। বিধাতা = এই পৃথিবীতে বিধাতা অসংখ্য প্রাণী সৃষ্টি করেছেন।
৪। ভগবান = হে ভগবান রেখ মোর মিনতি।
৫। স্রষ্টা = স্রষ্টার সৃষ্টি রহস্য বোঝা বড় দায়।
উত্তম সমার্থক শব্দ
১। উৎকৃষ্ট = ব্যাকরণ বইটি নিঃসন্দেহে উৎকৃষ্ট মানের।
২। ভালো = জব্বার সাহেব বড় ভালো মানুষ ছিলেন।
৩। উপাদেয় = শিশুদের বৃদ্ধির জন্য উপাদেয় খাবার দরকার।
৪। শ্রেষ্ট = ‘গীতাঞ্জলি’ রবীন্দ্রনাথের শ্রেষ্ট কাব্যগ্রন্থ।
৫। বরেণ্য = শামসুর রহমান দেশবরেণ্য কবি।
কলহ সমার্থক শব্দ
১। ঝগড়া = ঝগড়া করা গর্হিত কাজ।
২। বিবাদ = ছাত্রদের বিবাদ মেটাতে প্রধান শিক্ষক এগিয়ে এলেন।
৩। বিরোধ = দুই নেত্রীর বিরোধ ক্রমশই ধ্বংসাত্নক রুপ নিচ্ছে।
৪। কোন্দল = অভ্যন্তরীন কোন্দল দলের ভিতকে দুর্বল করে তোলে।
৫। দ্বন্দ = কাদম্বিনী ও হেমাঙ্গিনীর মধ্যকার দন্দ্ব ক্রমেই বৃদ্ধি পেতে থাকল।
কুল সমার্থক শব্দ
১। বংশ = পাত্রের অজস্র টাকা- পয়সা থাকলেও বংশ মর্যাদা ভাল নয়।
২। গোত্র = গোত্রপ্রীতি প্রাক-ইসলামি যুগে আরবদের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল।
৩। কৌলীন্য = হিন্দুদের কৌলীন্য প্রথা এ যুগে অচলপ্রায়।
৪। আভিজাত্য = করিম সাহেবের আভিজাত্যবোধ বলতে কিছু নেই।
৫। জাতি = বাঙালিরা বীরের জাতি।
গৃহ সমার্থক শব্দ
১। ঘর = আমার এ ঘর ভাঙ্গিয়াছে যেবা আমি বাঁধি তার ঘর।
২।আবাস = পৃথিবী মানুষের জন্য স্থায়ী আবাস নয়।
৩। নিকেতন = রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজড়িত শান্তি নিকেতন একটি প্রসিদ্ধ স্থান।
৪। সদন = মাতৃসদন ছেড়ে তখন তারা রাস্তায় নামল।
৫। ধাম = এ ধরাধাম ছেড়ে একদিন সকলকেই চলে যেতে হবে।
চন্দ্র সমার্থক শব্দ
১। শশী = চেয়ে দেখ পূর্বাকাশে পূর্ণিমার শশী।
২। চাঁদ = মেঘের আড়ালে চাঁদ লুকোচুরি খেলছে।
৩। সুধাকর = এই নিশীথে সুধাকর জেগে আছে।
৪। নিশাপতি = নিশাপতি তুমি কেন এতই শোভন।
৫। চন্দ্রিমা = হে চন্দ্রিমা এই রাতের সাক্ষী থেকো ।
জল সমার্থক শব্দ
১। পানি = এখন বর্ষাকাল, চারদিকে পানি থৈ থৈ করছে।
২। বারি = বর্ষার বারি ধারার সাথে সাথে নদ-নদী খরবেগে প্রবাহিত হয়।
৩। সলিল = লঞ্চডুবিতে প্রায় চারশ লোকের সলিল সমাধি হলো।
৪। পয়ঃ = এই শহরের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ভাল না।
৫। নীর = কৃষ্ণ চলে যাওয়ায় রাধা নীরে ভেসে চলেছে ।
ধন সমার্থক শব্দ
১। অর্থ = অর্থ সকল অনর্থের মূল।
২। দৌলত = দৌলতের মোহ কজনে ত্যাগ করতে পারে?
৩। টাকাকড়ি = চাই না আমি টাকাকড়ি, দাও শুধু সুখ।
৪। সম্পদ = দুটি হালের গরু, বিঘা তিনেক জমি এই তার সম্পদ।
৫। বিত্ত = বিত্তের মোহ লোকটিকে অন্ধ করে রেখেছে।
আরো পড়ুন: Word বা শব্দ কাকে বলে? উদাহরণ দাও, Language কাকে বলে, Letter কাকে বলে উদাহরণ দাও
পর্বত সমার্থক শব্দ
১। পাহাড় = জীবন চলার পথে শত বাধার পাহাড় অতিক্রম করতে হয়।
২। গিরি = দুর্গম গিরি পথ অতিক্রম করে আমরা তিব্বত পৌঁছালাম।
৩। শৈল = মহাপ্রলয়ের সময় শৈলসমূহ তুলার ন্যায় উড়তে থাকবে।
৪। ভূধর = ভূধর ফেটে উঠবে জল, ঘর বাড়ি সব করবে তল।
৫। অচল = অচল শিখর ছোট নদীটিরে চিরদিন রাখে স্মরণে।
পৃথিবী সমার্থক শব্দ
১। ধরা = প্রাচুর্যের দম্ভে অনেকেই ধরাকে সরাজ্ঞান করে।
২। বিশ্ব = বাংলা ভাষার খ্যাতি এখন বিশ্বময়।
৩। বসুমতি = ‘বসুমতি কেন তুমি এতই কৃপণা?’
৪। ধরণী = হযরত মুহাম্মদ (স) এই ধুলার ধরণীতে জম্ন নিয়েছিলেন।
৫। ভুবন = ’মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে।’
মৃত্যু সমার্থক শব্দ
১। মরণ = মরণ আমায় ডাক দিয়েছে যেতে হবে ভাই।
২। নিপাত = সন্ত্রাসী নিপাত যাক।
৩। নিধন = বর্বর পাকবাহিনীরা নিরস্ত্র বাঙালিদের নির্বিচারে নিধন করেছে।
৪। চিরবিদায় = সুন্দর এ পৃথিবী ছেড়ে একদিন আমাদের সবাইকে চিরবিদায় নিতে হবে।
৫। পরলোকগমন = কবি নজরুল ইসলাম ১৯৭৬ সালে পরলোকগমন করেন।
সমুদ্র সমার্থক শব্দ
১। সিন্ধু = ঐ মহাসিন্ধুর ওপার থেকে কি সুর যে ভেসে আসে।
২। সাগর = ‘দেখবে তোমার কিস্তি আবার ভেসেছে সাগর জলে।
৩। পারাবার = কেমনে লঙিঘব আমি মহা পারাবার।
৪। জলধি = জলধির রাশি রাশি ঢেউ তীরে আছড়ে পড়ছে।
৫। পাথার = এই মহা পাথার একদিন আমরা পার হবই।
সূর্য সমার্থক শব্দ
১। দিনমণি = দিনমণি ডুবে গেল মেঘের আড়ালে।
২। রবি = সকালে সোনার রবি পূর্ব দিকে ওঠে ।
৩। প্রভাকর = প্রভাকর দেয় আলো দিনমান ভরে।
৪। ভানু = তেজোদীপ্ত ভানুর আলো কৃমশ ক্ষীণ হয়ে আসছে।
৫। ভাস্কর = পূর্বাকাশে উঠেছে ভাস্কর চেয়ে দেখ ঐ ।
0 Comments
Thank you for your message, I see all your messages, it is not possible to reply many times due to busyness, I hope I will reply to everyone in time, thank you for being with me. Thanks you watching my content. Please like, Follow, Subscribe.