৩২ বছরের তরুণ মিল্টন সমাদ্দার। বৃদ্ধ খুঁজে বেড়ানোই যার নেশা। বৃদ্ধদের খোঁজে কখনো ঘুরে বেড়ান চট্টগ্রাম, বরিশাল নারায়ণগঞ্জ কখনোবা খুলনা। সেখানে ঘুরে ঘুরে রাস্তা থেকে অসুস্থ অসহায় বৃদ্ধদের পরম মমতায় বুকে তুলে নেন তিনি। একবিংশ শতাব্দীতে এসে দেখা যায় মানুষজন বড্ড আধুনিক। এই আধুনিকতার দোহাই দিয়ে, সভ্যতার মুখোশ মুখে লাগিয়ে, তারা ভুলে যাচ্ছে নিজের শিকড়; মা, মাটি ও মানুষের কথা। পুঁজিবাদী বিজ্ঞাপনের মোহে ভেঙে যাচ্ছে শতবছরের পুরাতন পারিবারিক বন্ধন। একান্নবর্তী পরিবারগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। সমাজে দেখা দিচ্ছে নানাবিধ দ্বন্ধ। বাড়ছে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা। সন্তান ভুলে যাচ্ছে নিজের মায়ের কথা, বাবার কথা। মানবতা বিপন্ন হচ্ছে প্রতিনিয়ত। নৈতিকতা ও মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণে নানাবিধ সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। বৃদ্ধ বাবা-মাকে রাস্তায় রেখে চলে যাচ্ছে পাষাণ সন্তান। তাঁদের জীবনের আকুলিবিকুলি বুঝতে চায় না কেউ, তাঁদের আনন্দের জীবনে নেমে আসে অন্ধকার, জীবন হয়ে ওঠে নিরানন্দ। জনক-জননীর আর্তনাদ-হাহাকারে পৃথিবী হয়ে ওঠে নিস্তব্ধ। ব্যক্তিগত বোধের অভাব ও জীবন সম্পর্কে ভ্রান্তিকর দর্শনের কারণে সমাজে তৈরি হচ্ছে এধরনের অমানবিক গল্প। এসব গল্প যে কোনো বিবেকবান মানুষের হৃদয়ে সমুদ্র সমান কান্নার ঝড় তুলবে। ঠিক এমন সব সুবিধাবঞ্চিত অসহায়, অসুস্থ, পরিবারহীন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও প্রতিবন্ধী শিশুদের মানবিক অধিকার নিশ্চিত করতে প্রতিষ্ঠিত হয় “চাইন্ড এন্ড ওল্ড এইজ কেয়ার”। যেখানে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা এবং বিনোদনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শরীরে পোকা-মাকড়ের বাসা। মাটি খেয়ে ফেলেছে শরীরের বিভিন্ন অংশ। বয়সের ভারে ন্যুব্জ। ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছিলেন শান্তি বেগম। কয়েক দিন আগে রাজধানীর মিরপুরের একটি ডাস্টবিনের পাশে পড়েছিলেন মৃত্যু পথযাত্রী এই বৃদ্ধা। খবর পেয়ে মানবিক ডাকে সাড়া দিতে ছুটে যায় চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারের কর্মীরা। এই আশ্রমের কর্মীদের নিরলস সেবায় এরই মধ্যে বৃদ্ধা শান্তি বেগম অনেকটা সুস্থ। শুধু শান্তি বেগমই নয়, তার মতো পরিবারহীন, অজ্ঞাত, অসহায় ও রাস্তায় পড়ে থাকা তিন সহস্রাধিক বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও শিশু এখন পর্যন্ত সেবা পেয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির আশ্রয়ে রয়েছেন 130 বৃদ্ধ ও 18জন শিশু। এখন পর্যন্ত অজ্ঞাত শতাধিক ব্যক্তির দাফন করেছে এই প্রতিষ্ঠান। মানবসেবায় প্রায় এক দশক ধরে কাজ করে যাচ্ছেন এর প্রতিষ্ঠাতা মিল্টন সমাদ্দার। শুরুর গল্প মিল্টন সমাদ্দার ২০১৪ সালের ২১ অক্টোবর বৃদ্ধাশ্রমটি প্রতিষ্ঠা করেন। যিনি পেশায় একজন নার্স। ২০১৪ সালে রাজধানীর কল্যাণপুর পাইকপাড়ায় (বাড়ি-৪৬২, সড়ক-০৮ দক্ষিণ পাইপাড়া) ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ প্রতিষ্ঠা করেন। অবশ্য এটি প্রতিষ্ঠার পেছনে আছে এক মানবিক গল্প। একদিন কাজ সেরে বাসায় ফিরছিলেন মিল্টন সমদ্দার। রাস্তার পাশে এক বৃদ্ধের দুই পায়ে ব্যান্ডেজ বাঁধা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন তিনি। কোন কিছু না ভেবেই মিল্টন তাঁকে সঙ্গে করে নিয়ে এলেন নিজের বাসায়। নিজ হাতে গোসল করালেন। পরিষ্কার জামা-কাপড় পরিয়ে খাওয়ালেন। পরিচয়হীন বৃদ্ধাকে পরম যত্নে মরণাপন্ন অবস্থা থেকে সুস্থ করে তোলেন। কিন্তু অসহায় বৃদ্ধের যাওয়ার কোনো জায়গা না থাকায় তাঁকে আশ্রয় দিলেন মিল্টন। সেই থেকে শুরু। এখন প্রায় এক দশক হতে চলল। বর্তমানে এমন শতাধিক বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও শিশুর আশ্রয় হয়েছে দেশের ব্যতিক্রমী এ প্রতিষ্ঠানে। পরম শ্রদ্ধায় চিরবিদায় আমাদের সমাজে এমন অনেকেই আছে যাদের পরিবার থাকার পরও চিরবিদায় বেলায় তারা অজ্ঞাত। পরিবারহীন, অসহায় ও অজ্ঞাত শতাধিক ব্যক্তিকে মৃত্যুর পর যথাযথ সম্মানের সঙ্গে কবরস্থ করেছে এই প্রতিষ্ঠান। জানা যায়, শুধু ফেব্রুয়ারি মাসেই মৃত্যুবরণ করেছে ৫ জন ব্যক্তি। এদের কারও পরিচয় জানা যায়নি। সবার মতো এই বৃদ্ধদেরও প্রত্যাশা ছিল মৃত্যু হবে আপন গৃহে, স্বজনদের কাছে। কিন্তু এই বৃদ্ধদের স্বপ্ন স্বজনরা পূরণ না করলেও এই ব্যক্তিদের জীবনের শেষ ইচ্ছা পূরণ করছে দেশের ব্যতিক্রমী এই প্রতিষ্ঠান। মাদ্রাসা শিক্ষা কার্যক্রম পরিবারহীন কুড়িয়ে পাওয়া শিশু এবং শিক্ষাবঞ্চিত শিশুদের নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে গেল ডিসেম্বরে চালু করেছে মাদ্রাসা শিক্ষা কার্যক্রম। প্রতিষ্ঠানটির আশ্রয়ে বর্তমানে 18টি শিশু রয়েছে। এদের মধ্যে মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ শিশুরা শিক্ষার আওতায় এসেছে। শিশু রাতুল ও তায়্যেবা এরই মধ্যে শিখেছে বেশ কয়েকটি সূরা। চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারের পাশাপাশি স্থানীয় ৭১টি শিশু শিখছে ধর্মীয় শিক্ষা। কীভাবে চলে এই আশ্রম? ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে উঠা দেশে বৃহৎ এই আশ্রমে প্রতি মাসে খরচ হয় 20 লাখ টাকা। কিন্তু কীভাবে ম্যানেজ হয় এত টাকা? জানতে চাইলে পরিচালক মিল্টন সমাদ্দার জানান, তিনি ও তার স্ত্রী দু’জনেই পেশায় নার্স। এছাড়া ‘মিল্টন হোম কেয়ার প্রাইভেট লি:’ নামে তাদের একটি নার্সিং এজেন্সি আছে। যেখানে বাড়ি বাড়ি গিয়ে অসুস্থ বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের সেবা দেয়া হয়। প্রথমদিকে তাদের উপার্জিত অর্থ দিয়েই চলত আশ্রমটি। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আশ্রমে অসহায় বৃদ্ধ ও শিশুদের সংখ্যা বাড়ছে। ফলে খরচও বেড়েছে কয়েকগুণ। তবে মানবিক এ কাজে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন বহু মানুষ। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির ফেসবুক পেজ এবং প্রতিষ্ঠাতা মিল্টন সমাদ্দারের ফেসবুক পেজ মিলে ৫০ লাখ ফলোয়ার ছাড়িয়েছে। বর্তমানে এই ফেসবুক পেজের মাধ্যমেই দেশ ও দেশের বাইরে থেকে অনেকেই সহযোগিতা করেন। তবে করোনার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশের বৃহৎ এই আশ্রম বিভিন্ন সংকটের মধ্যদিয়ে কার্যক্রম চলমান রেখেছে। মানবিক এ কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে এবং মানুষকে মানুষের মতো ভালোবাসতে সবার এগিয়ে আসা জরুরি বলে মনে করেন আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা মিল্টন সমাদ্দার। মিল্টন সমাদ্দার, অসহায় ও আশ্রয়হীন বৃদ্ধ খুঁজে বেড়ানোই যার কাজ, যার উদ্যোগে বদলে গেছে টিপু ,মরিয়ম, রিতা সহ সালেমের মতো এমন দুই শতাধিক অসহায় বৃদ্ধদের জীবন যাপনের চিত্র।একদিন পথের পাশে কারও বৃদ্ধ বাবাকে তিনি দেখেছিলেন দুই পায়ে ব্যান্ডেজ বাঁধা পরিত্যক্ত অবস্থায়। সেই বাবাকে তিনি নিজ বাড়িতে এনে দুই পায়ের চিকিৎসা করে মরণাপন্ন অবস্থা থেকে সুস্থ করেছিলেন। কিন্তু সেই বৃদ্ধের যাওয়ার কোনো জায়গা ছিল না। নানা সীমাবদ্ধতার মাঝেও বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের ব্যালান্সড ডায়েটের আয়োজন করার ব্যাপারে সেবাকর্মীদের আগ্রহ অনেক। না পারার আক্ষেপ প্রচুর। রাস্তার পাশ থেকে তুলে আনা বৃদ্ধ–বৃদ্ধারা অভ্যস্ত ছিলেন রুটি, কলা আর চা–তে। তাঁদের সঠিক ডায়েটে ফেরানো শ্রমসাধ্য। টাকার স্বল্পতা কাজটাকে অনেক কঠিন করেছে। সেবাকর্মীরা মেডিকেল প্রফেশনাল হওয়ায় প্রায় হাসপাতালের কাছাকাছি লেভেল চিকিৎসার ব্যবস্থার চেষ্টা করেন তাঁরা। দেখলাম প্রথম রুমটিতে প্রয়োজনীয় ওষুধ। সঙ্গে বৃদ্ধদের বিছানা। যার মাথার সাইড উঁচু করা যায়। যাতে খাদ্য শ্বাসনালিতে না পৌঁছায়। পাশে ওয়াকার রাখা। দুর্বল রোগীদের হাঁটানো বা শরীরচর্চা করানোর জন্য। ক্যাথেটারের মাধ্যমে সুস্থ রাখা বা মাসে একবার রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা তো আছেই। অনেক সময় বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা পড়ে গিয়ে জখম বা মারা যেতে পারেন। এ রকম অনেক পরিস্থিতি তাঁরা সামলান হাসপাতালের মতো করেই। দেখলাম যে শিশুরা আছে তাদের দুজন মানসিক প্রতিবন্ধী। বাকি দুই শিশুর এক শিশুকে ডাস্টবিনে পাওয়া গেছে। অপর শিশুকে মা হাসপাতালে ফেলে গেছেন। তাদের স্ট্রলারে বাইরে রোদে নিয়ে আসা হয়েছে। মানসিক প্রতিবন্ধী দুজন হয়তো সারা জীবন এখানেই থাকবে পরম মমতায়। বাকি দুজন বড় বা স্বাবলম্বী হওয়া পর্যন্ত। আরও জানলাম, অনেক সময় হারানো শিশুকে পুলিশ এখানে দিয়ে যায়। পরে মা-বাবা এসে সেই শিশুদের নিয়ে যান খোঁজ পেয়ে। মিল্টন সমাদ্দার ও অন্য সেবাকর্মীরা মিলে ব্যবসা করে যে টাকা আয় করেন, তার কিছু অংশ নিজেদের জন্য রেখে বাকি অর্থ এ সংস্থা চালাতে দান করেন। এই অর্থ দিয়েই বৃদ্ধাশ্রমের আসল ব্যয়ভার বহন করা হয়, আর আছে কিছু মানুষের সাহায্য। মিল্টন সমাদ্দার ও সেবাকর্মীরা সবাই নার্স। তাঁরা টাকার বিনিময়ে বাসায় গিয়ে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের সেবা দিয়ে আসেন। এটাই তাঁদের ব্যবসা। এই বৃদ্ধাশ্রমে শুধু যাঁদের কেউ নেই, তাঁরাই থাকতে পারেন। তাঁদের আরেকটু আলো–বাতাস ভরা জায়গা, আরও চিকিৎসাসেবা বা খাবারের জন্য অর্থ প্রয়োজন। বৃদ্ধ বয়স কার কেমন যাবে, কে জানে। এই ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের মতো পথ দেখানো মানুষগুলোর পাশে আমাদের সবার দাঁড়ানো জরুরি। #প্রতিষ্ঠা: ২০১৪ সালের ২১ অক্টোবর একজন বৃদ্ধাকে আশ্রয় দেওয়ার মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে “ চাইন্ড এন্ড ওল্ড এইজ কেয়ার” আশ্রম। #নিবন্ধনঃ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সমাজসেবা অধিদপ্তর ঢাকা জেলা কর্তৃক নিবন্ধিত। নিবন্ধন নম্বরঃ ঢ-০৯৬৬১। #উদ্দেশ্যঃ সমাজের অসুস্থ, অসহায়, পরিবারহীন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও প্রতিবন্ধী শিশুদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা। পাশাপাশি জীবনবোধ ও আত্মসচেতনতা সর্ম্পকে সঠিক শিক্ষা প্রদান করা। বিশেষ করে পরিবার বঞ্চিত বৃদ্ধ ও শিশুদেও স্বাভাবিক জীবন নিশ্চিত করতে “চাইন্ড এন্ড ওল্ড এইজ কেয়ার” অঙ্গীকারবদ্ধ। #আয়ের উৎসঃ “চাইন্ড এন্ড ওল্ড এইজ কেয়ার“ সম্পূর্ণ অলাভজনক একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের ছোট ছোট দান এবং আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা মিলটন সমদ্দারের ব্যক্তিগত অংশগ্রহণই আয়ের প্রধান উৎস। মিলটন সমাদ্দার তাঁর ব্যক্তিগত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান “মিলটন হোম কেয়ার প্রাঃ লিঃ“-এর আয় থেকেই এই কাজ করছেন। #প্রতিষ্ঠাতার কিছু কথাঃ মিলটন সমাদ্দার প্রতিষ্ঠাতা, চাইল্ড এন্ড ওল্ড এইজ কেয়ার। ছোটবেলা থেকেই মানুষের প্রতি দরদ কাজ করত। মানুষের কষ্ট আমার সহ্য হতো না। বিশেষ করে রাস্তার পাশে মানুষদের পড়ে থাকলে, দেখতে খুব কষ্ট হতো। ভাবতাম যতি তাদের জন্য কিছু করতে পারতাম। এক সময় সাহস করে শুরু করলাম। একজন বৃদ্ধাকে তুলে এনে বাসায় আশ্রয় দিলাম। সেই থেকেই শুরু। মানে ২০১৪ সালে অনুষ্ঠানিকভাবে চাইন্ড এন্ড ওল্ড এইজ কেয়ারের যাত্রা। স্বপ্ন দেখতে শুরু করলাম এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অসহায়, অসুস্থ বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও প্রতিবন্ধী শিশুদের আশ্রয় দিব। পরিচয়হীনরা পরিচয় পাবে। ঘরহারা মানুষ পাবে নিরাপদ ঘর। বঞ্চিতরা পাবে সেবা। মহান আল্লাহ আমাকে সেই তাওফিক দান করেছেন। এটা প্রতিপালকের অসীম কৃপা। কে সেবা দিবেন আর কে সেবা গ্রহণ করবেন তিনিই একমাত্র নিয়ন্ত্রক। একক উদ্যোগে একটি মানসম্পন্ন বৃদ্ধাশ্রম কেন্দ্র পরিচালনা করা একেবারেই অসম্ভব। মহান আল্লাহর অনুগ্রহে ও আপনাদের সহযোগিতায় এ পর্যন্ত ৬০০জন অসহায়, অসুস্থ, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও প্রতিবন্ধী শিশুদের নিরাপদ আশ্রয়সহ মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে পেরেছি। এছাড়া বার্ধক্যজনিত কারণে ইতোমধ্যে ২০৫জন বয়স্ক ব্যক্তি ইন্তেকাল করেছেন। তাদেরকেও যথাযথ সম্মানের সাথে বিদায় জানাতে পেরেছি। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলো, বর্তমানে আমার এই আশ্রমে ঠাঁই হয়েছে অনেক শিক্ষক, ব্যবসায়ী, নার্স ও ডাক্তারসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের। তবে আশার বাণী হলো, আশ্রয় নেওয়া অনেক বাবা-মাকে আমার তাদের পরিবারের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি। বর্তমানে আশ্রমটিতে 130জন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও ২৫টি শিশুর আশ্রয় হয়েছে। আশ্রমটিতে নিরাপদ খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, নিরাপত্তা ও বিনোদনসহ অন্যান্য সকল সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা রয়েছে। এটি অলাভজনক একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। আমরা চাই না কোন মানুষকে অসহায় হয়ে বৃদ্ধাশ্রমে আসুক কিংবা কোন বৃদ্ধাশ্রম গড়ে উঠুক। কেননা এটা অমানবিক এবং দেশের জন্য লজ্জাজনক। মানুষ কখনো রাস্তায় থাকতে পারে না। পরিবারবঞ্চিত কিংবা স্বজনদের অবহেলার শিকার হয়ে যারা ঘরহারা হয়েছে, অসুস্থ অবস্থায় দিনের পর দিন রাস্তায় পড়ে আছে, এই দায় কার? নিশ্চিতভাবে বলতে পারি ব্যক্তি থেকে শুরু করে সমাজ ও রাষ্ট্র সবাই দায়ী। দেখুন, এই বৃদ্ধ বাবা-মায়েরাই তো আমাদেরকে এই পৃথিবীর আলো দেখিয়েছেন। কিন্তু আজ তারা....! অন্তত আমি চাই না আর একজন বাবা-মা এভাবে পরিবারহীন হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকুক। এই সকল অসহায় বৃদ্ধ- বৃদ্ধাদের পরিবার পরিজন আছে কি না আমি জানি না। বার্ধক্যজনিত কারণে তারা বিভিন্ন কঠিন রোগে আক্রান্ত। বিভিন্ন স্থানে নিগৃহীত অসহায়ভাবে নিদারুণ কষ্টে পড়ে থাকা মানুষগুলোর মাথাগোঁজার একটা ব্যবস্থা মহান আল্লাহ্ আমাকে দিয়ে করিয়েছেন। এটা মহান আল্লাহ্ করুণা। চাইল্ড এন্ড ওল্ড এইজ কেয়ারের আশ্রয়ে থাকা শতাধিক অসহায় ব্যক্তিদের সেবা করা আমাদের সবার দায়িত্ব। আমি শুধু উদ্যোগ নিয়েছি, এগিয়ে আসতে হবে সবাইকে। কেননা আমার একার পক্ষে এতো বড় কাজ করা সহজ নয়। বর্তমানে মাসে খরচ হয় প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা। আমার উপার্জনের বড় একটা অংশ এবং আপনারদের সহযোগিতায়ই মানবিক এই কাজ চলছে। তবে আমার স্বপ্ন একদিন আমাদের নিজস্ব ভবন হবে। যেখানে আশ্রয় পাবে পাঁচশ থেকে এক হাজার অসহায় ব্যক্তি। সবার সক্রিয় সহযোগিতার জীবনের শেষ সময়গুলো ভালোভাবে বাঁচতে পারবে এই বাবা-মায়েরা। বিশ্বাস করি, ঘরহারা হয়ে কোন বাবা-মা ও শিশুকে রাস্তায় পড়ে থাকতে হবে না। জীবনের শেষ সময়গুলো তারা অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা বেঁচে থাকতে পারবেন। আমার এই কাজে সাবির্কভাবে সহযোগিতা করছেন আমার স্ত্রী নার্স মিঠু হালদার। আপনার সবাই আমাদের দোয়া করবেন। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যেন কেয়ামত পর্যন্ত মানুষের সেবা কাজ করে যেতে পারি। ২০১৪ সালে হঠাৎ করেই চিন্তা আসল হাজার লক্ষ অসহায় অসুস্থ অভিভাবকহীন অসুস্থ বৃদ্ধ বৃদ্ধা বাবা মা রাস্তার পাশে ময়লার ডাস্টবিনে নালা নর্দমায় পরে আছে। এই সকল বৃদ্ধ বাবা মাদের মাঝ থেকে যদি একজন বাবা মায়ের জীবনের শেষ সময়টাতে যদি একটু ভালো রাখা যায়! তাহলে মন্দ কি? সেই চিন্তা থেকেই দীর্ঘ পথ চলা শুরু। এই পথে অসহায় বৃদ্ধ বাবা মাদের সামান্য একটু সাহায্য সহযোগিতা করতে এসে শত হাজার বার যে বাধা বিপত্তি সমস্যা বিপর্যয় সম্মুখীন হয়েছি। বিভিন্ন সমস্যার সাথে লড়াই করে শেষ হতে আবারও সমস্যা পরেছি। তবুও হাল ছাড়ছি না। প্রতিনিয়ত শত শত বাবা মাদের সন্তান পরিবার প্রিয়জন দ্বারা অবহেলা কষ্ট নির্যাতনের আহাজারি শুনে যাচ্ছি। চিন্তা করলাম, আর না, আর একজনের চিন্তা না। একজন বা দশজনের চিন্তা না। এখন শত হাজার অসুস্থ অভিভাবকহীন অসুস্থ বৃদ্ধ বৃদ্ধা বাবা মায়ের জন্য চিন্তা করতে হবে। শত হাজার অসুস্থ অভিভাবকহীন অসুস্থ বৃদ্ধ বৃদ্ধা বাবা মাদের আশ্রয় দিতে হলে নিজস্ব জমি আবাসস্থল ও কবরস্থান খুব বেশি প্রয়োজন ছিলো। আজ সৃষ্টকর্তার দয়ায় আর আমার হৃদয়বান শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহযোগিতায় দেখতে দেখতে সমস্ত কিছুর ব্যবস্থা হয়ে গেছে। নিজস্ব জমি ক্রয় করা হয়েছে, আবাসস্থলের জন্য বিদ্যুৎ পানির ব্যবস্থা হয়েছে। বাড়ি নির্মাণের কাজ প্রক্রিয়াধীন। আজ অভিভাবকহীন অজ্ঞাত মৃত বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের শেষ বিদায়ের জন্য পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন একখন্ড জমি ক্রয় ও রেজিস্ট্রেশন করলাম। কবরস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। (#আলহামদুলিল্লাহ) তবে আজকে এসে মনে হচ্ছে আমার চেষ্টার সফলতার মুখ একদিন দেখবেই। একা পথচলা শুরু করেছিলাম। তবে আজ লক্ষ হৃদয়বান মানুষ আমার পাশে ছায়া হয়ে আমাকে তাদের সাধ্যমত সহযোগিতা করছে। সকলের সাধ্যমত ছোট ছোট্ট সহযোগিতায় দিয়েই চাইল্ড এন্ড ওল্ড এইজ কেয়ার শত হাজার অসুস্থ অভিভাবকহীন অজ্ঞাত বৃদ্ধ বৃদ্ধা বাবা মাদের রাস্তার পাশে ময়লার ডাস্টবিনে নালা নর্দমায় থেকে তুলে এনে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করছি একই সাথে জীবনের শেষ বিদায় মৃত ব্যক্তিদের দাফন কাফনের দায়িত্ব নিয়েছি। #আন্তরিকতার সাথে হাত জোর করে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি সৃষ্টিকর্তা ও আমার সকল স্যার ম্যাডাম প্রিয়জন শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাজে। Milton Samadder বিঃ দ্রঃ কোনো ব্যক্তি নিজ পরিবারের কোন সদস্যকে উক্ত বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাতে বা রাখতে পারবেন না। √√ বিস্তারিত জানতে- Milton Samadder +৮৮ ০১৬২০ ৫৫৫ ২২২ +৮৮ ০১৬২৬ ৫৫৫ ২২২ √√ সরাসরি বৃদ্ধাশ্রম ভিজিট করুন- বৃদ্ধাশ্রম -হাউস#৪৬২, রোড#০৮ দক্ষিণ পাইকপাড়া, কল্ল্যানপুর, মিরপুর, ঢাকা ১২১৬। (প্রত্যাশা বেকারীর পিছনে) √√নগদ সহযোগিতা করতেঃ বিকাশ-01955545333 পেমেন্ট, বিকাশ-01626555222 ব্যক্তিগত, বিকাশ-01615554444 ব্যক্তিগত, নগদ -01615554444 ব্যক্তিগত, রকেট-016155544446 ব্যক্তিগত √√ ব্যাংক একাউন্ট বিস্তারিত তথ্য- Child & Old Age Care. A/C No: 15011200000044. (Premier Bank) Shamoly Branch. √√ নগদ অনলাইনে সাহায্য সহযোগিতা পাঠাতে- https://childandoldagecare.org/support #সরাসরি বৃদ্ধাশ্রম ভিজিট করুন- চাইল্ড এন্ড ওল্ড এইজ কেয়ার বৃদ্ধাশ্রম -হাউস#৪৬২, রোড#০৮ দক্ষিণ পাইপাড়া, কল্ল্যানপুর, মিরপুর, ঢাকা ১২১৬। (প্রত্যাশা বেকারীর পিছনে) Source: Facebook Online google
0 Comments
Thank you for your message, I see all your messages, it is not possible to reply many times due to busyness, I hope I will reply to everyone in time, thank you for being with me. Thanks you watching my content. Please like, Follow, Subscribe.