বাঁশি বুঝি সেই সুরে আর ডাকবে না.....‌ শচীন দেব বর্মণ তাঁর মাথায় হাত বুলিয়ে শুধু বলেছিলেন

বাঁশি বুঝি সেই সুরে আর ডাকবে না.....‌  শচীন দেব বর্মণ তাঁর মাথায় হাত বুলিয়ে শুধু বলেছিলেন

 বাঁশি বুঝি সেই সুরে আর ডাকবে না.....‌

শচীন দেব বর্মণ তাঁর মাথায় হাত বুলিয়ে শুধু বলেছিলেন, “বম্বেতে বাঙালিদের খুব নামডাক। মান রেখো মা।” মান শুধু রাখেন নি,হয়ে উঠেছিলেন ভারত বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী৷ বারো বছর বয়স থেকে গানের টিউশানি করতেন,বাসের পয়সা বাঁচাতে মাইলের পর মাইল হাঁটতেন। গরিব বলে যে বাড়িতে গান শেখাতেন সেখানে তাকে মাটিতে বসতে বলা হতো...পড়ুন সঙ্গীত জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র গীতা দত্তের জীবনের কথা লেখক,প্রাবন্ধিক স্বপন সেনের কলমে..... 'ভালবাসি বাংলা' পেজে৷
ওপার বাংলায় জমিদার পরিবারে জন্ম গীতার। জমিদার দেবেন্দ্রনাথ ঘোষ রায় চৌধুরীর দশ সন্তানের পঞ্চম ছিলেন তিনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ভিটেমাটি ছেড়ে প্রথমে কলকাতা, তারপর সেখান থেকে বম্বে। গেলো জমিদারী আর ঠাঁই হলো বম্বের বস্তি এলাকায়। অবস্থা এতোটাই খারাপ ছিলো যে, বারো বছর বয়স থেকেই গানের টিউশনি করতে হতো। বাসের পয়সা বাঁচাতে মাইলের পর মাইল হাঁটতেন। গরিব বলে যে বাড়িতে গান শেখাতেন সেখানে তাকে মাটিতে বসতে বলা হতো।
তখন মাত্র ১২ বছর বয়স, একদিন বাড়ির বারান্দায় গুনগুন করে গান গাইছিলেন। আর তা কানে এলো পথচলতি বম্বের সুরকার হনুমান প্রসাদের । কথা বলার পর তাকে দিয়ে সিনেমার প্লেব্যাক করানোর সুযোগ খুঁজতে থাকেন।
অবশেষে ১৯৪৬ সালে এলো সেই কাঙ্ক্ষিত সুযোগ। ভক্ত প্রহ্লাদ নামের একটি চলচ্চিত্রে গান করেন প্রথম। তবে সেটা কোরাসে, তাও মাত্র দুলাইন। তবে গীতা তার সংগীতের নতুন পথের খোঁজ পান যখন বাংলাদেশের আরেক বিখ্যাত শিল্পী ও সংগীত পরিচালক শচীন দেব বর্মণ তাকে পরের বছরই দো ভাই ছবিতে প্লেব্যাক করান। এই এক চলচ্চিত্রে নটা গান দিলেন তাঁকে। মাথায় হাত বুলিয়ে শুধু বলেছিলেন, “বম্বেতে বাঙালিদের খুব নামডাক। মান রেখো মা।”
শুরুটা হিন্দি গান দিয়ে করলেও ক্যারিয়ার যখন তুঙ্গে তখন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, নচিকেতা ঘোষ এবং সুধীন দাশগুপ্তের সুরে কিছু গান গেয়েছিলেন, যা মুখে মুখে ফেরে আজও।
শিল্পী হিসেবে যখন তিনি বলিউড মাতাচ্ছিলেন, ঠিক সেই সময়ই তিনি বলিউডের বিখ্যাত পরিচালক, প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার ও অভিনেতা গুরু দত্তের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। গীতার বয়স তখন একুশ আর গুরুর সাতাশ।
ওই সময়ের কথা বলতে গিয়ে গুরু দত্তের ছোট বোন, চিত্রশিল্পী ললিতা লাজমি এক স্মৃতিচারণায় বলেন, “গীতাদিদি তখন বিরাট স্টার। নানা ভাষায় প্রায় ন’শোটা গান গেয়ে ফেলেছেন। গলা তো মধুতে ডোবানো, নিখুঁত নাকমুখ। আমাদের বাড়ি আসতো বিদেশি লিমুজিনে।
ওইদিকে গীতা দত্তের ছোট ভাই মিলন রায় তার স্মৃতিচারণায় বলেন, “১৯৫৩-য় ওই বিয়ে ছিলো ‘বিগেস্ট ওয়েডিং এভার’। দু’মাইল গাড়ির লাইন। বৈজয়ন্তী মালা, নূতন, রফি, লতা, পি সি সরকার, গীতা বালি... কে আসেননি!’’
বিয়ের কিছু দিন পরেই গুরু দত্ত নিজের হোম প্রোডাকশন ছাড়া গীতার অন্যত্র গাওয়া নিষিদ্ধ করলেন। গীতা প্রথমে মেনে নিলেও পরবর্তীতে মেনে নিতে পারেননি।দিনে চার পাঁচ ঘণ্টা রেওয়াজ করতেন। গলা বাঁচানোর জন্য কখনো টক বা আইসক্রিম খেতেন না। বিদ্যুতের গতিতে গান তুলতে পারতেন। দিনে ছ’টা গানও রেকর্ডিং করেছেন, হয়তো প্রতিটা আলাদা ধাঁচের!
সম্পর্কে ফাটল ধরা শুরু হয় যখন গুরু দত্তের সঙ্গে ওয়াহিদা রেহমানের পরিচয় ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠ হতে থাকে। তাদের অন স্ক্রিন বা অফ স্ক্রিন রোমান্স তখন মোটামুটি সবার জানা। গীতা সরে আসেন গুরু দত্তের কাছ থেকে। আনুষ্ঠানিকভাবে বিচ্ছেদ না হলেও, আলাদা থাকতে শুরু করেন। গীতা রিহার্সালে অনিয়মিত হয়ে পড়লেন। আর তখনই আশা ভোঁসলে ধীরে ধীরে গীতার জায়গা দখল করতে লাগলেন।
এদিকে বলিউডে সাফল্য পাওয়ার পরে ওয়াহিদা রেহমান দুরে সরে যেতে থাকেন, ভেঙে পড়েন গুরু দত্ত । ১৯৬৪ সালের ৯ই অক্টোবর রাতে দু’বছরের ছোট্ট মেয়েটাকে বার বার দেখতে চাইছিলেন গুরু। গীতা কিছুতে পাঠাবেন না। পর দিন সকালে পুরো একশিশি ঘুমের ওষুধ খাবার পর চিরঘুমের দেশে চলে যান। বয়স হয়েছিল মাত্র ৩৯ বছর ।
সেদিন সকালে গীতা বারবার ফোন করেছিলেন, তখনও জানতেন না গুরু দত্ত মারা গেছেন। যখন শুনলেন তখন মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেললেন। সুর ছেড়ে তুলে নিলেন সুরা।
১৯৬৭ সালে ‘বধূ বরণ’ ছবিতে নামলেন নায়িকার ভূমিকায় । ‘অনুভব’ ছবিতে তার গাওয়া গান আবারো মুগ্ধ করলো আপামর শ্রোতাকে। এটিই ছিলো সিনেমায় তার গাওয়া শেষ গান।‌
মানসিক বিপর্যয়ের সঙ্গে সঙ্গে আর্থিক সংকটও দেখা দিলো। এ সময়ে তিনি আবার সংগীতের নতুন অধ্যায় শুরু করার কথা ভাবেন। কিন্তু ততদিনে বড্ড দেরি হয়ে গেছে। অর্থের অনটনে এক সময়ে প্রচুর অনুষ্ঠান করেছেন কলকাতায়।
‌ সংকলনে ✍🏻 স্বপন সেন
©ভালবাসি বাংলা

Post a Comment

0 Comments

Update Posts

তালিবানি মুখোশ খুলে ঝাঁঝরা হয়েছিলেন সুস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায় লাভ জেহাদীর, মাধ্যমে ধর্মান্তরিত হয়ে নির্যাতিত হয়েছে ধর্ষিত হয়েছে মারা গেছে এরকম দশটি কাহিনী
স্মার্ট নাগরিক গঠনে গ্রন্থাগারের ভুমিকা রচনা ১০০০ শব্দ
CS, RS, SA, PS, BS জরিপ কি?ভূমি জরিপ বা খতিয়ান চেনার সহজ উপায় জেনে নিন ৫ মিনিটেই জমির আরএস খতিয়ান
Disclaimer
   অজিজন বাঈ  বীরাঙ্গনা #_বিস্মৃত_বীরাঙ্গনা_আজও_অজানা
Top 14 Best Paying CPC/PPC Ad Networks
100% Proof - How to Get Back Suspended YouTube Channel Bangla - 100% Solution
25 Places to Find Free Images Online That You Will Actually Want to Use
পজিটিভ রিভিউ লিখে গুগোল থেকে ইনকাম করুন | পেমেন্ট প্রুফ সহ ভিডিও | Earn money from submit review https://reviews.capterra.com/
Contract Us