শেষমেশ তোমার সাথে আমার কিছুই হলো না। যে স্বপ্ন বুনেছিলাম দু’জনে মিলে, চোখের জলে নাকি

 

শেষমেশ তোমার সাথে আমার কিছুই হলো না। যে স্বপ্ন বুনেছিলাম দু’জনে মিলে, চোখের জলে নাকি

শেষমেশ তোমার সাথে আমার কিছুই হলো না। যে স্বপ্ন বুনেছিলাম দু’জনে মিলে, চোখের জলে নাকি আকাশের নীলে মিলিয়ে গেলো বুঝতে পারলাম না। স্বপ্নের চিলেকোঠার ঘরে আর বাসা বাধা হলো না তোমার-আমার। শেষমেশ কিছু হয়না জানো? শেষমেশ অনেককিছুই হয় না। এই যেমন তোমার আর আমার এক হওয়াটাই হলো না! তুমি আর আমি হয়তো এক হওয়ার জন্য জন্মাইনি। আমি হয়তো আজীবন তোমার পাশে থাকার ভাগ্যটা নিয়ে জন্মাইনি। আমি হয়তো ভবঘুরে হয়ে এই কঠোর, নিষ্ঠুর পৃথিবীর অলি গলিতে হেটে-হেটে প্রেম ছড়িয়ে দেবার জন্য জন্মেছি।

রাতের আকাশের নিচে একসাথে ঘর বাধা হয়নি, হেটে যাওয়া হয়নি দূর, বহুদূর, দিগন্ত থেকে দিগন্তে। জোৎস্না রাতে নৌকোর মাঝে তোমায় চুমু খাওয়া হয়নি। সমুদ্র জয় করা হয়নি। পাহাড় জয় করা হয়নি। পাহাড়ের চূড়ায় তোমায় চুমু খাওয়া হয়নি। অথচ তুমি একদিন বলেছিলে উচুতে উঠলে নাকি চুমু খেতে হয়! আমি অধীর আগ্রহ নিয়ে তোমার আমার পাহাড় জয়ের স্বপ্ন দেখেছিলাম। শেষমেশ আমাদের কোনোকিছুই হয়নি। একসাথে বিজনেস করা হয়নি। একসাথে বিন্দু বিন্দু করে বড় হওয়া হয়নি।
তুমি কি প্রচন্ড ক্যারিয়ার ফ্রিক ছিলে? তেমন মনে হতো মাঝেমধ্যে, এখনো মনে হয়, এখন অনেকটা নিশ্চিতও বটে। মনে পড়ে একদিন তুমি আমায় বলেছিলে আমি নাকি তোমার ক্যারিয়ারের জন্য তোমায় ভালোবেসেছিলাম! আমি প্রচন্ড অবাক হয়েছিলাম, কষ্টে আমার ভাষা হারিয়ে গিয়েছিলো। তোমার বাবার গাড়ি ছিলো তখন, তোমারও হয়তো হবে কোনোদিন! তোমার যেই স্ট্রং ক্যারিয়ার! বাপরে বাপ! গাড়ি-বাড়ি না হয়ে কোথায় যাবে? হতেই হবে। অথচ আমি খুব অল্পতেই জীবনের সব খুশি, সুখ খুঁজেনিয়েছিলাম, জানো? হয়তো জানো না!
আমি বলেছিলাম- আমি খুব বেশি কিছু চাই না। রুক্ষতায় ভরা এই শহরের মাঝে লোকাল বাসে না চড়ে রিক্সায় চড়ার ক্ষমতাটা আমার হলেই আমি খুশি। আর সেই পর্যায়ে আমি নিজেই যেতে পারবো একদিন। তারজন্যে আমার তোমার ক্যারিয়ারের প্রয়োজন হবে না। তোমার টাকারও প্রয়োজন হবে না আমার। একবুক কষ্ট নিয়েও আমি তোমায় ভালোবেসেছিলাম। ওই যে বললাম! আমি এক মহাশূন্য সমান ভালোবাসা নিয়ে জন্মেছি! আমি রুক্ষতার মাঝে ভালোবাসা ছড়িয়ে বেড়াবার জন্য জন্মেছি। তুমি হয়তো অন্যকিছুর জন্য জন্মেছো। তাই শেষমেশ তোমার আর আমার কিছুই হলো না।
তবে আমি আজকাল লোকাল বাসে খুব একটা চড়ি না। রিক্সা, উবার, বন্ধুর বাইক, আমার চলে যায় আরকি। জীবন থেমে থাকে নি, জীবন থেমে থাকে না। জীবন থেমে না থাকলেও তোমার আর আমার সম্পর্কটা থেমে গেছে মহাকাল আগে। তোমার সাথে আমার কিছুই আর হয়নি।
কতকিছুই যে হয়নি তোমার সাথে! সেই হিসেবটাও রাখতে পারিনি। কালের স্রোতে বিলীন হয়েছে কত কি! তবে তোমার সাথে আমার নিয়ম করে সংসারটাই করা হয়নি। কবি-রা হয়তো সংসারী হয়না! কবিরা প্রেমিক হয়, প্রচন্ড প্রেমিক। তোমার বা তোমাদের তথাকথিত সংসারের চাপে কবি-রা হয়তো বাঁচে না। সৃষ্টিকর্তা প্রেম ছড়াতে আমায় বাঁচিয়ে রাখতে চায় খুব। তাই তোমার সাথে আমার কিছুই হয়ে ওঠেনি। কবিদের সংসার বাঁচে বন্ধুত্বের ভালোবাসায়, যেখানে নিয়মেরা ভেঙে গিয়ে নতুন করে গড়ে। হুমায়ূন আর গুলতেকিনের কথা ভাবোতো একবার? এমন কি হয়েছিলো যে তাদের জীবনের শেষটা একসাথে হলো না! নিয়ম ভেঙে হুমায়ূনের জীবনসঙ্গীর খাতায় নাম লেখালো শাওন! কেনো? ভাবো তো!
তোমার সাথে বৃষ্টিতে ভেজা হয়নি। ঘুমন্ত তুমিকে চুপিচুপি দেখার আশা পূর্ণ হয়নি। বেলকনিতে তোমায় আদর করা হয়নি। আরও কত কিছুই যে হয়নি! তোমার সাথে পুরো জীবনটাই কাটানো হয়নি। তোমার সাথে কবির ছোট্ট সংসারটা পাতানো হয়নি।
‘তোমার সাথে আমার শেষমেশ কিছুই হয়নি’
-আ.ব.স. রাজ।
রাত ১টা ৫৮মিনিট।
মঙ্গলবার | ১৯ জুলাই, ২০২২।
আগারগাঁও, ঢাকা।

Post a Comment

0 Comments