বিকেলে মাঠ থেকে খেলে এসে বাড়ি ঢুকতেই মা চোখ রাঙিয়ে বলছে, "হাত পা ধুয়ে পড়তে বস।৬টা বেজে গেছে।"
হাঁটু অবধি জলে ভিজিয়ে সেই ভেজা পায়ে খাটে উঠে বসলাম। মা গজগজ করে বলছে "জলে জল করল.. পা টা মুছেও আসতে পারেনা। যেদিকটা দেখবনা..সেদিক.." মায়ের কথাগুলো মিলিয়ে গেল কোথায়। শাঁখের আওয়াজ আর ধুনোর গন্ধে ঘরটা ছেয়ে গেল।খাটের ওপর আমার পড়ার চৌকিটা রাখলাম। ইতিহাস পড়ব আজ। মুঘল বংশটা আজ পড়তে হবে, কাল মা লেখা নেবে। দুলে দুলে, পাশের বাড়ির মিনুর গলার জোড়ের সাথে পাল্লা দিয়ে চেঁচিয়ে পড়া মুখস্থ করছি। এমন সময় কারেন্ট অফ। কি যে একটা অদ্ভূত মজা হচ্ছে... ঘরের জানলা গুলো সব খোলা.. পর্দাগুলো হাল্কা করে উড়ছে। পর্দা সরিয়ে বাইরেটা দেখলাম.. পুরো মিশ কালো আর ঘরে ঘরে মোমবাতি জ্বলার টিমটিমে আলো। মাঝে মাঝে নিস্তব্ধতা ভেঙে পাড়া মাত করছে রাস্তার কুকুরগুলো। রাস্তার মোড়ের মাথায়, সাইকেলগুলো অন্ধকারে বেশি বেশি করে বেল দিচ্ছে। এমন সময় একটা মোমবাতি নিয়ে ঘরে ঢুকলো মা।
"নে পড় এবার।"- এটা বলবে হয়তো মা...
তাই জানলা থেকে মা বলার আগেই নেমে বসলাম। পাতা ওল্টালাম বইয়ের।
"একেই তো চোখের মাথা খেয়েছিস, তার ওপর এই কম আলোতে পড়লে চোখদুটো যাবে। রেখে দে এখন। কারেন্ট এলে পড়বি।" - ঝাঁঝিয়ে বলে চলে গেল মা... ঠাকুরের কাছে মনে প্রাণে চাইছি আজ যাতে কারেন্ট না আসে। প্রায় ঘন্টা খানেক পর হাতে দুটো প্লাস্টিক নিয়ে ঢুকল বাবা।
"পুরোনো ট্রান্সফর্মারটা গেছে। আজ আর আসবেনা। কাল বেলার দিকে আসবে।" - বলতে বলতে প্যাকেট দুটো মা কে দিয়ে দিল বাবা।
"সে কি গো! জলের তো সমস্যা হবে। কিকরে সকালে সব করব?" - মায়ের মাথায় বাজ ভেঙে পড়ল।
"সে আর কি করা যাবে। আপাতত চপগুলো গরম আছে। সবাইকে দাও। আমাকে অল্প মুড়ি দিও। তেল ছাড়া।"- বলতে বলতে বাথরুমে ঢুকে গেল বাবা।
"এত কে খাবে বলো তো? এখন খেলে রাতের খাবার পেটে ঢুকবে?"- বিরক্তি প্রকাশ করল মা।
"আরে.. সবাই খাব তো। বাবুকে দুটো ফুলুরি দিও। ওর জন্যই আনা।ও খেতে ভালোবাসে।" - গামছায় মুখ মুছতে মুছতে জানালো বাবা।
চৌকিটাতে মোমবাতি থেকে মোমগুলো গলে গলে পড়ে জমাট বেঁধে যাচ্ছে আর আমি স্কেল দিয়ে সেগুলো খুঁটে খাটে ফেলছি।
"মানু......বারান্দায় ভালো হাওয়া দিচ্ছে। আয়... দৌড়বিনা... সামনে বঁটি আছে, দেখে আয়।"- পুরো পাড়া জেনে গেল মা আমাকে "মানু" বলে।
"যাই..."- আহ্লাদি গলায় সাড়া দিয়ে বারান্দায় গেলাম। বাবা মা আর আমি... একসাথে বসে মুড়ি তেলেভাজা খাচ্ছি.. সামনেই বড় পুকুর আর ছোট মাঠ। চাঁদটা দেখা যাচ্ছে জলে। আর কত জোনাকি উড়ছে.. সেই দেখতে দেখতে ফুলুরি খাচ্ছি আমি। শেষ কামড়টা খুব মায়ার হয়। তাই বিটনুনগুলো চেঁটে আসতে আসতে খাচ্ছি। এমন সময় আমার বাটিতে দেখি আরো আধখানা চপের টুকরো।
মা দিয়েছে.. মনের আনন্দে খেতে থাকলাম..
"একটা হজমের ওষুধ দিয়ে দিও ওকে.." - মাকে বলল বাবা ...
তাই আজকাল আলাদা করে হ্যাপি ফাদার্স/মাদার্স ডে উইশ করলে বাবা/মা বেশ অবাকই হয়.. একটু অপ্রস্তুতেও পড়ে যায় বটে!!!
0 Comments
Thank you for your message, I see all your messages, it is not possible to reply many times due to busyness, I hope I will reply to everyone in time, thank you for being with me. Thanks you watching my content. Please like, Follow, Subscribe.