#বাংলাব্যাকরণে #শব্দকাকেবলে
শব্দ কাকে বলে ? উৎপত্তি অনুযায়ী #শব্দ কত প্রকার ও কী কী ? উদাহরণসহ আলোচনা কর।
একটি বা একাধিক বর্ণ মিলিত হয়ে যদি একটি সার্থক অর্থ প্রকাশ করে তবে তাকে শব্দ বলে | যেমন -আকাশ, বাঘ, মমতা ,ওই ইত্যাদি | শব্দ ভাঙলে বা বিশ্লেষণ করলে কতকগুলি বর্ণ পাওয়া যায় | অবশ্য যে শব্দ একটি মাত্র বর্ণে গঠিত সে শব্দ বিশ্লেষণের কোনো প্রশ্নই ওঠে না | যেমন -সমুদ্র ,খই | শব্দগুলিকে যদি একটু ওলোটপালোট করে সাজানো যায় তাহলে তার কোনো অর্থ খুঁজে পাওয়া যায় না | যেমন -দ্রসমু ,ইখ |
উৎপত্তি অনুসারে বাংলা ভাষার শব্দসমূহকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা -
বাংলা ভাষার শব্দভাণ্ডারকে মোট সাতটি ভাগে ভাগ করা যায় |
তৎসম শব্দ :যে সব শব্দ সংস্কৃত থেকে অবিকৃতভাবে বাংলা ভাষায় স্থান লাভ করেছে সেগুলিকে তৎসম শব্দ বলে | যেমন -বন ;মুনি |
অর্ধতৎসম শব্দ:যে সব সংস্কৃত শব্দ বিকৃত রূপে বাংলায় ব্যবহৃত hi সগুলিকে অর্ধতৎসম শব্দ বলে | যেমন -গেরাম (গ্রাম);কম্মো (কর্ম) |
তদ্ভব শব্দ :যা সব শব্দ সংস্কৃত থেকে পরিবর্তনের মাধ্যমে বাংলায় গৃহীত হয়েছে সেগুলিকে তদ্ভব শব্দ বলে | যেমন- কাজ (কার্য-কজ্জ-কাজ )
দেশি শব্দ :যেসব শব্দের উৎপত্তি খুঁজে পাওয়া যাই না তাদের দেশি শব্দ বলে | যেমন-ডাব ;ঢিল
বিদেশি শব্দ:ব্যবসা করতে বিদেশিরা বাংলায় এসেছে |এগুলোকে বিদেশি শব্দ বলে | যেমন -টেবিল ;চা
ভারতের অন্যান্য প্রদেশের শব্দ : যেমন -হরতাল থলি |
সংকর বা মিশ্র শব্দ :তৎসম; তদ্ভব; দেশি ও বিদেশিশব্দের মধ্যে যে কোনো একটি শ্রেণীর শব্দের সঙ্গে ওপর জাতির শব্দ যোগে যেসব নতুন শব্দ তৈরি হয় তাকেই মিশ্র শব্দ বলে | যেমন -জামাইবাবু (তদ্ভব +বিদেশি );হেডপণ্ডিত (ইংরেজি +তৎসম )
Read More:Word বা শব্দ কাকে বলে?
ভাষার মূল সম্পদ তার শব্দ সম্ভার | শব্দ ভান্ডারের সম্মৃদ্ধির উপরেই ভাষার শক্তি নির্ভর করে | বাংলা ভাষার শব্দ ভান্ডার বেশ সমৃদ্ধ | শব্দ কাকে বলে ও তার উৎস বিচারে বাংলা শব্দের শ্রেণী বা জাতি বিচারে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক ইতিহাস অবশ্য আলোচ্য | কারণ সমাজে বসবাসকারী ব্যক্তি সাধারণের ভাষার মধ্যেই সমগ্র জাতির ভাষাতাত্ত্বিক বৈশিষ্টগুলি ফুটে ওঠে | অবস্থা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সময়ের ছাপও গভীরভাবে ভাষায় বিভিন্ন অংশে সুস্পষ্ট হয় | নতুন অবস্থায় নতুন ভাব ও ভাষার সঙ্গে পরিচিত হয়ে দেশ ও জাতি নিজের ভাষায় শব্দভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করে তুলতে থাকে | বহু গ্রহণ ,বর্জন ও সামাজিক অবস্থার পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে বাংলা শব্দভাণ্ডার পূর্ণ হতে থাকে | অনেক ইংরেজি বিদেশি শব্দ কখনো অবিকৃতভাবে কখনো সামান্য পরিবর্তন হয়ে বাংলা ভাষার প্রকাশ করেছে |
গঠনগতভাবে শব্দ কত প্রকার ও কী কী ? উদাহরণসহ আলোচনা কর।
উত্তর : অর্থবোধক ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টিকে শব্দ বলে। যেমন : মা, মাটি, মানুষ ইত্যাদি।
গঠন অনুযায়ী বাংলা ভাষার শব্দসমূহকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা -
১. মৌলিক শব্দ :- যে সব শব্দকে ভাঙলে বা বিশ্লেষণ করলে তার সাথে অর্থ সংগতিপূর্ণ আর কোনো শব্দ পাওয়া
যায় না, সে সব শব্দকে মে․লিক শব্দ বলে। যেমন : হাত, পা, দেশ, সিংহ, মাছ ইত্যাদি।
২. সাধিত শব্দ :- যে সব শব্দকে ভাঙলে বা বিশ্লেষণ করলে তার সাথে অর্থ সংগতিপূর্ণ আরও এক বা একাধিক
শব্দ পাওয়া যায়, সে সব শব্দকে সাধিত শব্দ বলে। যেমন : হাতল (হাত+ল), পায়েল (পা+এল), দেশান্তর
(দেশ+অন্তর), সিংহাসন (সিংহ+আসন), মেছো (মাছ+উয়া) ইত্যাদি। সন্ধি, সমাস, প্রত্যয়, উপসর্গ, দ্বিরুক্তি
ও পদান্তরসহ নানা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এ ধরনের শব্দ গঠন করা হয়।
Read More:সমার্থক শব্দ বা প্রতিশব্দ এবং বাক্যে প্রয়োগ
C. অর্থগতভাবে শব্দ কত প্রকার ও কী কী ? উদাহরণসহ আলোচনা কর।
উত্তর : অর্থবোধক ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টিকে শব্দ বলে। যেমন : আকাশ, বাতাস, সাগর, নদী ইত্যাদি।
অর্থগতভাবে বাংলা ভাষার শব্দসমূহকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা -
১. যৌগিক শব্দ :- প্রত্যয় বা উপসর্গ যোগে গঠিত যে সব শব্দ তার মূল বা প্রকৃতি অনুযায়ী অর্থ প্রকাশ করে, সে
সব শব্দকে যে․গিক শব্দ বলে। যেমন : পাক্ষিক (পক্ষ+ইক), দলীয় (দল+ঈয়), মেছো (মাছ+উয়া)
ইত্যাদি।
২. রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ :- প্রত্যয় বা উপসর্গ যোগে গঠিত যেসব শব্দ তার মূল বা প্রকৃতি অনুযায়ী অর্থ প্রকাশ না
করে ভিন্ন কোনো অর্থ প্রকাশ করে, সেসব শব্দকে রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ বলে। যেমন :-
হস্তী (হস্ত+ইন্) = শুঁড়বিশিষ্ট অতিকায় নিরামিষাশী জš‧বিশেষ
বাঁশি (বাঁশ+ই) = ফুঁ দিয়ে বাজাবার বাদ্যযন্ত্রবিশেষ
ক্সতল (তিল+অ) = তিল, সরিষা, নারকেল প্রভৃতির নির্যাস
পাঞ্জাবি (পাঞ্জাব+ই) = ঢিলে লম্বা ঝুলের জামাবিশেষ।
সন্দেশ (সম্+√দিশ+অ) = ছানা দিয়ে ক্সতরি শুকনো মিঠাইবিশেষ
গবাক্ষ (গো+অক্ষি) = জানালা ইত্যাদি।
সতর্কতা : গবেষণা [√গবেষ্(অন্বেষণ করা)+অন+আ] শব্দটি বিভিন্ন বইয়ে রূঢ়ি শব্দের দৃষ্টান্ত হিসেবে দেয়া
আছে। অথচ যে․গিক শব্দের সংজ্ঞা এবং এ শব্দটির প্রকৃতি ও অর্থ অনুযায়ী এটি যে․গিক শব্দ হওয়ার কথা।
তাই রূঢ় শব্দের উদাহরণ হিসেবে এই শব্দটি পরিহার করা উচিত।
৩. যোগরূঢ় শব্দ :- সমাস নিষ্পন্ন যে সব শব্দ তার সমস্যমান পদসমূহের সম্পূর্ণ অনুগামী না হয়ে বিশিষ্ট কোনো
অর্থ প্রকাশ করে, সে সব শব্দকে যোগরূঢ় শব্দ বলে। যেমন : পঙ্কজ (পঙ্কে জন্মগ্রহণকারীদের মধ্যে শুধু
পদ্মফুল), অনুজ (অনুতে জন্মগ্রহণকারীদের মধ্যে শুধু সহোদর ভাই), জলধি (জলধারণকারীদের মধ্যে শুধু
সমুদ্র), মহাযাত্রা(মহা সমারোহে যাত্রাকারীদের মধ্যে শুধু মৃত্যু পথযাত্রী) ইত্যাদি।
সতর্কতা : বিভিন্ন বইয়ে রাজপুত শব্দটিকে যোগরূঢ় শব্দের দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখা যায়। কিন্তু, এটি সঠিক নয়।
কেননা, রাজপুত (রাজপুতানার অধিবাসী) শব্দটি যেহেতুরাজার পুতদের (পুত্রদের) কাউকেই বুঝাচ্ছে না,
সেহেতু এটি যোগরূঢ় শব্দ নয়। তাই যোগরূঢ় শব্দের উদাহরণ হিসেবে এটি পরিহার করা উচিত। রাজপুতের
মূল শব্দ হিসেবে রাজপুতানা ধরলে এটি যে․গিক এবং এর পূর্বপদ রাজ এবং পরপদ পুত (পুত্র) ধরলে এটি
রূঢ়ি শব্দ হওয়ার কথা।
✓শব্দ গঠন বলতে কী বুঝ ? কী কী উপায়ে বাংলা ভাষায় শব্দ গঠন করা যায়, উদাহরণসহ আলোচনা কর।
উত্তর : ধ্বনির সাথে ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টি যুক্ত হয়ে যে প্রক্রিয়ায় শব্দ গঠিত হয় তাকেই শব্দ গঠন বলে।
বাংলা ভাষায় বিভিন্ন উপায়ে শব্দ গঠিত হতে পারে। যেমন :
১. উপসর্গ যোগে :- ধাতু বা শব্দের পূর্বে যে সব ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টি যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে সে সব ধ্বনি
বা ধ্বনিসমষ্টিকে উপসর্গ বলে। এই উপসর্গযোগে বাংলা ভাষায় অনেক শব্দ গঠিত হয়েছে। যেমন : অনিয়ম
(অ+নিয়ম), আপ্রাণ (আ+প্রাণ), প্রবাস (প্র+বাস), সন্দেশ (সম+√দিশ্+অ) ইত্যাদি।
২. প্রত্যয় যোগে :- ধাতু বা শব্দের পর যে সব ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টি যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে, সে সব ধ্বনি
বা ধ্বনিসমষ্টিকে প্রত্যয় বলে। এই প্রত্যয়যোগে বাংলা ভাষায় অনেক শব্দ গঠিত হয়েছে। যেমন : ঘরোয়া
(ঘর+উয়া), পড়–য়া (পড়্+উয়া), ঢাকাই (ঢাকা+আই), গেছো (গাছ+উয়া) ইত্যাদি।
৩. সন্ধির মাধ্যমে :- দুটি শব্দের প্রান্তিক ধ্বনিগত মিলনকে সন্ধি বলে। এই পদ্ধতিতে পাশাপাশি অবস্থিত দুটি
শব্দের একটির শেষপ্রান্ত এবং অপরটির প্রথম প্রান্তের ধ্বনি মিলিত হয়ে সন্ধির মাধ্যমে বাংলা ভাষায় অনেক
শব্দ গঠিত হয়। যেমন : বিদ্যালয় (বিদ্যা+আলয়), শুভেচ্ছা (শুভ+ইচ্ছা), রাজর্ষি (রাজা+ঋষি), নাবিক
(নে․+ইক), গায়ক (ক্সগ+অক) ইত্যাদি।
৪. সমাসের মাধ্যমে : পরস্পর সম্পর্কযুক্ত দুই বা ততোধিক পদের এক পদে পরিণত হওয়াকে সমাস বলে। এই
সমাসের মাধ্যমে বাংলা ভাষায় অনেক শব্দ গঠিত হয়েছে। যেমন : জনমানব (জন ও মানব), ত্রিফলা (ত্রি
ফলের সমাহার), দশানন (দশ আনন আছে যার), দেশান্তর (অন্য দেশ), নীলাকাশ (নীল যে আকাশ)
ইত্যাদি।
৫. দ্বিরুক্তির মাধ্যমে :- একই শব্দকে পর পর দুবার ব্যবহার করে কোনো নতুন শব্দ গঠন করা হলে তাকে
দ্বিরুক্তি বলে। এই দ্বিরুক্তির মাধ্যমে বাংলা ভাষায় বেশ কিছু শব্দ গঠিত হয়েছে। যেমন : পর পর, নিজ
নিজ, দেশে দেশে, ঠক ঠক, টক টক, শীত শীত ইত্যাদি।
৬. পদান্তরের মাধ্যমে :- এক পদকে অন্য পদে রূপান্তর করার নামই পদান্তর। এই পদান্তরের মাধ্যমেও বাংলা
ভাষায় অনেক শব্দ গঠিত হয়েছে। যেমন : লে․কিক (লোক), দেশীয় (দেশ), ঘরোয়া (ঘর), মানবিক
(মানব), দলীয় (দল), মেছো (মাছ), মানসিক (মন) ইত্যাদি।
বাক্য কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি,উৎস অনুসারে শব্দ কত প্রকার ও কী কী,অর্থগতভাবে বাংলা শব্দ কত প্রকার ও কি কি,পদ কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি উদাহরণ সহ লিখ,উৎস অনুসারে শব্দ কত প্রকার ও কি কি,শব্দ কাকে বলে বাংলা,তৎসম শব্দ কাকে বলে,গঠনগতভাবে শব্দ কত প্রকার
0 Comments
Thank you for your message, I see all your messages, it is not possible to reply many times due to busyness, I hope I will reply to everyone in time, thank you for being with me. Thanks you watching my content. Please like, Follow, Subscribe.