তালিবানি মুখোশ খুলে ঝাঁঝরা হয়েছিলেন সুস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায় লাভ জেহাদীর, মাধ্যমে ধর্মান্তরিত হয়ে নির্যাতিত হয়েছে ধর্ষিত হয়েছে মারা গেছে এরকম দশটি কাহিনী

 

তালিবানি মুখোশ খুলে ঝাঁঝরা হয়েছিলেন সুস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায় লাভ জেহাদীর, মাধ্যমে ধর্মান্তরিত হয়ে নির্যাতিত হয়েছে ধর্ষিত হয়েছে মারা গেছে এরকম দশটি কাহিনী
href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgtbHmXHg8lkka-007yJIon_0xTkwJGwbILoyDE66bE6j7tuJkQzemDYJbUp5mlQMPD-7_wqJJ9jqsRFIEl3vh7uFr6gl0xdxECn86apc3cFRFS1jgKCLknX0sxopVyB7_j5VIMRoYSD5umkVRZgzHi808VNw46s7OktX6ZWIvmMzgL6Irf6bi8ojLlHyb3/s542/34906661_1784880744936292_3853402687550783488_n.jpg" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;">

লেখার জন্যই ফিরে গিয়েছিলেন সুস্মিতা?আফগানিস্তানে সন্দেহভাজন তালেবান জঙ্গিদের গুলিতে নিহত ভারতীয় লেখক সুস্মিতা ব্যানার্জি তাঁর প্রথম উপন্যাসের পরবর্তী খণ্ড লেখার উদ্দেশ্যেই সে দেশে ফিরে গিয়েছিলেন। তাঁর আলোচিত প্রথম উপন্যাস কাবুলিওয়ালার বাঙালি বউ-এর প্রকাশক স্বপন বিশ্বাস গত শুক্রবার এমনটিই দাবি করেন।

সংঘাত ও সমস্যাজর্জরিত আফগানিস্তান ছেড়ে ১৯৯৫ সালে ভারতে পালিয়ে যেতে সমর্থ হয়েছিলেন বাঙালি মেয়ে সুস্মিতা। এক আফগান ব্যবসায়ীকে বিয়ে করা এ লেখিকা মোল্লা ওমর, তালেবান ও আমি এবং এক বর্ণ মিথ্যা নয় নামে আরও দুটি উপন্যাস লিখেছেন। মার্কিন সামরিক অভিযানে অতি কট্টরপন্থী তালেবানের পতনের পর আফগানিস্তানের সামাজিক পরিবর্তনের চিত্র তুলে ধরে একটি নতুন বই লেখার প্রস্তাব সুস্মিতা নিজেই ‘ভাষা ও সাহিত্য’ প্রকাশনকে দিয়েছিলেন। নতুন বইটির নাম চূড়ান্ত না হলেও কাবুলিওয়ালার বাঙালি বউ আবার আফগানিস্তানে রাখার প্রস্তাব করা হয়েছিল। কথা ছিল, সুস্মিতা শিগগিরই ভারতে ফিরে বইটির পাণ্ডুলিপি চূড়ান্ত করবেন। আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় পাকতিকা প্রদেশে গত বৃহস্পতিবার তাঁর গুলিবিদ্ধ মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
সুস্মিতা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতার মেয়ে। তাঁর ভাই গোপাল ব্যানার্জি বলেছেন, সুস্মিতা সম্প্রতি আফগানিস্তানে ফিরে গিয়েছিলেন। কারণ, স্বামী জানবাজ খান আশ্বাস দিয়েছিলেন সেখানে তিনি নিরাপদে থাকতে পারবেন।
১৯৯০-এর দশকে আফগানিস্তানে জনস্বাস্থ্যবিষয়ক বিভিন্ন কর্মসূচিতে যুক্ত হয়ে তালেবানের রোষানলে পড়েন সুস্মিতা। স্থানীয় ব্যবসায়ী জানবাজ খানের সঙ্গে ১৯৮৯ সালে তাঁর বিয়ে হয়। তালেবানের হুমকি ও পারিবারিক কিছু সংকটের কারণে তিনি পরবর্তী সময়ে আফগানিস্তান ত্যাগ করেন। জীবনের ঝুঁকি সত্ত্বেও তিনি গত জানুয়ারিতে দেশটিতে অবস্থানরত স্বামী জানবাজ খানের কাছে ফিরে যান।
সুস্মিতার লেখায় তালেবান শাসনামলে আফগানিস্তানের সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশার বর্ণনা রয়েছে।
আমাদের কলকাতা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সুস্মিতার লাশ কলকাতায় ফিরিয়ে আনার জন্য গতকাল শনিবার রাজ্য সচিবালয় মহাকরণে গিয়ে মুখ্য সচিবের কাছে দাবি জানিয়েছেন তাঁর ছোট ভাই গোপালসহ পরিবারের সদস্যরা। তৃণমূল কংগ্রেস নেতা মুকুল রায় বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে রাজ্য সরকারের কর্মকর্তাদের ইতিমধ্যেই নির্দেশ দিয়েছেন। এএফপি ও টাইমস অব ইন্ডিয়া।

বুধবারের এই হত্যাকাণ্ডের জন্যও তালেবান গোষ্ঠীকেই দায়ী করছে আফগানিস্তান পুলিশ। পাকতিকা রাজ্যে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে সুস্মিতাকে (৪৯) হত্যা করা হয় বলে বিবিসি জানিয়েছে।

কলকাতার মেয়ে সুস্মিতা ১৯৮৮ সালে আফগান ব্যবসায়ী জানবাজ খানকে বিয়ে করে আফগানিস্তানে পাড়ি জমান।

১৯৯৩ সালে দেশটিতে তালেবানি শাসন শুরুর পর তাদের রোষানলে পড়েন সুস্মিতা। পরে বেশ কয়েকবার চেষ্টা চালিয়ে দুই বছর পর পালিয়ে ভারতে যেতে পেরেছিলেন তিনি।

এই অভিজ্ঞতা নিয়ে বাঙালি এই নারী ‘এ কাবলিওয়ালাস বেঙ্গলি ওয়াইফ’ শিরোনামের একটি স্মৃতিকথা লেখেন, যা ভারতে সর্বোচ্চ বিক্রিত বইয়ের তালিকায় স্থান পায়।

বইটি অবলম্বনে ২০০৩ সালে বলিউডে ‘এসকেপ ফ্রম তালেবান’ নামের একটি চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়, যাতে অভিনয় করেন মনীষা কৈরালা।

তালেবান শাসনের অবসানের পর সম্প্রতি সুস্মিতা আবার আফগানিস্তানে তার স্বামীর কাছে ফিরে গিয়েছিলেন। স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে কাজও করছিলেন তিনি।

পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বিবিসিকে জানান, তালেবান জঙ্গিরা পাকতিকা প্রদেশের রাজধানী কারানায় বাড়িতে ঢুকে স্বামীসহ পরিবারের লোকজনের হাত-পা বেঁধে রেখে সুস্মিতাকে নিয়ে যায়। পরে গুলি চালিয়ে হত্যার পর একটি ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে লাশ ফেলে যায়।

পালিয়ে আসার স্মৃতি

সুস্মিতা ভারতের আউটলুক সাময়িকীতে এক লেখায় আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর তার দুঃসহ স্মৃতি তুলে ধরেছিলেন।

সেখানে ‍তিনি লেখেন, ১৯৯৩ সালে তালেবানরা ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত আফগানিস্তানের মাটিতে তার জীবন-যাপন ছিল সহনীয়।

কিন্তু তালেবান শাসকরা এসে ‘ভ্রষ্ট নারী’ আখ্যা দিয়ে তার একমাত্র ওষুধের দোকানটি বন্ধ করে দেয়।

১৯৯৪ সালের সুস্মিতা একবার পালিয়ে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে ভারতীয় দূতাবাসের কাছে গিয়েছিলেন। কিন্তু তার দেবরসহ শ্বশুড় বাড়ির লোকজন সেখান থেকে তাকে ধরে আবার আফগানিস্তানে নিয়ে যায়।

“তারা আমাকে ভারতে পাঠাবে বলে তখন কথা দিলেও আফগানিস্তান নিয়ে গৃহবন্দি করে রাখে। আমাকে চরিত্রহীন নারী বলে গালি দিতে থাকে। তালেবানরা আমাকে ‘শিক্ষা’ দেয়ার হুমকি দেয়।”

“তখন বুঝেছিলাম, আমাকে এখান থেকে পালাতে হবে।”

এক রাতে ঘরের মাটির দেয়ালে একটি সুড়ঙ্গ করে বেরিয়ে পড়েন সুস্মিতা। সেখান থেকে কাবুলে পালিয়ে গেলেও সেবার ধরা পড়েন তালেবানের হাতে।

“১৫ জন তালেবান সদস্য আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। আমি স্বামীর বাড়ি থেকে পালিয়ে আসার কারণে তারা আমাকে হত্যার হুমকিও দেয়।”

তখন নিজেকে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে তুলে ধরেন সুস্মিতা, তার দেশে ফেরার অধিকারের কথাও তালেবানকে বলেন তিনি।

অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ভারতীয় দূতাবাসের মাধ্যমে তখন দেশে ফিরতে পেরেছিলেন সুস্মিতা।

কোথাও বিউটি পার্লারের বাইরে মহিলাদের ছবি মোছার চেষ্টা হচ্ছে। কোথাও সংবাদমাধ্যম থেকে মহিলা অ্যাঙ্করকে বের করে দেওয়া হচ্ছে! আবার আফগানিস্তানের বল্খ প্রদেশের যে গভর্নর সালিমা মাজারি তালিবানকে রুখতে হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন সেই তাঁকেই আটক করল তালিবান জঙ্গিরা। তালিবানের কব্জায় চলে যাওয়ার পর, এটাই এখন আফগানিস্তানের ছবি! মুখে ভাল ভাল কথা বললেও, গত দু’দিনে সামনে চলে এসেছে তালিবানের নারী-বিদ্বেষের সেই চেনা ছবি। যার প্রত্যক্ষ সাক্ষী ছিলেন এই বাংলার এক মেয়ে। 

যিনি আরও পরিচিত ‘কাবুলিওয়ালার বাঙালি বউ’ বইয়ের জন্য। সুস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথমে বিয়ে করে আফগানিস্তানে গিয়ে অকথ্য অত্যাচারের শিকার হন সুস্মিতা। তারপর ২০১৩ সালে সেই আফগানিস্তানে গিয়েই তালিবানি জঙ্গিদের গুলিতে খুন হন তিনি। 

আট বছর বাদে, আফগানিস্তান দখলের পর সেই তালিবানের হিংস্র উল্লাস দেখে পুরনো কথা মনে যাচ্ছে সুস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাই গোপাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সুস্মিতার ভাই বলেন, ' ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখছি। পরের বার যখন দিদি আফগানিস্তান ফিরে গেল তখন পরিস্থিতি খারাপ ছিল। খবরের চ্যানেল থেকে খবর পাই। জঙ্গিরা এখন দেশ চালাচ্ছে, যাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল দিদি, তারাই আবার দেশ চালাচ্ছে। অনেক দেশ সেটাকে সমর্থন করছে। এটা দেখতে হচ্ছে, এর থেকে খারাপ আর কীই বা হতে পারে। 


১৯৮৯ সালে কলকাতাতেই আফগান যুবক জানবাজ খানের সঙ্গে আলাপ হয় কলকাতার মেয়ে সুস্মিতার। পরিচয় থেকে প্রেম, তারপর বিয়ে। ‘কাবুলিওয়ালার বাঙালি বউ-বইতে সুস্মিতা লিখেছিলেন, অনেকের মতো তালিবানি ফতোয়া মেনে নিতে পারেননি তিনি।  প্রতিবাদ করতে গিয়ে তাঁকে পড়তে হয় তালিবানি রোষের মুখে৷ দিনের পর দিন তাঁকে অন্ধকার ঘরে বন্দি করে রাখা হত। বারবার পালিয়ে আসার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন৷ শেষ পর্যন্ত আফগান মুলুক থেকে ১৯৯৫ সালে পালিয়ে আসেন সুস্মিতা। 

তাঁর লেখা ‘কাবুলিওয়ালার বাঙালি বউ’য়ের কাহিনি অবলম্বনেই ২০০৩ সালে বলিউডে তৈরি হয় ‘এসকেপ ফ্রম তালিবান’ ছবিটি৷  পরিচালক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় জানালেন, ছবি শুটিং করতে চেয়েছিলেন আফগানিস্তানেই। তাই রেকে করতে গিয়েছিলেন আফগানিস্তানে। কিন্তু সুস্মিতার শ্বশুরবাড়ির এলাকা সারারায় যেতেই তাঁদের ঘিরে ধরে অস্ত্রধারী তালিবানরা। এরপর জালালাবাদের একটি হোটেলে ছিলাম। সেই সময় দেখা ভীত সন্ত্রস্ত মুখগুলো এখনও ভুলতে পারিনি।'

দশবছর পর আফগানিস্তানে গিয়েই খুন হন সুস্মিতা। বিয়ের পর ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েও কেন ফের কাবুলিওয়ালার দেশে ফিরে গেলেন লেখিকা ? ভাই গোপাল বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, '' পরবর্তীতে কাবুলিওয়ালার বাঙালি বউয়ের পরবর্তী পর্ব লিখতে চেয়েছিলেন সুস্মিতা। পরবর্তী পরিস্থিতি হয়ত জানতে পারা যেত তাঁর লেখায়। আমি বারণ করেছিলাম। ও বলেছিল এখন তো আর তালিবানরা ওখানে নেই। আর দিন চারেকের কাজ বাকি ছিল বলে জানায় ও। সেই বই লেখার কাজ শেষ  করতেই তো ও গিয়েছিল ফের ওখানে। ওর ল্যাপটপ এখনও ওখানে। যেদিন মারা যায়, সেদিন ফেরার কথা ছিল ''

তালিবান যে কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে, তা একেবারে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলেন সুস্মিতা ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। তাই আজকে যে ভারতীয়রা তাঁদের হাতে আটকে রয়েছে, তাঁদের নিয়ে দুশ্চিন্তা কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না।

Post a Comment

0 Comments