ফাইনালি। ফাইনালি বাংলাদেশের ''বিশিষ্ট নাগরিকেরা'' চলচ্চিত্র শিল্পী পরীমণির ওপর যে ভয়াবহ নির্যাতন হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়েছেন। বিশিষ্ট নাগরিকেরা সব সময়ই সব ক্ষতি হয়ে যাওয়ার পর কিছু লোকের ক্রমাগত চাপে এবং অনুরোধে মাথা দোলান, কয়েকদিন ভেবে চিন্তে বিবৃতিতে নাম যাওয়ায় রাজি হন। তার আগে অবশ্য নিশ্চিত হয়ে নেন, অন্য 'বিশিষ্ট'রা বিবৃতিতে সই করেছেন। বিশিষ্টদের নাম থাকলে বিশিষ্টরা এগোন, অ-বিশিষ্টদের সঙ্গে শুরু থেকে প্রতিবাদে নামেন না, তার চেয়ে বসে বসে নিশ্চিন্তে নির্বিঘ্নে সর্বহারার সর্বনাশ দেখেন।
পরীমণিকে ফাঁদে এবং বিপদে ফেলা হচ্ছে অনেক আগে থেকেই। জুলাইয়ের ৪ তারিখে আমি প্রথম ওর পাশে দাঁড়িয়েছিলাম, লিখেছিলাম --
''ফেসবুকে শিং মাছের মতো দেখছি প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে উঠছে বাংলাদেশের নায়িকা পরীমণির বিরুদ্ধে কুৎসিত সব গালাগালি। কোনও মেয়ের বিরুদ্ধে যখন লোকেরা ক্ষেপে ওঠে, তাকে দশদিক থেকে হামলা করতে থাকে, এমন উন্মত্ত হয়ে ওঠে যেন নাগালে পেলে তাকে ছিঁড়ে ফেলবে, ছুঁড়ে ফেলবে, পুড়িয়ে ফেলবে, পুঁতে ফেলবে, ধর্ষণ করবে, খুন করবে, কুচি কুচি করে কেটে কোথাও ভাসিয়ে দেবে , তখন আমার ধারণা হয় মেয়েটি নিশ্চয়ই খুব ভালো মেয়ে, সৎ মেয়ে, সাহসী মেয়ে, সোজা কথার মেয়ে।
আমার নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা এটাই বলে।
বাংলাদেশের সিনেমা আমি দেখি না। পরীমণির নামও আগে শুনিনি। তবে তাকে আমি দূর থেকে আমার শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা জানাচ্ছি। সব মেয়ে স্ট্রাগল করে না, কিছু মেয়ে করে। কিছু মেয়ে স্ট্রাগল করে সব মেয়ের জন্য যুগে যুগে বেটার পরিস্থিতি আনে। এই স্ট্রাগল করা কিছু মেয়েই একেকটা মাইলফলক। ''
সেই শুরু, সেই থেকে লিখে যাচ্ছি। মেয়েটির দুর্ভোগ ক্রমশ বাড়ছিলই। এর মধ্যে মেয়েটিকে দেশের পুলিশ গোষ্ঠী,
ধর্মান্ধ গোষ্ঠী, ধনী গোষ্ঠী, মূর্খ গোষ্ঠী, মাফিয়া গোষ্ঠী, মিডিয়া গোষ্ঠী, প্রভাবশালী গোষ্ঠী -- যত গোষ্ঠী আছে জ্যান্ত কবর দিয়ে দিয়েছে । নার্ভাস ব্রেক ডাউন হয়ে গেছে সম্ভবত। যত মানসিক ক্ষতি হওয়ার হয়ে গেছে। শেষে আড়মোড়া ভাঙলেন কারা? ''বিশিষ্ট নাগরিকেরা''। বিশিষ্ট নাগরিকেরা বড় বৃদ্ধ। বড় বেশি ঘুমিয়ে থাকেন। কানে কম শোনেন। দেশ যে অন্ধকারে তলিয়ে গেছে, সে খেয়াল রাখেন না। দেশ জুড়ে যে নারীবিদ্বেষী হায়েনারা আর শকুনেরা সাহসী মেয়েদের কামড়ে খাচ্ছে, ছিঁড়ে খাচ্ছে-- তা দেখেন না, চোখে ছানি পড়েছে অনেক আগেই।
বাংলাদেশের বিশিষ্ট নাগরিকেরা জরুরি কথা বলতে বড় বেশি দেরি করেন। পরিবেশ ঠিক থাকলে, মুখ খুললে অসুবিধে হবে না জেনে তারপর মুখ খোলেন। বেড়ালের গলায় ঘণ্টিটা সব সময় অ-বিশিষ্টরা বাঁধেন। ঝুঁকি নেন অ-বিশিষ্টরাই। তাদের চোখ কান খোলা। সমাজে আসলে অথর্ব বিশিষ্টের চেয়ে প্রতিবাদী অ-বিশিষ্টদের বেশি দরকার।
0 Comments
Thank you for your message, I see all your messages, it is not possible to reply many times due to busyness, I hope I will reply to everyone in time, thank you for being with me. Thanks you watching my content. Please like, Follow, Subscribe.