যুগ যুগ ধরে এই পৃথিবীতে ঘোড়ার মতই কুকুর এবং বিড়ালও মানুষের পরম বন্ধু হিসেবেই পরিচিত। পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় শহুরে সমাজেও অনেক কুকুর বা বিড়াল তাদের অস্তিত্ব রক্ষা করে আছে। এদের বেশির ভাগেরই মনুষ্য “মালিক” নেই। তাই রাষ্ট্র এদের “বেওয়ারিশ” বলে গন্য করে এসেছে বহুকাল। যাকে আমরা “বেওয়ারিশ” ভেবে অনাহূত ভাবছি, প্রকৃতির সন্তান হিসেবে সে কততুকু অনাহূত সেটিও বিবেচনার বিষয়। কোন এলাকায় একটি কুকুর বা বিড়ালের জন্ম হলে সেখানেই সে জীবন যুদ্ধ পাড়ি দিয়ে বেড়ে উঠে। খাবার এবং আশ্রয় নিজেই খুঁজে নেয়। অর্থাৎ সে তার জন্ম স্থানটিকে নিজের এলাকা ভাবে। আমাদের মত একি আলো-বাতাসে সেও বেড়ে উঠে। এইদিক বিবেচনায় এই কুকুর বা বিড়াল আমাদের সাথে সহাবস্থানরত প্রাণী।
ব্যক্তি মালিকানা না থাকলেই যদি বেওয়ারিশ হবে তাহলে এদেশের বনে-বাদাড়ে ঘুরে বেড়ানো প্রতিটি প্রাণী “বেওয়ারিশ”। তবে কেন বাঘ মারলে বা হরিন আটকে রাখলে আইন কথা বলবে আর কুকুর-বিড়াল নির্যাতনের স্বীকার হলে আইন দুর্বল ভিত্তিতে দাঁড়িয়ে থাকবে! এর মূল কারণ কি এই যে- কুকুর বা বিড়াল “প্রাণী সম্পদ” বা “বন্য প্রাণী” এর সংজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত নয়? অর্থনীতিতে সরাসরি কোন ভুমিকা নেই বলেই কি এদেরকে সমাজে অবাঞ্ছিত, অনাহূত, অনর্থক এবং বেওয়ারিশ হিসেবে জীবন যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে? মানুষের সরাসরি উপকারে না এলেই কি এদের নির্বিচারে হত্যা করা বা নির্যাতন করার অধিকার আমাদের রয়েছে? হাজার হাজার বছর ধরে এরাই তো শিকারের সময় মানুষকে সঙ্গ দিয়ে এসেছে বনে-জঙ্গলে। রাতে ভয়ঙ্কর হিংস্র প্রাণী থেকেও রক্ষা করেছে। আজ মানুষ প্রযুক্তির নানা হাতিয়ার আর জ্ঞান ভাণ্ডারে সজ্জিত বলে এই বিপদের বন্ধুদের ভুলে গিয়েছে।
আরও পড়ুন:Real Health World
রাস্তার কুকুরও সহজাত ভাবেই মানুষকে বন্ধু ভাবে। কাজেই মানুষের নির্যাতনের স্বীকারও হয় এরা খুব সহজেই। বিড়াল ততটা নয় হয়তো। একটি কুকুর বা বিড়াল গাড়িচাপা পড়ে রাস্তায় কাৎরালে অথবা নির্যাতনের স্বীকার হতে দেখলে আমরা এড়িয়ে যাই। মনে মনে বলি- কত মানুষ রাস্তায় পড়ে আছে, এই কুকুর-বিড়াল নিয়ে ভেবে কি হবে? অথচ এটি তুলনামূলক বিবেচনার বিষয় নয়, এটি মানবিকতা ও নৈতিকতার প্রশ্ন। যা জাত ভেদে কখনই ভিন্ন হতে পারে না।
প্রায়ই দেখা যায়- লাঠি পেটা করে হত্যা করা, গরম পানি ছুঁড়ে পুড়িয়ে দেয়া, গাড়ির চাকায় পিষ্ট করে পঙ্গু করা, গলায় ফাঁস দিয়ে আমৃত্যু ঝুলিয়ে রাখা সহ নানা ধরণের নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে এই বন্ধুভাবাপন্য প্রাণীরা। সভ্য মানুষের চোখের সামনেই ধুঁকে ধুঁকে যন্ত্রণায় মারা যায়। কেউই হয়তো দায় অনুভব করেন না, তাকে কোন একজন পশু চিকিৎসকের কাছে নিতে। বুঝতে হবে মানুষের হাতে বন্দি প্রকৃতিতে এই অসহায় প্রাণীদের নিজের ক্ষমতা নেই চিকিৎসা নেবার। তারা আমাদের উপরই নির্ভরশীল। আবার এ শহরেই এমন মানুষেরও দেখা মিলে, যারা পরম মমতায় পথের কুকুরটিকেই খাওয়াচ্ছেন, আদর করছেন। আবার এ কারনে অন্যের ভৎসর্ণাও শুনতে হয় মানুষটিকে! অনেকে ধর্মের দোহাই দিয়েও এই নির্যাতন-নিষ্ঠুরতাকে বৈধতা দিতে চায়। অথচ সমাজে প্রতিষ্ঠিত কোন ধর্মই সৃষ্টির প্রতি ধংসাত্মক বা নির্মম হতে শিক্ষা দেয় না।
মানুষের সহমর্মিতা এবং মানবিক আচরনের মাধ্যমেই “বেওয়ারিশ” বলে চিহ্নিত প্রাণীগুলো সামাজিক অবস্থান পাবে এবং একি সাথে নির্যাতন- নিপীড়নের হার ও কমে আসবে।
একটি মানবিক সমাজে “বেওয়ারিশ” শব্দটির কোন কার্যকারিতা নেই। আমরা দেখেছি “বেওয়ারিশ” বা মালিকানাহীন বৈষয়িক সম্পদকে নিজের মালিকানায় নিতে কতই না প্রয়াস থাকে। কিন্তু “বেওয়ারিশ” অসহায় মানুষের দায়ভার নেবার মত মানুষও বিরল। কাজেই মানুষ অথবা কুকুর-বিড়াল তা সে যে ই হোক না কেন- “বেওয়ারিশ” শব্দটি নৈতিক অধিকার খর্ব করবার একটি অজুহাত মাত্র। অসহায় যে কোন প্রাণী, বিপর্যস্ত প্রকৃতি, এদের দায় ভার ব্যক্তি, সমাজ এবং রাষ্ট্র কেই নিতে হবে। মানুষ প্রকৃতির একটি মাত্র উপাদান। এই প্রকৃতিতে আরও হাজারো উপাদান রয়েছে, যা মানুষের কর্মকাণ্ডে প্রভাবিত হয়। কাজেই আমাদের প্রতিটি আচরণ সংবেদনশীল হলেই আগামী পৃথিবী সহজ, সুন্দর, সাবলীল হবে।
পশুর প্রতি ভালোবাসা উক্তি, জলাতঙ্ক টিকার মেয়াদ কতদিন, বিড়ালের জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ, রেবিস ভ্যাকসিন ডোজ, কুকুরের কামড়ের ইনজেকশন, কুকুর মানুষকে রুবেলা ভাইরাস কোন রোগ সৃষ্টি করে, কোন কোন প্রাণী কামড়ালে জলাতঙ্ক হয়,পশু-পাখির প্রতি দয়ার গুরুত্ব,বেওয়ারিশ’ প্রাণী এবং মানবিকতার নৈতিক দায়বোধ,মানুষকে কুকুর বেশি ভালোবাসে, নাকি বিড়াল?
ডেইলি নিউজ টাইমস বিডি ডটকম (Dailynewstimesbd.com)এর ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন করুন।
0 Comments
Thank you for your message, I see all your messages, it is not possible to reply many times due to busyness, I hope I will reply to everyone in time, thank you for being with me. Thanks you watching my content. Please like, Follow, Subscribe.