কৌটিল্য / চাণক্য (সংস্কৃত: चाणक्य; এই শব্দ সম্পর্কেউচ্চারণ শুনুন (সাহায্য·তথ্য)) বা কৌটিল্য বা বিষ্ণুগুপ্ত (খ্রিস্টপূর্ব ৩৭০-২৮৩ অব্দ)[১][২] একজন প্রাচীন ভারতীয় অর্থনীতিবিদ, দার্শনিক ও রাজ-উপদেষ্টা এবং অর্থশাস্ত্র নামক রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ক বিখ্যাত গ্রন্থের রচয়িতা ছিলেন।[৩] চাণক্য রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতি বিষয়ে প্রাচীন ভারতের একজন দিকপাল ছিলেন এবং তাঁর তত্ত্বগুলি চিরায়ত অর্থনীতির বিকাশ লাভে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল।[৪][৫][৬][৭] রাষ্ট্রবিজ্ঞানে তাঁর পাণ্ডিত্যের জন্য চাণক্যকে ভারতের মেকিয়াভেলি বলা হয়।[৮] চাণক্যের রচনা গুপ্ত সাম্রাজ্যের শাসনের শেষ দিকে অবলুপ্ত হয় এবং ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে পুনরাবিষ্কৃত হয়।[৫] প্রাচীন তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি ও রাষ্ট্রনীতির অধ্যাপক চাণক্য পরবর্তীকালে মৌর্য্য সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্যের উত্থানে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেন। চাণক্য চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্য ও তাঁর পুত্র বিন্দুসারের রাজ-উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
চাণক্য সম্বন্ধে খুব সামান্যই ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া যায়, অধিকাংশ উৎসে ঐতিহাসিকতার তুলনায় কল্প কথা স্থান করে নিয়েছে। থমাস ট্রটমান চাণক্য ও চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্যের সম্পর্ক নিয়ে চারটি উৎস চিহ্নিত করেছেন।[৯] এগুলি হল সিংহলী বৌদ্ধ গ্রন্থ মহাবংশ ও তাঁর পালি টীকা বংসট্ঠপ্পকাসিনি, হেমচন্দ্র রচিত জৈন গ্রন্থ পরিশিষ্টপর্ব, সোমদেব রচিত কথাসরিৎসাগর ও ক্ষেমেন্দ্র রচিত বৃহৎকথামঞ্জরী নামক দুইটি কাশ্মীরি গ্রন্থ এবং বিশাখদত্ত রচিত সংস্কৃত নাটক মুদ্রারাক্ষস। প্রথম জীবন প্রাচীন ভারতীয় পন্ডিত, দার্শনিক, ও রাজউপদেষ্টা কৌটিল্য বা বিষ্ণু গুপ্ত ( খ্রি: ৩৭১-২৮৩)। তিনি চানক্য নামে অধিক পরিচিত। তার জন্ম নিয়ে রয়েছে মতান্তর।
কারো মতে তার জন্ম পাকিস্তানের পান্জাব প্রদেশপর তক্ষষশীলায়। আবার কারো মতে কৌটিল্য বা চাণক্যের জন্ম চনক নামে একটি গ্রামে, ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।[১০] তাঁর জন্মস্থান সম্বন্ধে বেশ কয়েকটি মতবাদ প্রচলিত রয়েছে।[১] বৌদ্ধ গ্রন্থ মহাবংশটীকা অনুসারে, তক্ষশীলায় তাঁর জন্ম হয়।[১১] জৈন পুঁথি অদ্বিধন চিন্তামণি চানোক্যকে দ্রমিলা নামে অভিহিত করা হয়েছে, যার অর্থ তিনি দক্ষিণ ভারতের অধিবাসী ছিলেন।[১১][১২] হেমচন্দ্র রচিত পরিশিষ্টপর্ব গ্রন্থানুসারে, চাণক্য চণক নামক গ্রামে চণিন নামক এক ব্রাহ্মণ ও তাঁর পত্নী চণেশ্বরীর গৃহে জন্মগ্রহণ করেন।[১৩] অন্য উৎস মতে, চণক তাঁর পিতার নাম ছিল।[১৪] চাণক্য প্রাচীন ভারতের অন্যতম বিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষালাভ করেন ও পরবর্তীকালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি আচার্য্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
বেদ সম্বন্ধে একজন পণ্ডিত ছিলেন[১৫] এবং বিষ্ণুর উপাসক ছিলেন।.[১৬] মৌর্য্য সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা বিশাখদত্ত রচিত মুদ্রারাক্ষস নাম্মক সংস্কৃত নাটকে নন্দ সাম্রাজ্য পতনে চাণক্যের ভূমিকা বর্ণিত রয়েছে। এই গ্রন্থানুসারে, হিমালয়ের একটি পার্বত্য রাজ্যের অধীশ্বর পর্বতেশ্বরের সঙ্গে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্যের রাজনৈতিক পরামর্শদাতা চাণক্য কূটনৈতিক মিত্রতা স্থাপন করে নন্দ সাম্রাজ্যকে পরাজিত করতে সক্ষম হন। কিন্তু এই সময়, পর্বতেশ্বরকে বিষপ্রয়োগে হত্যা করা হলে মলয়কেতু তাঁর স্থানে সিংহাসনে আরোহণ করেন। নন্দ সাম্রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী রাক্ষসের সঙ্গে মিলিত ভাবে মলয়কেতু নন্দ সাম্রাজ্যের অধিকৃত এলাকা দাবি করেন। শেষ নন্দ সম্রাট ধননন্দের হত্যার প্রতিশোধ নিতে মলয়কেতুর সহায়তায় রাক্ষস রাজধানী আক্রমণ করে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্যকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। এই পরিস্থিতিতে চাণক্য যেন তেন প্রকারে রাক্ষসকে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্যের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করাতে চেয়েছিলেন। রাক্ষসের প্রতীক মুদ্রাটি হস্তগত করে চাণক্য চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্যকে উদ্দেশ্য করে একটি নকল চিঠি প্রস্তুত করেন।
এই চিঠিতে রাক্ষসের মুদ্রার ছাপ (সীলমোহর) দিয়ে লেখা হয় যে তিনি চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্যের শিবিরে যোগ দিতে ইচ্ছুক। চাণক্য প্রথমেই মলয়কেতুর নিকট এই চিঠির বিষয়ে বার্তা পাঠালে তাতে বিশ্বাস করে মলয়কেতু রাক্ষসের সঙ্গত্যাগ করেন। এই ভাবে চাণক্য রাক্ষসকে তাঁর সঙ্গীদের থেকে দূরে সরিয়ে দেন। পরবর্তী কৌশল হিসেবে তিনি রাক্ষসের বন্ধু চন্দনদাসের মৃত্যুদণ্ড দিলে রাক্ষস তাঁকে বাঁচাতে, আত্মসমর্পণে ও চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্যের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনে বাধ্য হন। বিন্দুসারের সঙ্গে সম্পর্ক জৈন প্রবাদানুসারে, চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্যের উপদেষ্টা চাণক্য শত্রু দ্বারা বিষপ্রয়োগে হত্যা করার চেষ্টার বিরুদ্ধে শারীরিক প্রতিষেধক তৈরী করার উদ্দেশ্যে প্রতিদিন চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্যকে তাঁর অজান্তে অল্প মাত্রায় বিষ পান করাতেন।[১৭] একদিন চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্য তাঁর বিষযুক্ত খাবার অন্তঃসত্ত্বা দুর্ধরার সঙ্গে ভাগ করে খেলে, দুর্ধরার মৃত্যু হয়। তাঁর সন্তানকে বাঁচাতে চাণক্য সদ্যমৃত দুর্ধরার পেট কেটে তাঁকে বের করে আনলে বিন্দুসারের জন্ম হয়।[১৮][১৯] পরবর্তীকালে বিন্দুসার মৌর্য্য সম্রাট হিসেবে সিংহাসনে আরোহণ করলে চাণক্য তাঁর রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। হেমচন্দ্রের পরিশিষ্টপর্ব অনুসারে, বিন্দুসারের একজন মন্ত্রী সুবন্ধু চাণক্যকে অপছন্দ করতেন। তিনি বিন্দুসারকে জানান যে তাঁর মাতা দুর্ধরার মৃত্যুর জন্য চাণক্য দায়ী ছিলেন। এই ঘটনার কথা জানতে পেরে বিন্দুসার প্রচণ্ড ক্রুদ্ধ হলে বৃদ্ধ চাণক্য জৈন আচার সল্লেখনা বা স্বেচ্ছা-উপবাস করে দেহত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন।
কিন্তু এই সময় চাণক্য যে তাঁর মাতার মৃত্যুর জন্য
সরাসরি দায়ী ছিলেন না, তা অনুসন্ধান করে বিন্দুসার জানতে পেরে নিজের ভুল বুঝতে পারেন
এবং সুবন্ধুকে চাণক্যের নিকট পাঠান যাতে, চাণক্য তাঁর মৃত্যু সঙ্কল্প ত্যাগ করেন। কিন্তু
সুযোগসন্ধানী সুবন্ধু এই সময় চাণক্যকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেন।[২০] রচনা অর্থশাস্ত্র
এবং চাণক্য নীতি নামক দুইটি গ্রন্থ চাণক্য রচনা করেছিলেন বলে মনে করা হয়।[২১] অর্থশাস্ত্র
গ্রন্থে অর্থনীতি, রাষ্ট্রের কল্যাণকারী ভূমিকা, পররাষ্ট্রনীতি, সামরিক কৌশল, শাসকের
ভূমিকা সম্বন্ধে বিশদে বর্ণনা করা হয়েছে।[২২] অর্থশাস্ত্রের অধিকাংশ শ্লোকের রচয়িতা
হিসেবে কৌটিল্যের নাম পাওয়া যায়, একটি শ্লোকে বিষ্ণুগুপ্তের নাম পাওয়া যায়। থমাস
ট্রটমানের মতে, অর্থশাস্ত্রের রচয়িতার প্রকৃত নাম বিষ্ণুগুপ্ত ও গোত্র নাম কৌটিল্য।[১৪]
বিষ্ণুশর্মা রচিত পঞ্চতন্ত্র গ্রন্থে চাণক্য ও বিষ্ণূগুপ্ত যে একই ব্যক্তির বিভিন্ন
নাম, তা বলা হয়েছে।[৩] থমাস বারো ইত্যাদি কয়েকজন ঐতিহাসিকের মতে, অর্থশাস্ত্র আসলে
বেশ কিছু পুরনো রচনার সঙ্কলন এবং চাণক্য এই গ্রন্থের বেশ কয়েকজন লেখকের একজন, অর্থাৎ
তাঁদের মতে চাণক্য ও কৌটিল্য ভিন্ন ব্যক্তি।[২৩]
১।
“ ঋণ, অগ্নি ও ব্যাধির শেষ
রাখতে নেই, কারণ তারা
আবার বেড়ে যেতে পারে ”
২। “ একটি দোষ বহু
গুণকেও গ্রাস করে ”
৩। “ একশত মূর্খ পুত্রের
চেয়ে একটি গুণী পুত্র
বরং ভাল। একটি চন্দ্রই
অন্ধকার দূর করে, সকল
তারা মিলেও তা পারে না।
”
৪। “ কর্কশ কথা অগ্নিদাহের চেয়েও
ভয়ঙ্কর ”
৫। “ খেয়ে যার হজম হয়,
ব্যাধি তার দূরে রয়
”
৬। “ গুণবানকে আশ্রয় দিলে নির্গুণও গুণী
হয় ”
৭। “ গুণহীন মানুষ যদি উচ্চ বংশেও
জন্মায় তাতে কিছু আসে
যায় না। নীচকুলে জন্মেও
যদি কেউ শাস্ত্রজ্ঞ হয়,
তবে দেবতারাও তাঁকে সম্মান করেন। ”
৮। “ গুরু শিষ্যকে যদি
একটি অক্ষরও শিক্ষা দেন, তবে পৃথিবীতে
এমন কোনও জিনিস নেই,
যা দিয়ে সেই শিষ্য গুরুর
ঋণ শোধ করতে পারে।
”
৯। “ তিনটি বিষয়ে সন্তোষ বিধেয়: নিজের পত্নীতে, ভোজনে এবং ধনে। কিন্তু
অধ্যয়ন, জপ, আর দান
এই তিন বিষয়ে যেন
কোনও সন্তোষ না থাকে। ”
১০। “ দুর্বলের বল রাজা, শিশুর
বল কান্না, মূর্খের বল নীরবতা, চোরের
মিথ্যাই বল ”
অতি
পরিচয়ে দোষ আর ঢাকা
থাকে না
অভ্যাসহীন
বিদ্যা, অজীর্ণে ভোজন, দরিদ্রের সভায় কালক্ষেপ এবং বৃদ্ধের তরুণী
ভার্যা বিষতুল্য
অবহেলায়
কর্মনাশ হয়, যথেচ্ছ ভোজনে
কুলনাশ হয়, যাঞ্চায় সম্মান-নাশ হয়, দারিদ্র্যে
বুদ্ধিনাশ হয়
অন্তঃসার
শূন্যদের উপদেশ দিয়ে কিছু ফল হয়
না, মলয়-পর্বতের সংসর্গে
বাঁশ চন্দনে পরিণত হয় না।
অধমেরা
ধন চায়, মধ্যমেরা ধন ও মান
চায়। উত্তমেরা শুধু মান চায়।
মানই
মহতের ধন।
অহংকারের
মত শত্রু নেই
আকাশে
উড়ন্ত পাখির গতিও জানা যায়,
কিন্তু প্রচ্ছন্নপ্রকৃতি-কর্মীর গতিবিধি জানা সম্ভব নয়
আদর
দেওয়ার অনেক দোষ, শাসন
করার অনেক গুণ, তাই
পুত্র ও শিষ্যকে শাসন
করাই দরকার, আদর দেওয়া নয়
আপদের
নিশ্চিত পথ হল ইন্দ্রিয়গুলির
অসংযম, তাদের জয় করা হল
সম্পদের পথ, যার যেটি
ঈপ্সিত সে সেই পথেই
যায়
কর্কশ
কথা অগ্নিদাহের চেয়েও ভয়ঙ্কর
একশত
মূর্খ পুত্রের চেয়ে একটি গুণী পুত্র
বরং ভাল। একটি চন্দ্রই
অন্ধকার
দূর করে, সকল তারা
মিলেও তা পারে না।
একটিমাত্র
পুষ্পিত সুগন্ধ বৃক্ষে যেমন সমস্ত বন
সুবাসিত হয়, তেমনি একটি
সুপুত্রের দ্বারা সমস্ত কুল ধন্য হয়
একটি
কুবৃক্ষের কোটরের আগুন থেকে যেমন
সমস্ত বন ভস্মীভূত হয়,
তেমনি একটি কুপুত্রের দ্বারাও
বংশ দগ্ধ হয়
একটি
দোষ বহু গুণকেও গ্রাস
করে
ঋণ,
অগ্নি ও ব্যাধির শেষ
রাখতে নেই, কারণ তারা
আবার বেড়ে যেতে পারে
উৎসবে,
বিপদে, দুর্ভিক্ষে, শত্রুর সঙ্গে সংগ্রামকালে, রাজদ্বারে এবং শ্মশানে যে
সঙ্গে থাকে, সে-ই প্রকৃত
বন্ধু
উপায়জ্ঞ
মানুষের কাছে দুঃসাধ্য কাজও
সহজসাধ্য
ইন্দ্রিয়ের
যে অধীন তার চতুরঙ্গ
সেনা থাকলেও সে বিনষ্ট হয়
আড়ালে
কাজের বিঘ্ন ঘটায়, কিন্তু সামনে ভাল কথা বলে,
যার উপরে মধু কিন্তু
অন্তরে বিষ, তাকে পরিত্যাগ
করা উচিত
খেয়ে যার হজম হয়, ব্যাধি তার দূরে রয়
গুণবানকে
আশ্রয় দিলে নির্গুণও গুণী
হয়
গুণহীন
মানুষ যদি উচ্চ বংশেও
জন্মায় তাতে কিছু আসে
যায় না। নীচকুলে জন্মেও
যদি কেউ শাস্ত্রজ্ঞ হয়,
তবে দেবতারাও তাঁকে সম্মান করেন।
গৃহে
যার মা নেই, স্ত্রী
যার দুর্মুখ তার বনে যাওয়াই
ভাল, কারণ তার কাছে
বন আর গৃহে কোনও
তফাৎ নেই
চন্দন
তরুকে ছেদন করলেও সে
সুগন্ধ ত্যাগ করে না, যন্ত্রে
ইক্ষু নিপিষ্ট হলেও মধুরতা ত্যাগ
করে না, যে সদ্বংশজাত
অবস্থা বিপর্যয়েও সে চরিত্রগুণ ত্যাগ
করে না
দুর্জনের
সংসর্গ ত্যাগ করে সজ্জনের সঙ্গ
করবে। অহোরাত্র পুণ্য করবে, সর্বদা নশ্বরতার কথা মনে রাখবে।
ধর্মের
চেয়ে ব্যবহারই বড়
নানাভাবে
শিক্ষা পেলেও দুর্জন সাধু হয় না,
নিমগাছ যেমন আমূল জলসিক্ত
করে কিংবা দুধে ভিজিয়ে রাখলেও
কখনও মধুর হয় না
রস্ত্রীকে
যে মায়ের মত দেখে, অন্যের
জিনিসকে যে মূল্যহীন মনে
করে এবং সকল জীবকে
যে নিজের মত মনে করে,
সে-ই যথার্থ জ্ঞানী।
পাপীরা
বিক্ষোভের ভয় করে না
পুত্রকে
যারা পড়ান না, সেই পিতামাতা
তার শত্রু। হাঁসদের মধ্যে বক যেমন শোভা
পায় না, সভার মধ্যে
সেই মূর্খও তেমনি শোভা পায় না।
বইয়ে
থাকা বিদ্যা, পরের হাতে থাকা
ধন একইরকম। প্রয়োজন কালে তা বিদ্যাই
নয়, ধনই নয়।
বিদ্যা
ব্যতীত জীবন ব্যর্থ, কুকুরের
লেজ যেমন ব্যর্থ, তা
দিয়ে সে গুহ্য-অঙ্গও
গোপন করতে পারে না,
মশাও তাড়াতে পারে না।
বিদ্যাভূষিত
হলেও দুর্জনকে ত্যাগ করবে, মণিভূষিত হলেও সাপ কি
ভয়ঙ্কর নয়?
বিষ
থেকেও অমৃত আহরণ করা
চলে, মলাদি থেকেও স্বর্ণ আহরণ করা যায়,
নীচজাতি থেকেও বিদ্যা আহরণ করা যায়,
নীচকুল থেকেও স্ত্রীরত্ন গ্রহণ করা যায়।
যে গাভী দুধ দেয়
না, গর্ভ ধারণও করে
না, সে গাভী দিয়ে
কী হবে! যে বিদ্বান
ও ভক্তিমান নয়, সে পুত্র
দিয়ে কী হবে!
সত্যনিষ্ঠ লোকের অপ্রাপ্য কিছুই নাই
প নিষ্ঠুর খলও নিষ্ঠুর, কিন্তু
সাপের চেয়ে খল বেশি নিষ্ঠুর।
সাপকে মন্ত্র বা ওষধি দিয়ে
বশ করা যায়, কিন্তু
খলকে কে বশ করতে
পারে?
হাতি
থেকে একহাজার হাত দূরে, ঘোড়া
থেকে একশ হাত দূরে,
শৃঙ্গধারী প্রাণী থেকে দশহাত দূরে
থাকবে। অনুরূপ দুর্জনের কাছ থেকেও যথাসম্ভব
দূরে থাকবে।
সত্যবাক্য
দুর্লভ, হিতকারী-পুত্র দুর্লভ, সমমনস্কা-পত্নী দুর্লভ, প্রিয়স্বজনও তেমনি দুর্লভ
রাতের
ভূষণ চাঁদ, নারীর ভূষণ পতি, পৃথিবীর
ভূষণ রাজা, কিন্তু বিদ্যা সবার ভূষণ
যারা রূপযৌবনসম্পন্ন এবং উচ্চকুলজাত হয়েও বিদ্যাহীন, তাঁরা সুবাসহীন পলাশ ফুলের মত বেমানান।
বিদ্যার
চেয়ে বন্ধু নাই, ব্যাধির চেয়ে
শত্রু নাই। সন্তানের চেয়ে
স্নেহপাত্র নাই, দৈবের চেয়ে
শ্রেষ্ঠ বল নাই।
বিদ্যাবত্তা ও রাজপদ এ-দুটি কখনও সমান হয় না। রাজা কেবল নিজদেশেই সমাদৃত, বিদ্বান সর্বত্র সমাদৃত।
বিদ্বান সকল গুণের আধার, অজ্ঞ সকল দোষের আকর। তাই হাজার মূর্খের চেয়ে একজন বিদ্বান অনেক কাম্য।
পুত্র যদি হয় গুণবান, পিতামাতার কাছে তা স্বর্গ সমান
পাঁচ
বছর বয়স অবধি পুত্রদের
লালন করবে, দশ বছর অবধি
তাদের চালনা করবে, ষোল বছরে পড়লে
তাদের সঙ্গে বন্ধুর মত আচরণ করবে
দুষ্টা
স্ত্রী, প্রবঞ্চক বন্ধু, দুর্মুখ ভৃত্য এবং সর্প-গৃহে
বাস মৃত্যুর দ্বার, এ-বিষয়ে সংশয়
নেই
দারিদ্র্য,
রোগ, দুঃখ, বন্ধন এবং বিপদ- সব
কিছুই মানুষের নিজেরই অপরাধরূপ বৃক্ষের ফল
তিনটি
বিষয়ে সন্তোষ বিধেয়: নিজের পত্নীতে, ভোজনে এবং ধনে। কিন্তু
অধ্যয়ন, জপ, আর দান
এই তিন বিষয়ে যেন
কোনও সন্তোষ না থাকে।
অনেকে
চারটি বেদ এবং ধর্মশাস্ত্র
অধ্যয়ন করলেও আত্মাকে জানে না, হাতা
যেমন রন্ধন-রস জানে না
চানক্য নীতি মতে মানুষের এই ৪টি গো*প*ন ক্ষুধা কখনই মিটে না,
চানক্য ছিলেন একধারে উপমহাদেশের একজন নামকরা শিক্ষক। আজ
থেকে প্রায় তিনশত বছর আগে উনি তার শিক্ষা দান ও কর্মকাণ্ড চালিয়ে গেছেন এই ভূমিতে। চানক্যকে কৌটিল্য বা বিষ্ণুগুপ্ত নামেও
ডাকা হয়। চানক্য এমন কিছু কথা বলে গিয়েছেন যা আমাদের জীবনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। আজ আমি সেই চানক্যের কিছু বানি সম্পর্কে বলব জা আপনার জীবনকে সহজ করে তুলবে।চানক্য নীতি
অনুযায়ী কোথাও পা রাখার সময় সর্বদা ভালো করে দেখে নেওয়া উচিৎ।
এর ফলে আঘাত লাগা ও দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। যে
ব্যাক্তি ভেবেচিন্তে কথা বলেন তাকে পরে কখনও অনুসুচনা করতে হয় না। বরং এই ধরনের মানুষ জীবনে অনেক উন্নতি করেন।ভালোভাবে ভেবেচিন্তে
তবেই কোন কাজ করা উচিৎ। অর্থাৎ জিনি কাজের ফল কি হতে পারে তা আগেই ভেবে নিয়ে কাজ করেন তার উন্নতি নিশ্চিত। অধমেরা ধন চায়, মধ্যমেরা ধন ও মান চায়, আর উত্তমেরা শুধু মান চায়।
মানই মহতের ধন।যে আরালে কাজের বিঘ্ন ঘটায়, কিন্তু সামনে ভালো কথা বলে। অর্থাৎ
যে মানুষের মুখে মধু কিন্তু অন্তরে বিষ, তাকে পরিত্যাগ করাই মঙ্গল। উৎসবে, বিপদে, দুর্ভিক্ষে, শত্রুর সাথে সংগ্রাম কালে, রাজ দ্বারে এবং শ্মশানে যে সঙ্গে থাকে সেই প্রকৃত বন্ধু।চানক্যের মতে মানুষের এই চারটি ক্ষুধা কখনোই মেটে না।
সেগুল হল ধন-সম্পদ, জীবন, বাসনা আর স্ত্রী সঙ্গ। এই চারটি জিনিস মানুষ যত পায় ততই চায়। চানক্য বলে গিয়েছেন একশত মূর্খ পুত্রের চেয়ে একটি গুনি পুত্র অনেক ভালো। কারণ একটি চন্দ্রই রাতের অন্ধকার দূর করে।যার গৃহে মা নেই এবং যার স্ত্রী চরিত্রহীন, তার বনে যাওয়াই ভালো। কারণ তার কাছে বন আর গৃহের মধ্যে কোন তফাত নেই।
এই তিনটি বিষয়ে সর্বদা সন্তুষ্ট থাকা উচিৎ – নিজের স্ত্রিতে, ভোজনে এবং ধনে। কিন্তু
অধ্যায়ন, জব আর দান এই তিন বিষয়ে কখন যেন সন্তোষ না থাকে।দারিদ্র, রোগ,
দুঃখ এবং বিপদ এই সব কিছুই মানুষের অপরাধের ফল। দুর্বলের শক্তি রাজা, শিশুর শক্তি কান্না, মূর্খের শক্তি হচ্ছে নিরবতা এবং চোরের শক্তি হচ্ছে মিথ্যা কথা। যে পর স্ত্রীকে নিজের মায়ের মতন দেখে, অন্যের জিনিসকে যে মূল্যহীন মনে করে এবং সকল জীবকে যে নিজের মত মনে করে, সেই প্রকৃত জ্ঞ্যানি।
0 Comments
Thank you for your message, I see all your messages, it is not possible to reply many times due to busyness, I hope I will reply to everyone in time, thank you for being with me. Thanks you watching my content. Please like, Follow, Subscribe.