বাংলাদেশে নার্সিং সেবা: একটি পর্যালোচনা

 

WONDERSHARE FILMORA 7

সেবার ব্রত নিয়ে আজ ১২ মে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নার্সেস দিবস। বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত এ পেশা স্বাস্থ্যব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ। ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের যে আদর্শ নিয়ে একসময় নার্সিং পেশা শুরু হয়েছিল, আজ তা বিস্তৃত হয়ে স্বাস্থ্যসেবাব্যবস্থাকে সমৃদ্ধ করে তুলেছে। নার্সেস দিবসের এবারের প্রতিপাদ্যটিও বেশ সময়োপযোগী—‘নার্সেস: আ ভয়েস টু লিড-হেলথ ফর অল’।


১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান বিভক্তির মধ্য দিয়ে ‘বেঙ্গল নার্সিং কাউন্সিল’ থেকে ‘পূর্ব পাকিস্তান নার্সিং কাউন্সিল’ পৃথক হলেও একটি স্বতন্ত্র নার্সিং কাউন্সিল হিসেবে দাঁড়াতে ‘বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিল–কে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়। ১৯৮৩ সালে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ বলে বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিল তার পূর্ণাঙ্গ মর্যাদা ও ক্ষমতা ফিরে পায়। এর আগে কাউন্সিলের রেজিস্ট্রাররা ছিলেন খণ্ডকালীন। ১৯৮৩ সালের নভেম্বরে জোহরা খাতুন রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব গ্রহণের আগে বিএমডিসির রেজিস্ট্রাররা অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিলের রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালন করতেন। এই সময়ে বাংলাদেশে রেজিস্টার্ড নার্সের সংখ্যা ছিল মাত্র ৭০০। ২০১৬ সালে জাতীয় সংসদে বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল আইন পাসের মাধ্যমে বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিল অবলুপ্ত হয়ে বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলে পরিণত হয়।


বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ও বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিলের যৌথ উদ্যোগে থাইল্যান্ডের কারিগরি সহায়তায় নার্সিং ও মিডিওয়াইফারি শিক্ষাকে আধুনিকীকরণ করার লক্ষ্যে ২০০৮ সালে নতুন কারিকুলাম প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হয়। নতুন এই কারিকুলাম অনুযায়ী এসএসসির পরিবর্তে এইচএসসি–উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের তিন বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডিওয়াইফারি (সব বিভাগের জন্য উন্মুক্ত) এবং চার বছর মেয়াদি বিএসসি নার্সিং (শুধু বিজ্ঞান বিভাগে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের) কোর্স চালু করা হয়। প্রাথমিকভাবে ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসংলগ্ন চারটি নার্সিং ইনস্টিটিউটকে নার্সিং কলেজে উত্তীর্ণ করা হয় এবং একই সঙ্গে ডিপ্লোমা ও বিএসসি শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হয়।

পরবর্তী সময়ে ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি কোর্সও চালু হয়। প্রায় একই সঙ্গে কয়েকটি বেসরকারি নার্সিং কলেজ চালু করা হয়।

নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর

২০০৮ সালের প্রণীত কারিকুলাম স্টেক হোল্ডারস কর্তৃক অনুমোদিত হয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদিত এবং শিক্ষা কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। কারিকুলাম অনুযায়ী কোর্স দুটির বিশ্ব স্বীকৃত নাম ‘ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি’ এবং ‘ব্যাচেলর অব নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি’। ‘ব্যাচেলর অব নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি’ থেকে ‘মিডওয়াইফারি’ শব্দটি বাদ দিয়ে ‘ব্যাচেলর অব নার্সিং সায়েন্স’ রাখা হয়। পরে ‘ব্যাচেলর অব নার্সিং সায়েন্স’ নামেরও পরিবর্তন হয়ে ‘বিএসসি নার্সিং’ নামকরণ করা হয়। এখন শুনছি, নার্সিং কলেজ হিসেবে যেসব প্রতিষ্ঠানকে কাউন্সিল এবং সরকার অনুমোদন দিয়েছে, তা পূর্ণাঙ্গ কলেজ নয়, মেডিকেল কলেজের ‘নার্সিং ইউনিট’।

একসময় এ দেশের নার্সিং পেশায় অ্যাপ্রেনটিস নার্স ও নার্স অ্যাটেন্ডেন্টরা কাজ করতেন। তারপর ডিপ্লোমা নার্সরা তাঁদের স্থলাভিষিক্ত হন। ২০০৮ সালে আন্ডার গ্র্যাজুয়েট কোর্স চালু হওয়ার পর ডিপ্লোমা নার্সদের স্থলাভিষিক্ত হতে শুরু করেছে বিএসসি নার্সরা, যা স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে বিশেষজ্ঞদের বিশ্বাস। চিকিৎসা অনুষদে আনুপাতিক হারে নার্সিং প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করার অথবা পৃথক নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি অনুষদ প্রতিষ্ঠা করার সময় এখনই।


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরাকরের প্রথম মেয়াদে ১৯৯৮ সালে, নার্সিং অনুষদসহ অন্যান্য অনুষদ নিয়ে আইপিজিএমআরকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) অন্তর্ভুক্ত করা হয়। দীর্ঘ ১২ বছর পরে বিএসএমএমইউ নার্সিং অনুষদের কার্যক্রম শুরু করে। তাও পূর্ণাঙ্গ রূপে নয়, শুধু আন্ডার গ্র্যাজুয়েট কোর্স দিয়ে। নার্সিং অনুষদের প্রধানও একজন চিকিৎসক।


বাংলাদেশের নার্সিং শিক্ষা ও পেশার উন্নয়নে প্রথম দিকে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে। পরবর্তী সময়ে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপান ও কোরিয়া এগিয়ে এসেছে। কোরিয়ার কারিগরি ও আর্থিক সহায়তায় ২০১৬ সালে বিএসএমএমইউয়ের অধীনে ঢাকার মুগদায় নার্সিংয়ে উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণার জন্য ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্সড নার্সিং এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ’ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এখানে বর্তমানে ৬টি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদান করা হয়। এর মাধ্যমে নার্সিংয়ে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ অবারিত হলো। নার্সিং পেশা ও শিক্ষার উন্নয়নে প্রতিষ্ঠানটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করি।


সরকার নার্সদের দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদায় উন্নীত করার কারণে দেশের বিরাটসংখ্যক শিক্ষার্থী আজ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি পেশা গ্রহণে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। দেশে বর্তমানে রেজিস্টার্ড নার্স-মিডওয়াইফের সংখ্যা ৫৬ হাজার ৭৩৩। সরকারের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অধীনে নার্স প্রায় ৩০ হাজারজন; মিডওয়াইফ প্রায় ১ হাজার ৫০০ জন। সরকারি নার্সিং ও মিডওয়াইফারি ইনস্টিটিউটের সংখ্যা ৪৩, বেসরকারি ১২০টি। সরকারি নার্সিং কলেজের সংখ্যা ১৭ এবং বেসরকারি ৬০টি। এতগুলো নার্সিং ইনস্টিটিউট এবং কলেজ থাকার পরও নার্সিং ও মিডওয়াইফারি শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের প্রবল প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে ভর্তি হতে হয়।


সর্বশেষ ভর্তি পরীক্ষায় ১৫ হাজার আসনের বিপরীতে ৫২ হাজার শিক্ষার্থী অংশ গ্রহণ করেন। স্বাধীনতার পরে মাত্র একটি সিনিয়র নার্সিং স্কুল এবং ৬০০ জন রেজিস্টার্ড নার্স নিয়ে আমরা যাত্রা শুরু করেছিলাম। সেখান থেকে আজকের দিন পর্যন্ত আমাদের যে অর্জন, তা যথেষ্ট না হলেও সন্তোষজনকই বলা যায়। আমাদের আরও অনেক দূর যেতে হবে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী এখনো আমাদের দেশে নার্স-মিডওয়াইফের সংখ্যা কম। মানের দিক থেকে আমাদের উন্নতি করার সুযোগ রয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব আমাদের নার্সিং পেশাকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী গড়ে তুলতে হবে।

Post a Comment

0 Comments

Update Posts

Checking the proxy and the firewall Running Windows Network Diagnostics ,unexpectedly closed the connection.This Site Can't Be Reached ERR_CONNECTION_REFUSED in Google chrome- Fixed easily
“স্বাস্থ্য বিধি মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবি এখন সার্বজনীন  ” দুলাল চন্দ্র চৌধুরী   প্রধান শিক্ষক ইস্কাটন গার্ডেন উচ্চ বিদ্যালয় ও সাংগঠনিক সম্পাদক
✅ Error 522 Utc Connection Timed Out - Fix Website Success
how to do not sending message gp number bd
About Us
Samorita Hospital Ltd. Location Phone Address শমরিতা হাসপাতাল
Blogger WhatsApp Group Links 2021 | Youtubers WhatsApp Group Links
The Top 22 Pay-Per-Click PPC Advertising Networks
১০টি বাংলাদেশের সেরা ক্যান্সার হাসপাতাল  10 best cancer hospitals in Ban...
ঢাকা টু কলকাতা বাস ভাড়া ও সময়সূচী ২০২৪ অনলাইনে বাস, ট্রেন ও এয়ার টিকিট কাটবেন যেভাবে গোপালগঞ্জ থেকে কলকাতা  কোন কোন পরিবহন যায়