ভারতের অন্যতম মহান মুক্তিযোদ্ধা #_বীর_সিপাহী_মঙ্গল_পাণ্ডে

 

ভারতের অন্যতম মহান মুক্তিযোদ্ধা তিরোট সিং

#_বীর_সিপাহী_মঙ্গল_পাণ্ডে

ভারতের বুকে স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম আলোকশিখা জ্বলে উঠেছিল কলকাতার ব্যারাকপুর উপকন্ঠে। এই ক্যান্টনমেন্ট ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেনাবাহিনীর অন্যতম প্রধান ঘাঁটি ছিল। এখন থেকেই বিদ্রোহের ধ্বজা আকাশের বুকে উড়েছিল। মঙ্গল পান্ডে নামের এক সামান্য সিপাহী তার হাতের বন্দুক থেকে নিক্ষেপ করেছিলেন বিদ্রোহের প্রথম গুলিটি। তিনিই প্রথম বারুদের স্তুপে ছুড়ে দিয়েছিলেন জ্বলন্ত মশাল। যদিও তার এই প্রয়াস সফল হয় নি। দেখতে দেখতে এই আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল উত্তর ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে। এই আন্দোলনে পরিকল্পনা নানা সাহেবেরও ছিল। তার পাশে দাড়িয়েছেন ঝাঁসির রানী লক্ষীবাঈ, তাতিয়া টোপি, আরো আছেন আজিমুল্লাহ আরো অনেকে। তবে নানা সাহেব আর আজি মুল্লাহ মিলে ধীরে ধীরে গোটা ভারতের সেনা ছাউনীগুলিতে বিদ্রোহ সংগঠিত করে তোলেন।
উত্তর প্রদেশের বলিয়া জেলার গোড়া এক ব্রাহ্মন পরিবারের সন্তান। উত্তর প্রদেশের ফৈজাবাদের আকবরপুর তহশীলে ১৮২৭ সালের ১৯ জুলাই মহাবিদ্রোহের অগ্নিশিখা মঙ্গল পান্ডে এর জন্ম হয়। তার পিতার নাম ছিল দিবাকর পান্ডে। কৃষকের বৃত্তি অবলম্বন করেছিলেন তার পিতা। দরিদ্রতার কশাঘাতে জর্জরিত হয়ে পান্ডে পরিবার কিশোর মঙ্গলকে ইংরেজদের সেনা ছাউনীতে পাঠিয়ে দিলেন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বেঙ্গল আর্মিতে যোগ দিলেন মঙ্গল, তিনি হলেন নেটিভ ইনফ্যানট্রি রেজিমেন্টের সিপাহী, কোম্পানি নং ৫, রেজিমেন্ট নং ৩৪ এবং তার নম্বর ১৪৪৬। তখনকার দিনে ৫৩ এনফিল্ড রাইফেলের টোটার সামনের অংশ দাঁত দিয়ে ছিড়ে বন্দুকে বারুদ ভরতে হত। মঙ্গল পান্ডে খবর পান গরু ও শুয়োরের চর্বি মেশানো আছে ওই টোটায়। সেই টোটা দাঁত দিয়ে ছিরতে বাধ্য হয় তারা।
জাতি ও ধর্ম নির্বিবেশে হিন্দু ও মুসলমানরা। ১৮৫৭ সালের ২৯ শে মার্চ সেনা ছাউনীতে সিপাহীরা তৈরি হচ্ছে আর একটি নতুন দিনের কাজ শুরু করার জন্য। মঙ্গল পান্ডে শেষ রাত্রে উঠে পুজো পাঠ শেষ করে ফেলেন। তার কপালে জ্বলজ্বল করছে রক্ত চন্দনের তিলক। চোখে মুখে দৃপ্ত অঙ্গীকার। কিসের? তা কেউ জানে না। সকালে কেউ কেউ মঙ্গল পান্ডে এর কাছে যান। তার পুজো, শাস্ত্র পাঠের সময় চুপ করে বসে থাকে। তার পর তাকে প্রণাম করে চলে যায়। সেদিন যারা মঙ্গল পান্ডের সাথে দেখা করতে গিয়েছিল তারা ফেরার পথে বলাবলি করছিল। ইংরেজ সামরিক বাহিনীর অফিসাররা আজ পান্ডেজিকে স্যটিং রেঞ্জে নিয়ে যাবে বাধ্য করবে তাকে গরুর চর্বি মেশানো টোটা ছিড়তে। বোধ হয় মঙ্গল পান্ডে কিছুতেই রাজি হবেন না।
মঙ্গল পান্ডে ক্ষিপ্ত প্রায় ছুটে এলেন মাঠে একহাতে বন্দুক ধরে চিৎকার করে বলে উঠলো, "ভাই সব আর চুপ করে বসে থেকো না। ভগবানের দোহাই তোমরা বেরিয়ে এসো। গুলি করে মেরে ফেলো ইংরেজ শয়তানদের। এসো মারো মারো।" সার্জেন্ট মেজর হিউসন সেখান দিয়ে যাচ্ছিলেন। এই দৃশ্য দেখে বাকি সিপাহীদের আদেশ দিলেন, গ্রেপ্তার করো ওকে----- অ্যারেস্ট হিম। হিউসন অবাক হয়ে দেখেন একজনও তার আদেশ পালন করলো না। তারা নির্বিকার, তারা হতবাক। কোন উপায় না দেখে হিউসন মঙ্গল পান্ডের দিকে ঘোড়া ছুটিয়ে চলছেন তার আগেই মঙ্গল পান্ডের বন্দুকটি গর্জে উঠল। বন্দুকের গুলিটা হিউসনের বুকে এসে লাগলো। সেখানেই ঘোড়া থেকে পরে গেলেন মেজর হিউসন। এই ঘটনা পৌঁছে গেলো লেফটেনেন্ট বাফের কানে। গুলিরও শব্দ শুনছেন। বাফের ঘোড়া ছুটিয়ে মঙ্গল পান্ডের দিকে যেতেই আরো একটি গুলি ছুড়লেন মঙ্গল পান্ডে। গুলিটা বাফের গায়ে না লেগে গুলিটা লাগলো ঘোড়ার পেটে। বাফের মাটিতে পড়ে গেল, তিনি লাফিয়ে উঠে মঙ্গল পান্ডেকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন, মঙ্গল পান্ডের মাথা ঘেঁষে গুলিটা বেরিয়ে গেলো।
মঙ্গল পান্ডের গুলি শেষ, কোমর থেকে তলোয়ার বের করে ছুটলেন বাফের দিকে। বাফ গুলি ছোড়ার আগেই মঙ্গল ঝাঁপিয়ে পড়ল বাফের ওপর। মঙ্গল পান্ডের তলোয়ারের আঘাতে বাফের মাথাটা নেমে গেলো গলা থেকে। মঙ্গল পান্ডের পিছনে আর এক ইংরেজ সিপাহী ছুটে আসেন, মঙ্গল যেই পিছনে ফিরবেন, মঙ্গলকে লক্ষ্য করে যেই বন্দুকটা হাতে তুলে নিল, কিন্তু গুলি ছোড়ার সময় পেলো না। তার আগেই আরো এক জন আমাদের দেশের সিপাহী তলোয়ার দিয়ে ওই ইংরেজটাকে ভবলীলা সাঙ্গ করে দিল। ততক্ষনে খবর পৌঁছে গেলো ইংরেজ সেনাদের ছাউনীগুলিতে, তারা আদেশ পেলেন মঙ্গল পান্ডেকে গ্রেপ্তার করতে হবে। ইংরেজ সেনারা ছুটে এসে মঙ্গল পান্ডেকে ঘিরে ফেলল। মঙ্গল পান্ডে বুঝতে পারলেন তিনি একা এতগুলি ইংরেজ সৈনিক লড়তে পারবেন না। তাই মঙ্গল পান্ডে ততক্ষনে বন্দুকে গুলি ভরে নিয়েছিল। বন্দুকের নল তার নিজের বুকে রেখে গুলি চালিয়ে দিলেন। তার দুর্ভাগ্য গুলিটা তার হৃদপিন্ডে না লেগে লাগলো অন্য দিকে। রক্তাত্ত মঙ্গল পান্ডে পড়ে গেলেন। কিন্তু মারা গেলেন না
মঙ্গল পান্ডে ধরা পড়েন ইংরেজদের হাতে। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে ইতিহাসে প্রথম বিপ্লবী তো তিনিই। ৬ ই এপ্রিল ১৮৫৭ সালে আদালতে মঙ্গল পান্ডের বিচার। সাক্ষী দিতে এলেন কর্ণেল হুইলার। এ কথা অস্বীকার করলেন না মঙ্গল পান্ডে যে তিনিই হিউসন ও বাফকে হত্যা করেছেন, তার কোন অনুশোচনা নেই। আদালতে মঙ্গল পান্ডে দোষী সাব্যস্ত হলেন, তার ফাঁসির হুকুম হলো। দেখতে দেখতে এসে গেলো নির্ধারিত দিন। ১৮৫৭ সালের ৮ ই এপ্রিল ভোর সাড়ে ৫ টায় ব্রিগেড প্যারেডে ফাঁসি দেওয়া হলো স্বাধীনতার সূর্য সন্তান মঙ্গল পান্ডেকে। মঙ্গল পান্ডের ঝুলন্ত শরীরটা অনেকক্ষণ রাখা হয়েছে খোলা আকাশের নীচে যাতে এই ভয়ানক দৃশ্য দেখে কোন সিপাহীরা বিদ্রোহী হবার সাহস না করে।
(তথ্যসূত্র সংগৃহীত)
লেখক::- প্রকাশ

Post a Comment

0 Comments

Update Posts

তালিবানি মুখোশ খুলে ঝাঁঝরা হয়েছিলেন সুস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায় লাভ জেহাদীর, মাধ্যমে ধর্মান্তরিত হয়ে নির্যাতিত হয়েছে ধর্ষিত হয়েছে মারা গেছে এরকম দশটি কাহিনী
স্মার্ট নাগরিক গঠনে গ্রন্থাগারের ভুমিকা রচনা ১০০০ শব্দ
CS, RS, SA, PS, BS জরিপ কি?ভূমি জরিপ বা খতিয়ান চেনার সহজ উপায় জেনে নিন ৫ মিনিটেই জমির আরএস খতিয়ান
Disclaimer
   অজিজন বাঈ  বীরাঙ্গনা #_বিস্মৃত_বীরাঙ্গনা_আজও_অজানা
Top 14 Best Paying CPC/PPC Ad Networks
100% Proof - How to Get Back Suspended YouTube Channel Bangla - 100% Solution
25 Places to Find Free Images Online That You Will Actually Want to Use
পজিটিভ রিভিউ লিখে গুগোল থেকে ইনকাম করুন | পেমেন্ট প্রুফ সহ ভিডিও | Earn money from submit review https://reviews.capterra.com/
Contract Us