'অচেনা উত্তম' লেখক ✍️ আশিষতরু মুখোপাধ্যায়

'অচেনা উত্তম'    লেখক ✍️ আশিষতরু মুখোপাধ্যায়


✍️ আশিষতরু মুখোপাধ্যায়
পাঁচের দশকে উত্তমকুমারের সঙ্গে যখন সন্ধ্যারানী, মঞ্জু দে, সুচিত্রা সেন, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, কাবেরী বসুরা অভিনয় করছেন তখন নায়িকা হয়ে এলেন সবিতা বসু।
তিনি তখন চট্টোপাধ্যায়। উত্তমকুমারের সঙ্গে সবিতা জোট বেঁধেছে 'সাঁঝের প্রদীপ', 'দেবত্র', 'একটি রাত', 'যাত্রা হল শুরু', 'তাসের ঘর', 'নবজন্ম' ইত্যাদি ছবিতে। 'পুত্রবধূ' আর 'পুনর্মিলন'-এ হন উত্তম- ভগ্নী।
এক সাক্ষাৎকারে লেখককে সবিতা বলেন , 'সাঁঝের প্রদীপ'-এ সুচিত্রাদি (সুচিত্রা সেন) আর আমি দুজনেই উত্তমদা নায়িকা। সুচিত্রাদি গ্রামের মেয়ে। আমি শহরের মেয়ে। বড়লোকের মেয়ের রোলে আমি অভিনয় করেছি। ছটফটে স্বভাবের ছিলাম বলেই শহুরে মেয়ের পার্টটি আমায় মানাত।
এ ছবির আউটডোর শুটিংয়ে একটা মজার ঘটনা ঘটেছিল। ছবিতে একটা দৃশ্য ছিল, ভানুদা (ভানু বন্দোপাধ্যায়) আমায় সাঁতার শেখাবেন বলে পুকুরে নামতে বললেন। আমি নামব। এদিকে ভানুদা আবার সাঁতার জানেন না।
উত্তমদা তখন জলে ঝাঁপ দিয়ে আমায় বাঁচাবেন।
এই দৃশ্যটা নেওয়ার আগে উত্তমদা আর ভানুদা নিজেদের মধ্যে চুপি চুপি কী যেন বলাবলি করে নিলেন। পরে আমায় উত্তমদা বললেন, তুই সাঁতার জানিস? বললাম না। বললেন, চল তোকে শিখিয়ে দিই।
সাঁতার শিখতে রাজি হওয়ায় তিনি আমায় মাঝ পুকুরে নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দিলেন। আমার তখন মরণাপন্ন অবস্থা। জল খেয়ে প্রায় অজ্ঞান।
উত্তমদা সাঁতরে এসে আমাকে বাঁচালেন।
শুশ্রূষা করলেন। মজা করতে গিয়ে এমন কাণ্ড হয়ে যাবে ভাবতে পারেননি উত্তমদা।
এজন্য বারবার আমার কাছে লজ্জা প্রকাশ করেছেন।
পরিচালক চিত্ত বসুর 'একটি রাত' -এর শুটিং করতে গিয়ে বেশ মজার কান্ড হয়েছে। হাসির ছবি। উত্তামদার বউ হয়েছিলাম। হঠাৎ- হঠাৎ স্বামীর উপর রেগে যাই। অভিমান করি।
একটা দৃশ্যে আমি রাগ করছি। আমায় বোঝাচ্ছেন উত্তমদা। দাম্পত্য কলহ গোছের ব্যাপারটা। বোঝাতে বোঝাতে হঠাৎ উত্তমদা আমার কোলে তুলে নিয়ে ঘরে ঢুকে গেলেন।
উত্তমদা এমনটা করবেন তা আগে জানা ছিল না।
আমি তো অবাক।
এমন স্বাভাবিক দৃশ্যের জন্য চিত্তদাও বাহবা দিলেন উত্তমদাকে। তিনিও জানতেন না উত্তমদা এটা নিজে থেকে করবেন। মাঝেমধ্যে এরকম মজা করতেন তিনি।
'একটি রাত' ছবিতেই খাবার নিয়ে খুব গণ্ডগোল হয়েছিল প্রযোজকের সঙ্গে। উত্তমদাও রেগে গিয়েছিলেন তাঁর ওপর। লাঞ্চের পর শুটিং শুরু হল।
সেদিন একটা দৃশ্য ছিল, আমি স্বামীর ওপর রেগে গিয়ে প্লেট আছড়ে ভেঙে ফেলব।
উত্তমদা দৃশ্যটা শুরু হওয়ার আগে আমায় বললেন, এই সুযোগ। তুই ইচ্ছে করে একটার পর একটা প্লেট ভেঙ্গে ফেল। যাতে ওদের আবার প্লেট কিনতে যেতে হয়।
দৃশ্যটা শুরু হতেই আমার ইশারায় প্লেট ছুঁড়ে ভাঙতে বললেন। আমিও রাগের ভান করে একটার পর একটা প্লেট তুলছি আর ভাঙছি আছাড় মেরে মেরে।
চিত্তদা প্রথমটায় কিছুই বুঝতে পারেননি।
তাই বলে উঠলেন, কী হল সবিতা,
এত এন জি(নটগুড) হচ্ছে কেন?
শেষে আমি হেসে ফেলতে চিত্তদা ধরে ফেললেন আমার প্লেট ভাঙার রহস্যটা কী। প্রযোজকের ওপর ভদ্রভাবে প্রতিবাদ করার জন্যে এটা করেছি। মোট দশটা প্লেট ভেঙ্গে শেষে ঠিক শট দিয়েছি।

Post a Comment

0 Comments