দিলদার : একজন মাস্টারপিস - বাংলা মুভি

দিলদার  একজন মাস্টারপিস - বাংলা মুভি



দিল+উদার = দিলদার। নামটি বলে দেয় উদার মনের অধিকারী ব্যক্তি এই দিলদার। ব্যক্তিজীবনে তা-ই ছিলেন পরিবার ও সহকর্মীরা বলে থাকেন। চলচ্চিত্রের পর্দায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী হাসির খোরাক দেয়ার সময়েও তার অভিনয়ে উদারতার রেশ থাকে কেননা মন খুলে অভিনয়টা করতেন। বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের অবধারিত গর্বিত অধ্যায় দিলদার। তাকে রেখে দেশীয় চলচ্চিত্রের সম্পূর্ণ ইতিহাস বলা কোনোভাবেই সম্ভব না। মূলনাম দিলদার হোসেন। চলচ্চিত্র নাম দিলদার। জন্ম ১৯৪৫ সালের ১৩ জানুয়ারি। 

দিলদার  একজন মাস্টারপিস - বাংলা মুভি
শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি। স্ত্রী রোকেয়া বেগম, দুই কন্যা মাসুমা ও জিনিয়া। ১৯৭৫ সালে চলচ্চিত্রে আসেন দিলদার। প্রথম ছবি ‘কেন এমন হয়।’ প্রায় পাঁচ শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন। এরকম আরো পড়ুন : স্বাধীনতার পাঁচ দশকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের উত্থান-পতন স্বাধীনতার পাঁচ দশকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের উত্থান-পতন জনগণ নন্দিতা বিউটি কুইন শাবানা জনগণ নন্দিতা বিউটি কুইন শাবানা উর্দু সিনেমায় বাঙালিদের অবদান যেভাবে ভুলে গেছে পাকিস্তান উর্দু সিনেমায় বাঙালিদের অবদান যেভাবে ভুলে গেছে পাকিস্তান ঈদুল আজহার প্রথম তিনদিনে টিভিতে যে সব সিনেমা ঈদুল আজহার প্রথম তিনদিনে টিভিতে যে সব সিনেমা উল্লেখযোগ্য ছবি : আব্দুল্লাহ, মহানায়ক, দস্যু বনহুর, শাহজাদা, অস্বীকার, নাগ নাগিনী, গাঁয়ের ছেলে, অংশীদার, টক্কর, নাগ পূর্ণিমা, নবাবজাদী, সোনার তরী, জনতা এক্সপ্রেস, সুখের সংসার, বিদ্রোহী, ওগো বিদেশিনী, লড়াকু, পিতা মাতা সন্তান, বেদের মেয়ে জোসনা, তুমি কি সেই, আনন্দ অশ্রু, জীবন সংসার, স্বপ্নের নায়ক, স্বপ্নের পৃথিবী, চাওয়া থেকে পাওয়া, এই ঘর এই সংসার, বিচার হবে, অন্তরে অন্তরে, আশা ভালোবাসা, শুধু তুমি, বীরপুরুষ, শেষ সংগ্রাম, দুর্জয়, নিষ্ঠুর, অজান্তে, জীবন সংসার, গরিবের রাণী, নাচনেওয়ালী, তুমি শুধু আমার, ভয়ঙ্কর বিষু, তেজী, ধর, লাল বাদশা, মেজর সাহেব, শান্ত কেন মাস্তান, চেয়ারম্যান, রাজা, মনে পড়ে তোমাকে, মগের মুল্লুক, মৃত্যুর মুখে, কুলি, বালিকা হলো বধূ, দাঙ্গা, ধনী গরিব, আশা নিরাশা, ক্ষতি পূরণ, বিদ্রোহী বধূ, ক্রিমিনাল, লঙ্কাকাণ্ড, মানুষ, আমার অন্তরে তুমি, প্রাণের চেয়ে প্রিয়, ভালোবাসি তোমাকে, পৃথিবী তোমার আমার, নয়নের নয়ন, মহা সম্মেলন, প্রেমের সমাধি, মহা সংগ্রাম, অবদান, আমাদের সন্তান, কাজের মেয়ে, মিনিস্টার, রাজা বাংলাদেশী, মাতৃভূমি, ডন, হিরো, ভিলেন, লুটতরাজ, বীর সৈনিক, ভণ্ড প্রেমিক, চাকরানী, আমার প্রতিজ্ঞা, প্রেমযুদ্ধ, দোলা, তুমি সুন্দর, বিজলী তুফান, গরীবের বন্ধু, রাস্তার রাজা, বিশ বছর পর, দাগী সন্তান, ইজ্জতের লড়াই, কঠিন বাস্তব, বাংলার কমান্ডো, সম্মান, সৎ মানুষ,

 শঙ্খমালা, আজ গায়ে হলুদ, সাধনা, গণধোলাই, অতিক্রম, রক্ত নিশান, লম্পট, শক্তির লড়াই, আর্তনাদ, ফাঁসির আসামী, মুক্তি চাই, পরাধীন, স্নেহের বাঁধন, অকর্মা, দেশ দরদী, বেনাম বাদশা, আলো আমার আলো, প্রিয় তুমি, প্রতিশ্রুতি, তুমি শুধু তুমি, রঙিন উজান ভাটি, মধুর মিলন, আমি এক অমানুষ, দেশের মাটি, ঘাটের মাঝি, জোর, আপন ঘর, আজকের সন্ত্রাসী, অন্ধ প্রেম, কালো চশমা, হারানো প্রেম, জল্লাদ, ত্যাগ, নরপিশাচ, ঘাত প্রতিঘাত, বাজিগর, ক্ষমা নেই ও গলায় গলায় পিরিত। দিলদারের মতো রেকর্ড দেশীয় চলচ্চিত্রে আর কারো নেই। ‘মহানায়ক’-এর বুলবুল আহমেদ থেকে শুরু করে শাকিব খান পর্যন্ত তার ছবির ব্যাপ্তি। দীর্ঘ সময় ধরে দেশীয় ছবিকে দু’হাত খুলে দিয়ে গেছেন এ কিংবদন্তি অভিনেতা।

কমেডি রোলে হাসির বাক্স খুলে বসা ছবির অভাব নেই দিলদারের। অনেক ছবির ভিড়ে কয়েকটি ছবির স্মৃতিচারণা করা যাক :

স্বপ্নের পৃথিবী : এ ছবিতে দম ফাটানো সব হাসির কারবার করেছেন দিলদার। নাসরিনের বাড়িতে বেশ পাল্টিয়ে লজিং মাস্টার থাকতে যায়। নাসরিনের বাবা সাইফুদ্দিন তাকে জব্দ করার তালে থাকে। একদিন হাতেনাতে ধরা পড়ার উপক্রম হয়। তখন দিলদার যান গোয়ালঘরে। সেখানে হাঁসমুরগির কামড়ের চোটে অবস্থা খারাপ। তারপর গরুর সাথে বসে থাকে আর অমনি গরু প্রসাব করে দেয় মাথায়। দিলদারের সংলাপ তখন— ‘বৃষ্টি আসার আর টাইম পাইল না।’

গরিবের রাণী : এ ছবিতেও নাসরিনের সাথে প্রেম থাকে দিলদারের। নাসরিনের বাবা সুজা খন্দকার একদিন অসময়ে বাড়ি চলে আসলে দিলদারকে ট্রাঙ্কের মধ্যে লুকিয়ে রাখে। সুজা খন্দকার ঘর পুড়িয়ে ফেলার জন্য ট্রাঙ্কটা বাইরে নিয়ে আসে আর ভাবে দিলদার ঘরেই আছে। ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়। ঘর যখন পুড়ছে বাইরে থেকে আনন্দ করতে থাকে সুজা খন্দকার। দিলদার ততক্ষণে ট্রাঙ্ক থেকে বেরিয়ে নাচতে থাকে সুজা খন্দকারের সাথে। হঠাৎ দিলদারকে দেখে তার চক্ষু চড়ক গাছ।

কুলি : এ ছবিতে হুমায়ুন ফরীদির সঙ্গে দিলদারের অসাধারণ কমেডি ছিল। পপির পাত্র দেখানোর জন্য ওমর সানীকে আনা হয় ফরীদির বাড়িতে। সানী, পপি যখন দুজন দুজনের দিকে অপলক তাকিয়ে আছে ফরীদি ও দিলদারের কমেডি অঙ্গভঙ্গি তখন অসাধারণ। এছাড়া আরেকটি সিকোয়েন্সে দিলদার একটা বিশাল বিল্ডিং-এর তলা গুণতে গুণতে দাঁড়ানো থেকে মাটিতে শুয়ে পড়ে।

মধুর মিলন : এ ছবিতে রাস্তা হারানোর বাতিক থাকে দিলদারের। রাস্তা চেনার বুদ্ধিটা পায় কুকুরের প্রসাব করা দেখে। তার মাথায় বুদ্ধি আসে। নিজেও প্রসাব করে রাখে রাস্তা মনে রাখার জন্য। যদিও কিছুটা উদ্ভট চিন্তা কিন্তু কমেডি ছিল।

শেষ সংগ্রাম : এ ছবিতে চম্পার প্রতিশোধের মিশনে সাহায্য করে দিলদার। হাসপাতালে অপরাধী ভর্তি থাকলে তাকে হত্যার জন্য পরিকল্পনা করা হয়। চম্পা দিলদারকে পাগল সাজিয়ে হুইল চেয়ারে করে হাসপাতালে আনে। গুরুত্বপূর্ণ একটি ফাইলের কাগজ নিয়ে তখন যাচ্ছিল ডাক্তার। কাগজ কেড়ে নিয়ে দিলদার বলতে থাকে-‘আমি সব খামু, কাগজও খামু।’ মুখে কাগজ ঢুকিয়ে পালাতে থাকে। দারুণ ছিল।

আরো কিছু ছবিতে কুকুর, বানরের সাথে তর্ক করে দিলদার। অসম্ভব মজার ছিল।

দিলদারকে নায়ক করে ১৯৯৭ সালে তোজাম্মেল হক বকুল নির্মাণ করেন ‘আব্দুল্লাহ’, নায়িকা ছিল নূতন। এ ছবিতে বাড়ির চাকরের ভূমিকায় থাকেন দিলদার। নূতনকে ভালোবাসে কিন্তু বলতে পারে না। একসময় দিলদারের সততা, বিশ্বস্ততা ও দায়িত্ববোধ দেখে নূতনও তাকে ভালোবেসে ফেলে। এ ছবির স্যাড ভার্সনের গানটি তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। সুবীর নন্দীর কণ্ঠে দিলদারের লিপে গানটি ছিল –

‘সারা দুনিয়া হবে দুশমন
আমি হবো দোষী
কী করে বলব তোমায়
আমি ভালোবাসি’

‘আব্দুল্লাহ’ ১৯৯৭ সালে অন্যতম সেরা ব্যবসাসফল ছবি ছিল। কমেডিয়ানের হিরোইজম দর্শক যে লুফে নিয়েছিল ছবির ফলাফল তাই প্রমাণ করে। এর পাশাপাশি সহ-নায়কের ভূমিকায় ছিলেন কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘যন্ত্রণা’ ছবিতে। মান্না ও আরো দুজন নায়কের সাথে দিলদারও একজন ছিল। বেকারত্বের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়তে গিয়ে দেশদ্রোহী হয়ে যায় তারা। শেষে ফাঁসির আদেশ হয়।

নেগেটিভ রোলে দিলদার কাজ করেছেন ‘এই ঘর এই সংসার’ ছবিতে। এ ছবিতে দুর্নীতিবাজ নাসির খানের দলের হয়ে কাজ করেন। ‘নিষ্ঠুর’ ছবিতে চলচ্চিত্র পরিচালকের ভূমিকায় দিলদারকে দেখা গিয়েছে।

দিলদারের নায়িকার সংখ্যা কম না। বিভিন্ন ছবিতে অনেকে ছিল। তবে সবচেয়ে বেশি ছবিতে ছিল নাসরিন। দিলদার-নাসরিন জুটি কমেডিতে ঢালিউডে অত্যন্ত জনপ্রিয়। মর্জিনাও বেশকিছু ছবিতে নায়িকা ছিল।


দিলদারের জনপ্রিয় গানগুলের মধ্যে কয়েকটি গান হচ্ছে—

কী করে বলব তোমায় আমি ভালোবাসি – আব্দুল্লাহ
যদি সুন্দর একখান বউ পাইতাম – স্বপ্নের ঠিকানা
সাদা দিলে কাদা লাগায় গেলি – দেশের মাটি
করমআলীর চানাচুর – মায়ের অধিকার
ঢাকা শহর বড় গ্যান্জাম – মহা সংগ্রাম
আমি কেঁদে মরি – চাকরানী
এবার বুঝি আমার বিয়ে হবে – পিতা মাতা সন্তান

দিলদারের লিপে মানাত শিল্পী মলয় চাকী-কে। অনেক গান আছে তার কণ্ঠে।

২০০৩ সাল দিলদারের জীবনে আনন্দ ও বেদনা নিয়ে আসে। আনন্দের ঘটনা হচ্ছে এ বছর ‘তুমি শুধু আমার’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। ঠিক এ বছরের ১৩ জুলাই ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। দিনটি করুণ ছিল তারকাদের জন্য। নায়িকা পপিকে ডুকরে কাঁদতে দেখা গিয়েছিল দিলদারের মৃত্যু মেনে নিতে না পেরে।

দিলদারের কাছের বন্ধু ছিলেন কমেডিয়ান আনিস। মৃত্যুর পর আনিস খোঁজখবর রাখত তার পরিবারের। নায়ক মান্নাও খোঁজ নিত। পরিবারের ক্ষোভ আছে চলচ্চিত্র পরিবার থেকে সেভাবে তাদের জন্য কিছু করা হয়নি সেজন্য।

দিলদার একটি নাম নয় শুধু একটি প্রতিষ্ঠান। একজন মাস্টারপিস আর্টিস্ট। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে কমেডিয়ান হিশাবে তিনি তো আদর্শ এবং এর বাইরেও একজন অভিনেতা হিশাবে অনুসরণীয় আগামী দিনের তারকাদের জন্য। তার নামটি দর্শকভক্তদের মাঝে অমর হয়ে থাকবে। আবারও বলতে হয়, দিলদার ছাড়া দেশীয় চলচ্চিত্রের সার্বিক ইতিহাস লেখা অসম্ভব।

Post a Comment

0 Comments

Update Posts

স্মার্ট নাগরিক গঠনে গ্রন্থাগারের ভুমিকা রচনা ১০০০ শব্দ
তালিবানি মুখোশ খুলে ঝাঁঝরা হয়েছিলেন সুস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায় লাভ জেহাদীর, মাধ্যমে ধর্মান্তরিত হয়ে নির্যাতিত হয়েছে ধর্ষিত হয়েছে মারা গেছে এরকম দশটি কাহিনী
Disclaimer
১০টি বাংলাদেশের সেরা ক্যান্সার হাসপাতাল  10 best cancer hospitals in Ban...
১০ বছরে মাধ্যমিক, ১৬-তে ইঞ্জিনিয়ার, ক্যাটও পাশ করে ফেলল এই কিশোরী!
Top 14 Best Paying CPC/PPC Ad Networks
100% Proof - How to Get Back Suspended YouTube Channel Bangla - 100% Solution
Keyboard shortcuts for Windows
ইবনে সিনা হাসপাতালের ডাক্তার লিস্ট | Ibn Sina Hospital Dhanmondi Doctor ...
Goutom buddho biography গৌতম বুদ্ধের জীবনী গৌতম বুদ্ধের জীবনের বিস্ময়কর অজানা তথ্য  ইতিহাস জেনে নিন