সেনাপতি টিকেন্দ্রজিৎ সিং

সেনাপতি টিকেন্দ্রজিৎ সিং

জন্ম:- ২৯ ডিসেম্বর ১৮৫৬ - মৃত্যু:- ১৩ আগস্ট ১৮৯১

                 টিকেন্দ্রজিৎ সিং এর জন্ম হয় ২৯ ডিসেম্বর ১৮৫৬ সালে মণিপুরের ইম্ফলে। রাজা চন্দ্রকীর্তি সিংয়ের চার পুত্রের মধ্যে ইনি একজন। টিকেন্দ্রজিৎ সিং  হিন্দি ভাষা ছাড়াও অন্যান্য ভাষায় সুশিক্ষিত ছিল। তিনি বীর টিকেন্দ্রজিৎ তথা কৈরেং বলে পরিচিত। তিনি মণিপুরী সেনাবাহিনীর কমান্ডার ছিলেন। তিনি ১৮৯১ সালের মণিপুর 'মহল-বিপ্লব'-এর হাল ধরেছিলেন। এই বিপ্লবের পরিণতিতে ব্রিটিশ আর মণিপুরীদের মাঝে যুদ্ধের সূচনা হয়।

                 ২০ শে মে ১৮৮৬ সালে রাজার মৃত্যু হলে তার পুত্র সুরচন্দ্র সিংহ তার উত্তরাধিকার গ্রহণ করেন। টিকেন্দ্রজিৎ সিংকে সেনাপতি নিযুক্ত করা হয়। এই পরিবারে একটি বিবাদের জন্য টিকেন্দ্রজিৎ সিংকে রাজা বানানো হয়। পরে তিনি ইংরেজদের মণিপুরে প্রবেশের জন্য ইংরেজদের বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপ করেন। ২৪ শে মার্চ ১৮৯১ সালে ইংরেজ সেনাবাহিনী রাজার মহলে আক্রমন করেন, যার ফলে অনেক নির্দোষ জনগনের হত্যা করেন ইংরেজ সেনারা। এই হত্যাকাণ্ডের বদলা নিতে মণিপুরের নাগরিকরা ৫ জন ইংরেজ অফিসারকে হত্যা করেন।

                 ১৮৯১ সালের ৩১ মার্চ তারিখে ইংরেজরা মণিপুরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে দেন। ব্রিটিশ সরকার মেজর জেনেরেল এইসের তত্বাবধানে কোহিমা থেকে এবং কর্ণেল আর. এস. এফের তত্বাবধানে শিলচর থেকে তথা ব্রিগেডিয়ারের তত্বাবধানে তমুর থেকে সৈন্যবাহিনীর তিনটি দল মণিপুরের বিরুদ্ধে প্রেরণ করেন। এই যুদ্ধে টিকেন্দ্রজিৎ মণিপুরী সৈন্যদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ১৮৯১ সালের ২৭ এপ্রিলের দিন ব্রিটিশ সৈন্য কংলা প্যালেস অধিগ্রহণ করতে সক্ষম হয়। অবশেষে ব্রিটিশ সৈন্য মণিপুরী সৈন্যদলকে পরাস্ত করেন।

                 টিকেন্দ্রজিৎ সিং কিন্তু ইংরেজদের আক্রমণের বিরুদ্ধে যে লড়াই করেছেন তা খুবই প্রসংশনীয় ছিল। ২৩ শে মে ১৮৯১ সালে টিকেন্দ্রজিৎ সিংকে বন্দি করা হয়, আর ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করার ও উইরোপিয়ান অফিসারকে হত্যা করার অপরাধে তাকে মৃত্যুদণ্ড এর সাজা শোনানো হয়। ১৩ আগস্ট ১৮৯১ সালে টিকেন্দ্রজিৎ সিংকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।

                 একই দিনে বিকেল পাঁচটায় টিকেন্দ্রজিৎ সিং এবং থাঙ্গাল জেনারেলকে ইম্ফলের ফেইদা-পাং (পোলো গ্রাউন্ড) এ প্রকাশ্যে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল । স্বাধীনতার পরে ইম্ফলের এই মাঠ যেখানে তাকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল তার নামকরণ করা হয়েছে বীর টিকেন্দ্রজিৎ পার্ক।

(তথ্যসূত্র সংগৃহীত)

প্রকাশ রায়

Post a Comment

0 Comments